Advertisement
E-Paper

হনুমান ঘুমোল, সাঁতুড়ি জুড়োল

বনদফতর রবিবার রাত ৭টা নাগাদ ঘুমপাড়ানি গুলি করে হনুমানটিকে। মিনিট খানেকের মধ্যেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে মূর্তিমান। খাঁচায় ভরে তাকে নিয়ে আসা হয় রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসে। রাতটা সেখানেই কাটিয়ে সোমবার সকালে হনুমানটি গিয়েছে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়ার মিনি জু-তে।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৬
বাগে: ধরা পড়ার পরে টানা উপদ্রব চালানো সেই মূর্তিমান। নিজস্ব চিত্র

বাগে: ধরা পড়ার পরে টানা উপদ্রব চালানো সেই মূর্তিমান। নিজস্ব চিত্র

ঘুমের ওষুধ পোরা ছিল ফলের ভিতরে। স্বাদ বোধহয় পছন্দ হয়নি। একটা কামড় দিয়েই ফেলে দিচ্ছিল। ফলে, সেই কৌশল জলে যায়। শেষমেশ ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হল সাঁতুড়ির কোটালডিতে উপদ্রব করা সেই হনুমান।

বনদফতর রবিবার রাত ৭টা নাগাদ ঘুমপাড়ানি গুলি করে হনুমানটিকে। মিনিট খানেকের মধ্যেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে মূর্তিমান। খাঁচায় ভরে তাকে নিয়ে আসা হয় রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসে। রাতটা সেখানেই কাটিয়ে সোমবার সকালে হনুমানটি গিয়েছে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়ার মিনি জু-তে।

গত দু’-তিন দিন ধরে সাঁতুড়ি ব্লকের কোটালডি গ্রামে এক প্রকার ‘সন্ত্রাস’ শুরু করেছিল ওই পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হনুমানটি। আঁচড়ে-কামড়ে জখম করেছিল গ্রামের পাঁচ জনকে। তাদের মধ্যে সন্তোষ বাউড়ি নামে এক জনকে ভর্তি করাতে হয় রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। কামড়ে সন্তোষবাবুর পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে দিয়েছিল হনুমান।

খবর পেয়ে শনিবার গ্রামে যান বনদফতরের কর্মীরা। কিন্তু হনুমানের দেখা তখন মেলেনি। রবিবার ফের গ্রামে উপদ্রব শুরু হয়। হনুমান কামড়ে দেয় দু’জনকে। সকালে খবর পেয়েই কর্মীদের নিয়ে গ্রামে যান রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসার বিবেক ওঝা, রঘুনাথপুরের বিট অফিসার শুভেন্দু বিশ্বাস ও সাঁতুড়ির বিট অফিসার মনোজিৎ শেট। দিনভর হনুমানের পিছনে ছোটার পরে রাতের তাকে কাবু করা সম্ভব হয়।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মীদের দেখেই হনুমানটি উঠেছিল বাড়ির ছাদে। এক বাড়ির ছাদ থেকে অন্য ছাদে দিনভর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। নীচে তখন জাল নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন বনকর্মীরা। কিন্তু হনুমান নীচে নামলে তবেই না জাল দিয়ে ধরার কথা ওঠে! তখন কলা আর আলু জোগাড় করে তার মধ্যে ঘুমের ওষুধ দিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু জল ঢেলে দেয় হনুমান। বিবেকবাবু বলেন, ‘‘বিজাতীয় গন্ধ পেয়েই একটু খেয়ে ফল ফেলে দিয়েছিল।’’

এ দিকে, হনুমানটিকে ধরার জন্য গ্রামবাসীর দাবি ক্রমশই জোরালো হচ্ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ঘুমপাড়ানি গুলি করার কথা ভাবা হয়। কিন্তু তার জন্য মুখ্য বনপালের অনুমতি লাগে। রঘুনাথপুর রেঞ্জ থেকে অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় ডিএফও (কংসাবতী উত্তর) অমৃতা দত্তকে। তিনি মুখ্য বনপালের থেকে অনুমতি নিয়ে ঘুমপাড়ানি গুলি ব্যবহার করার নির্দেশ দেন।

তার পরেই কিনাইডি গ্রামে একটি বাড়ির ছাদে থাকা হনুমানের দিকে বন্দুক থেকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়েন রঘুনাথপুরের বিট অফিসার শুভেন্দু বিশ্বাস। মিনিট খানেকের মধ্যেই বেঁহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে হনুমান। রঘুনাথপুরের রেঞ্জ আধিকারিক বিবেক ওঝা বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে অনুমতি পাওয়ার পরেই ঘুমপাড়ানি গুলি করে হনুমানটিকে কাবু করা হয়েছে।”

হঠাৎ করে কেন উপদ্রব শুরু করেছিল হনুমানটি, সেই ব্যাপারে কিছুটা ধন্দে স্থানীয় বাসিন্দারা। বনদফতরের দাবি, হনুমান সাধারণত দল বেঁধে থাকে। দলপতি থাকে একটি পুরুষ হনুমান। দলে অন্য পুরুষ হনুমান থাকলে দলপতির সঙ্গে তার লড়াই লাগে। একজন হেরে গিয়ে দল থেকে বিতাড়িত হয়। বিবেকবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা ওই পুরুষ হনুমানটি দল থেকে বিতাড়িত হয়েই হিংস্র হয়ে পড়েছিল।’’ তিনি জানিয়েছেন, আপাতত সুরুলিয়ার মিনি জুতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে হনুমানটিকে। পরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।

Monkey Forest Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy