Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
elephant attack

হাতির দল দাপালেও কমেছে ক্ষতি, দাবি বন দফতরের

এ বছরের শুরু থেকেই জেলায় বারে বারে হাতির দলের দাপাদাপি দেখা গিয়েছে। জানুয়ারিতে ৮৮টি হাতির একটি দল বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের জঙ্গলে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালিয়েছিল।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২০
Share: Save:

জেলার উত্তর বনবিভাগের জঙ্গল জুড়ে দাপাচ্ছে প্রায় ৭০টি হাতি। মাঝেমধ্যে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে লাগোয়া চাষের জমির ঢুকে চলছে তাণ্ডবও। চাষিদের ক্ষোভের মুখে পড়ছে হচ্ছে বন দফতরকে। যদিও দফতরের দাবি, বিশাল সংখ্যায় হাতি জেলার জঙ্গলে থাকলেও ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা অনেকটাই রোখা গিয়েছে চলতি বছর। সুষ্ঠু পরিকল্পনাতেই তা সম্ভব হয়েছে।

এ বছরের শুরু থেকেই জেলায় বারে বারে হাতির দলের দাপাদাপি দেখা গিয়েছে। জানুয়ারিতে ৮৮টি হাতির একটি দল বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের জঙ্গলে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালিয়েছিল। সে সময়ে হাতির হানায় চার জনের মৃত্যুও হয় বলে জানান বন দফতর। তার পরে থেকে হাতিদের জঙ্গলের ভেতর আটকে রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয় দফতরের তরফে। বড়জোড়ার পাবয়ার জঙ্গলে তার দিয়ে ঘেরা বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০ বনকর্মী ও হুলাপার্টির একটি দলকে হাতিদের গতিবিধি নজরে রাখতে মোতায়েন করা হয়। ওই এলাকা দিয়ে নানা কলকারখানার শ্রমিকেরা নিত্য যাতায়াত করেন। তাঁদের সুরক্ষায় বনকর্মীরা রাস্তায় বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করেন। যে কোনও বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোতায়েন করা হয় বন দফতরের বিশেষ গাড়ি ‘ঐরাবত’কেও।

দফতর সূত্রে খবর, পাবয়ার মতো বড়জোড়ার সাহারজোড়া জঙ্গলেও বিশাল এলাকা তার দিয়ে ঘিরে হাতিদের সুরক্ষিত ভাবে রাখার জায়গা তৈরি হয়েছে। পাবয়ার তার ঘেরা জঙ্গলে অন্তত ৪০টি ও সাহারজোড়ার জঙ্গলে অন্তত ৬০টি হাতি রাখার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। তবে হাতির দল জঙ্গলে এসে নিয়মমতো ফিরে যাওয়ায় সাহারজোড়ার জঙ্গলের পরিকাঠামো এখনও ব্যবহার হয়নি।

সদ্য ২৫টি হাতির যে দলটি উত্তর বনবিভাগের জঙ্গলে ঢুকেছে, প্রয়োজনে তাদের সাহারজোড়ায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বনকর্তারা। হাতিরা যে জঙ্গলপথ দিয়ে জেলার উত্তর বনবিভাগের এলাকায় ঢোকে, সেখানেও তারের বেড়া ঘেরা এলাকা ধাপে ধাপে তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাত্রসায়র-সোনামুখী রুটের নানা জায়গা তার দিয়ে ঘেরা হয়েছে। আগামী বছরে এমন এলাকা আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে বন দফতর।

গত কয়েক দশক ধরে জেলায় হাতিদের তাণ্ডবে বারে বারে ক্ষতির মুখে পড়েছেন মানুষ। অসংখ্য মানুষের প্রাণও গিয়েছে। হাতির সমস্যা মেটানোর দাবিও উঠছে জোরালো ভাবে। এই পরিস্থিতিতে তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ও পরিকল্পনামতো হাতিদের উপরে নজরদারি বাড়িয়ে সমস্যা মেটানোর পথে এগোচ্ছে বন দফতরের। বনকর্তাদের একাংশের দাবি, গত কয়েকটি অর্থবর্ষের তুলনায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের গত ছ’মাসে হাতিদের হানায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কমেছে। জেলায় নিয়মিত হাতির দল থাকলেও প্রাণহানিও হয়নি।

ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) উমর ইমাম বলেন, “জঙ্গলে একটা বড় অংশ জুড়ে তারের বেড়া থাকায় হাতিরা গ্রামাঞ্চলে যাচ্ছে না। সেখানে নির্বিঘ্নেই থাকছে দলগুলি। নিয়মিত নজরদারি, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রচারেও আমরা জোর যাচ্ছি। তাতে ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানি অনেকটাই রোখা গিয়েছে। আগামী দিনে পরিকল্পনামতো হাতিগুলির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাতে সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে আশা।” ‘হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্য গঠিত সংগ্রামী গণমঞ্চ’-এর জেলা নেতা শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় তবে বলেন, “হাতি জঙ্গলের প্রাণী, জঙ্গলেই থাকুক। বাঁকুড়ার জঙ্গল হাতিদের থাকার উপযুক্ত নয়। তাই আমরা ময়ূরঝর্না প্রকল্প বাস্তবায়িত করে জেলায় হাতিদের ঢোকা রোখার ব্যবস্থার দাবি তুলছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant attack Forest department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE