E-Paper

কমেছে কন্যাশ্রীর বরাদ্দ, উদ্বেগ স্কুলছুটের বৃদ্ধি নিয়ে

জেলা প্রশাসনও মানছে, বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে প্রচার, মেয়েদের জন্য ওই সরকারি প্রকল্প সত্ত্বেও আটকানো যাচ্ছে না নাবালিকাদের বিয়ে ও কিশোরী মাতৃত্ব।

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কন্যাশ্রী রাজ্য সরকারের স্বপ্নের প্রকল্প। কিন্তু চলতি বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ কমেছে। প্রশ্ন উঠেছে যে প্রকল্পের জন্য মেয়েদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছিল, কিছুটা আটকানো যাচ্ছিল বাল্যবিবাহ, ‘খয়রাতি’-র রাজনীতি করতে গিয়ে সেই কন্যাশ্রীকেই পিছনে ফেলা হল কিনা।

অর্থ দফতরের হিসেব বলছে, আগামী অর্থবর্ষে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য ১৩৭৪.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এর পরিমাণ ছিল ১৫৫০.১৩ কোটি টাকা। বীরভূমের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের আশঙ্কা, প্রকল্পে বরাদ্দ কমায় উদ্দেশ্য কিছুটা ধাক্কা খেতে পারে। বাড়তে পারে নাবালিকা বিয়ের সংখ্যাও।

শুধু এই প্রকল্পে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা বাড়বে, এমনটা মনে করছেন না শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি বড় অংশ। তাঁদের মতে, বীরভূমের পরিস্থিতি তো এমনিতেই ভয়াবহ। অনেক স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব রয়েছে। তবে নাবালিকা বিয়ে রুখতে ওই ক্লাবের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এমন উদাহরণ হাতেগোনা। যেটুকু হয়েছে সেটিও অতিমারির আগে। কোভিডের পরে পরিস্থিতি বরং ক্রমাগত আরও খারাপের দিকেই এগিয়েছে।

তথ্যেও তার ইঙ্গিত। গত বছর ৩১ মার্চ চাইল্ড লাইনের অস্তিত্ব বিলোপে যাওয়ার পরে গত মে মাসে দায়িত্বে নিয়েছে নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীর তৈরি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দাবি, জুলাই মাস থেকে কাজ শুরু করে প্রশাসনের সহায়তায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৫টি নাবালিকার বিয়ে আটকানো গিয়েছে। তবে খবর না আসায় আটকানো যায়নি তার বহুগুণ।

জেলা প্রশাসনও মানছে, বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে প্রচার, মেয়েদের জন্য ওই সরকারি প্রকল্প সত্ত্বেও আটকানো যাচ্ছে না নাবালিকাদের বিয়ে ও কিশোরী মাতৃত্ব। শুধু বীরভূমে স্বাস্থ্য জেলায় বছরে প্রায় ১৭ হাজার শিশুর জন্ম হয়। তার মধ্যে অকাল মাতৃত্ব (কমবয়সে মা হওয়া) ২৭ শতাংশ। রাজ্যে যা শীর্ষে। পিছিয়ে নেই রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলাও। মাতৃমত্যুতেও এগিয়ে জেলা। শুক্রবার জেলা প্রশাসনে শিশু অধিকার নিয়ে একটি কর্মশালায় প্রসঙ্গটি তোলেন শিশু সুরক্ষা আধিকারিক ও বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ।

তবে কন্যাশ্রী ক্লাবগুলি সজাগ থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত বলে ধারণা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, কন্যাশ্রী প্রকল্প (কে-১) পেয়েছে জেলার ৯৪৯৬৮ জন ছাত্রী, কে-২ পেয়েছেন ১৮৪৩৭ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে আড়ালে মানছেন, কন্যাশ্রী ক্লাব গঠন, নানা কর্মসূচি পালন বাল্যবিবাহ আটকাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়নি। আসলে কমবয়সি মেয়েদের বাল্যবিবাহের কুপ্রভাব নিয়ে সচেতনই করা যাচ্ছে না।

জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের মতে, একথা সত্যি যে, কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য মেয়েদের স্কুলে আসার প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। প্রতি বছর মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সেটাই প্রমাণ করে। তাঁরা জানান, একটি ছাত্রী কন্যাশ্রী তখনই পেতে পারে যদি সে নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকে। এ ছাড়া ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত থাকলে তবেই কে-২ প্রকল্পের এককালীন ২৫ হাজার টাকা পেতে পারে সে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না। নিয়মের ফাঁক গলে বিয়ের পরেও কন্যাশ্রীর টাকা পাচ্ছে অনেক ছাত্রী বলেও আড়ালে মানছেন তাঁরা।

কী ভাবে এই টাকা পেয়ে যাচ্ছে বিবাহিত ছাত্রী?

জানা গিয়েছে, একজন ছাত্রী ১৮ বছর পর্যন্ত অবিবাহিত এই মর্মে শংসাপত্র প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিয়ের পরেও কোনও ভাবে অনেকেই সেই শংসাপত্র জোগাড় করে ফেলে। স্কুলের কিছু করার থাকে না। ইদানীং এই প্রবণতা আটকাতে কে-২ পেতে ব্লকে উপস্থিত হতে হয় ছাত্রীকে। কিন্তু পরিবারের প্রশ্রয়ে স্বামীকে আত্মীয় সাজিয়ে দিব্যি কাজ চলে যাচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Budget 2024-25 kanyasree

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy