Advertisement
E-Paper

ভাল ফলেও অনিশ্চিত ওদের ভবিষ্যৎ

বাঁকুড়ার কোতুলপুরের গোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিয়াঙ্কা মালিক মাধ্যমিকে ৬৩৭ পেয়েছে। বাবা বাবলু মালিক মোটরবাইক সারান। আনন্দপল্লির ভাড়া ঘরে দিনের শেষে ফেরেন রোজগারের দেড়-দু’শো টাকা নিয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০১:১৬
প্রিয়াঙ্কা মালিক, সুধাময় খান, বিষ্ণু গড়াই

প্রিয়াঙ্কা মালিক, সুধাময় খান, বিষ্ণু গড়াই

ওরা সবাই মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে। তার পরেও মুখে আঁধার। কারণ, শুধু মেধা নয়, পরের পড়াশোনার জন্য দরকার টাকাও। সেটা কোথা থেকে আসবে ভেবে থই পাচ্ছেন না কৃতী তিন পড়ুয়ার অভিভাবকেরা।

বাঁকুড়ার কোতুলপুরের গোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিয়াঙ্কা মালিক মাধ্যমিকে ৬৩৭ পেয়েছে। বাবা বাবলু মালিক মোটরবাইক সারান। আনন্দপল্লির ভাড়া ঘরে দিনের শেষে ফেরেন রোজগারের দেড়-দু’শো টাকা নিয়ে। বাবলু বলেন, ‘‘ঘরে ভাড়া মেটাতেই হিমসিম খাই, এ দিকে মেয়ে জেদ করছে আরও পড়বে বলে। কী ভাবে পড়াব?’’ প্রিয়াঙ্কা চায় নার্সিং পড়তে। বলে, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’’ কৃতী এই ছাত্রী মার্শাল আর্টেও দক্ষ বলে জানাচ্ছেন গোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পার্থসারথি রায়। তবে মার্শাল আর্টে অনটনকে এক লহমায় কুপোকাত করা যায় না, সে কথা বোঝে সে-ও। প্রাণবন্ত মেয়েটির মুখ তাই ভার।

বাঁকুড়ার বড়জোড়ার বনশ্রীপল্লির বাসিন্দা সুধাময় খান। মেধাবী ছেলেটি চায় চিকিৎসক হতে। বড়জোড়া হাইস্কুল থেকে এ বারে ৬০৯ পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে সে বলছে, “আমি পড়তে চাই। কিন্তু বাবা পড়াতে পারবেন কি না বুঝতে পারছি না।” সুধাময়ের বাবা পতিতপাবন খান ভ্যান চালান। মা তুলসী খান বেলমালা বানিয়ে বিক্রি করেন। সংসারে মেরেকেটে মাসিক আয় হয় হাজার ছয়েক টাকা। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের একটা ছোট মেয়েও রয়েছে। পড়ার খরচ কী ভাবে চালাব বুঝে উঠতে পারছি না।’’ বড়জোড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় জানান, সুধাময়কে মাধ্যমিকে সাধ্যমতো সাহায্য করেছিলেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘পাশে কেউ দাঁড়ালে ছেলেটির স্বপ্ন সত্যি হতে পারে।’’

পুরুলিয়ার বরাবাজারের লটপদা হাইস্কুলে পড়ে বিষ্ণু গড়াই। স্কুলের বাইরে আইসক্রিম বিক্রি করেন তার বাবা শক্তিপদ। গ্রীষ্ম ফুরোলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাতিল লোহার জিনিসের টুকরো সংগ্রহ করেন। দিনের শেষে আয় হয় মেরেকেটে দেড়শো টাকা। সেই বিষ্ণু এ বারে মাধ্যমিকে পেয়েছে ৫৬৯। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ দত্ত জানান, স্কুলের মধ্যে সেটাই সর্বোচ্চ। মাটির বাড়ি। টালির ছাউনি। একটি মাত্র ঘরে প্রতিবন্ধী মা, বোন এবং বাবার সঙ্গে থাকে বিষ্ণু। ভাই-বোন মিলেই সামলায় ঘরকন্না। তার মধ্যেও মেধাবী ছেলেটি স্বপ্ন দেখে, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। কিন্তু লটপদা হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ নেই। শক্তিপদ বলেন, ‘‘আমি লেখাপড়া শিখতে পারিনি। চাই ছেলেমেয়ে দু’টো শিখুক। কিন্তু কী ভবে পড়াব? বাইরে পাঠানোর খরচ আসবে কোথা থেকে?’’

প্রশ্নটা একই। উত্তর জানা নেই তিন কৃতীর।

Madhyamik result 2018 WBBSE মাধ্যমিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy