ঘটনা হল, অন্ডাল-সাঁইথিয়া শাখায় থাকা সিউড়ি স্টেশনটি ব্রিটিশ আমলের। বেশ কয়েক বছর আগে ওই শাখায় ডবল লাইন ও বৈদ্যুতিকরণের কাজ শেষ হয়েছে। যেহেতু উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসানসোল হয়ে সিউড়ি স্টেশন ছুঁয়ে উত্তরবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেন যায়। তাই ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে মালগাড়ির সংখ্যা। তাতেই দুর্ভোগে পড়েছিলেন ওই রাস্তা ব্যবহারকারীরা। সকলেই চাইছিলেন উড়ালপুল হোক। সেই দাবি পূরণের প্রাথমিক পর্ব শুরু হয়েছে।
পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক রূপায়ন মিত্র বলছেন, ‘‘কাজে হাত পড়েছে। সয়েল টেস্ট হয়ে গিয়েছে। দখলদাররা সরে গেলেই কাজ আরও দ্রুত গতিতে শুরু হবে।’’ বুধবার প্রশাসন, পূর্ত দফতর ও রেল সিউড়িতে বৈঠক করবে।
রূপায়নবাবুর আশা, বছরে দেড়েকের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উড়ালপুল গড়ছে রেল। কিন্তু, রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে প্রশাসন ও পূর্ত দফতর দখলদারদের সরিয়ে জায়গাটি রেলকে হস্তান্তর করুক। কাজ শুরু হবে তারপরই। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর মহকুমা) কৌশিক সিংহ বলছেন, ‘‘উড়ালপুল এবং উড়ালপুল সংযোগকারী ক্রমশ ঢাল হয়ে নেমে আসা দু’দিকের রাস্তা তৈরিতে যে অংশটি প্রয়োজন, সেটা শুধু রেলের জায়গাই নয়। রয়েছে সরকারি জায়গাও। মোট ২৪টি প্লট খালি করতে হবে। রয়েছে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিও। সেই কাজই পূর্ত দফতর ও প্রশাসন করবে।’’
সিউড়ি পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশাসন ও পুরসভার পক্ষ থেকে গত ২২ তারিখে নোটিস দিয়ে দখলদারদের বলা হয়েছে পাঁচ তারিখের মধ্যেই যেন অন্যত্র সরে যান। না হলে উচ্ছেদ অভিযান চালাবে প্রশাসন। সোমবার ছিল নোটিসে উল্লেখিত শেষ দিন। সিউড়ির উপপুরপ্রধান বিদ্যাসাগর সাউ বলছেন, ‘‘মোট ৪০টি স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান ও রেলবস্তির বেশ কিছু পরিবারকে সরতে হচ্ছে।’’
কিন্তু, সরকারি ফরমান মানতে গিয়ে যথেষ্ট বেকায়দায় আশ্রয়হীন পরিবারগুলি। সোমবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, এত দিনের বসত ভেঙে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছেন। এরপর কোথায় কিছু ঠিক নেই। রহিমা বিবি, জুলি বিবি, নাজমা বিবি, মঞ্জিলা বিবিরা বলছেন, ‘‘মানছি রেলের জায়গায় বসবাস করছি। তাই সেতু হলে সরতেই হবে। কিন্তু, যে অংশ সেতুর জন্য প্রয়োজন নেই সেখান থেকেও সরতে বলছে রেল। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব কিছু ঠিক করতে পারছি না।’’ অন্য দিকে, রেলের জায়গা দখল করে কয়েক পুরুষ ধরে সেলুন চালানো অভিজিৎ ভাণ্ডারি কিংবা ২৫ বছর ধরে সাইকেল দোকান চালানো হারাধন মণ্ডলরা বলছেন, ‘‘সেতু হোক আমরা চাই। কিন্তু, আমাদের পরিবার কী ভাবে চলবে জানা নেই।’’
প্রশাসন ও রেলের বক্তব্য, রেল ও সরকারি জায়গা দখল করে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গেলে তো সেতুটাই হয় না!