Advertisement
E-Paper

ছক কষেই তৃণমূল নেতাকে খুন, দাবি পুলিশের

খুনিরা রীতিমতো পরিকল্পনা করেই নির্জন জায়গার ওই রেলগেটটিকে বেছে ছিল বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৭
নজরে: আদ্রার মিছিরডি গ্রামের কাছে রেলগেটে পড়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া যুব তৃণমূল নেতা হামিদ আনসারির দেহ।

নজরে: আদ্রার মিছিরডি গ্রামের কাছে রেলগেটে পড়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া যুব তৃণমূল নেতা হামিদ আনসারির দেহ।

ঘণ্টাখানেক পরেই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। তার আগেই পরপর গুলির শব্দে চমকে উঠেছিলেন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের শাঁকা পঞ্চায়েতের মিছিরডি রেলগেট লাগোয়া এলাকার মানুষজন। তবে, কি বোর্ড গঠনে গোলমাল হয়েছে? কিছু পরেই তাঁরা খবর পান, গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে কাশীপুর ব্লক যুব তৃণমূল সম্পাদক সাধারণ আদ্রার পলাশকোলার বাসিন্দা হামিদ আনসারি (৪২)।

শুক্রবারের এই ঘটনায় স্বম্ভিত অনেকে। কারা, কেন তাঁকে খুন করল, এই প্রশ্নই এ দিন ঘুরপাক খেল আদ্রায়। তবে, খুনিরা রীতিমতো পরিকল্পনা করেই নির্জন জায়গার ওই রেলগেটটিকে বেছে ছিল বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। যদিও নিহতের ঘনিষ্ঠেরা জানাচ্ছেন, এমনটা যে হতে পারে, তার আঁচ সম্ভবত হামিদ পাননি। কারণ চাপা স্বভাবের হলেও হামিদ এমন আশঙ্কার কথা তাঁদের কোনও দিন জানাননি।

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকেই আঙুল তুলছেন। তৃণমূলের কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার অভিযোগ, ‘‘বিজেপির নেতারা জেলায় এসে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। তারপর থেকেই জেলায় আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। আমাদের কোন সন্দেহ নেই, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই আমাদের যুব নেতাকে খুনের ঘটনায় জড়িত।” তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘তৃণমূল সর্বত্রই বিজেপির ‘ভূত’ দেখছে। যা কিছুই ঘটুক না কেন, আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক রং দেওয়া চেষ্টা করছে।” আদ্রায় যুব তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে বিবাদ আছে বলে পাল্টা দাবি করেছেন বিদ্যাসাগরবাবু।

বোর্ড গঠনকে ঘিরে বৃহস্পতিবারই রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডিতে এক তৃণমূল নেতার উপরে হামলা হয়। অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পরের দিন পাশের আদ্রায় এক তৃণমূল নেতা খুন হয়ে গেলেন। এর জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। আততায়ীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে আদ্রা থানার সামনে কিছুক্ষণ অবরোধ করেন তাঁরা।

হামিদের বাড়িতে রয়েছে বছর সাতেকের ছেলে, স্ত্রী ও অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়ি। সকালে হামিদের মৃত্যুর খবর তাঁদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। সে কারণে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে, পরিজনেরা জানিয়েছেন, রোজকার মতোই হামিদ সকালে ছেলেকে আদ্রার স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আদ্রার ডাকঘরের কাছে চা খেয়ে আড্ডা দিয়েছেন। বাড়ি ফিরে সাড়ে ন’টা নাগাদ মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যান। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, রঘুনাথপুরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরছিলেন হামিদ। ফেরার পথেই খুন হয়ে যান।

কী কারণে খুন?

শুক্রবার রাত পর্যন্ত সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। তদন্তে নেমে বেশ কয়েকটি বিষয় ভাবাচ্ছে পুলিশকে। প্রথমত, হামিদ রেলের ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত। বছরখানেক আগে পর্যন্ত আদ্রায় ঠিকাদারি নিয়ে গোলমালের জেরে বেশ কয়েকজন খুন হয়ে যান। এখানেও কি সেই ঠিকাদারি বিবাদ ছায়া ফেলছে? দ্বিতীয়ত, আদ্রায় একটি খুনের ঘটনার নাম জড়িয়েছিল হামিদের। পরে তদন্তে তাঁর নাম বাদ যায়। তৃতীয়ত, হামিদ সংখ্যালঘুদের একটি সংগঠন গড়েছিলেন। এই খুনের পিছনে সে সব বিষয় রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘আমরা কিছু সূত্র পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না।’’

খবর পাওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে যান রঘুনাথপুরের এসডিপিও সত্যব্রত চক্রবর্তী, আদ্রা থানার ওসি কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তদন্তে যান পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন। আরপিএফের কাছ থেকে পুলিশ-কুকুর এনে তদন্ত শুরু হয়। তবে তাতে বিশেষ লাভ হয়নি।

এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত থাকা হামিদ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই যুক্ত। আগে তিনি কাশীপুর ব্লকের যুব তৃণমূলের সভাপতি পদেও ছিলেন। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে বেকো পঞ্চায়েতে তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিল দল। বেকো পঞ্চায়েত সিপিএমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল।

দুপুরে আদ্রা থানায় যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সদস্য সৌমেন বেলথরিয়া, যুব তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সুশান্ত মাহাতো প্রমুখ। তাঁদের সবার দাবি, দ্রুত আততায়ীদের গ্রেফতার করতে হবে।

Purulia Adra Murder TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy