Advertisement
E-Paper

মেয়েকে হারিয়েও রাজি প্রচারে

এমটিপিএস-এর সিআইএসএফ কলোনির এ-৭ বিল্ডিংয়ের ১ নম্বর কোয়ার্টারে বসে দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী বলছিলেন তাঁদের সদ্য হারানো বড় মেয়ে মধুস্মিতার কথা। পাশে বসে ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পিঙ্কি। দিলীপবাবু সিআইএসএফ কর্মী। 

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৬
স্তব্ধ: এমটিপিএস-এর সিআইএসএফ কলোনির আবাসনে মধুস্মিতার (ইনসেটে) পরিবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও নিজস্ব চিত্র

স্তব্ধ: এমটিপিএস-এর সিআইএসএফ কলোনির আবাসনে মধুস্মিতার (ইনসেটে) পরিবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও নিজস্ব চিত্র

মেয়েকে হারিয়েছেন শনিবার। চোখের জল এখনও শুকোয়নি। এই পরিস্থিতিতেও অঙ্গদান নিয়ে সমাজে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রচারে নামার অঙ্গীকার করছেন তাঁরা। তাঁরা অঙ্গদান করা কিশোরী মধুস্মিতা বায়েনের বাবা দিলীপবাবু ও মা অর্চনাদেবী।

এমটিপিএস-এর সিআইএসএফ কলোনির এ-৭ বিল্ডিংয়ের ১ নম্বর কোয়ার্টারে বসে দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী বলছিলেন তাঁদের সদ্য হারানো বড় মেয়ে মধুস্মিতার কথা। পাশে বসে ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পিঙ্কি। দিলীপবাবু সিআইএসএফ কর্মী।

দম্পতি জানান, দেড় বছর বয়সে মধুস্মিতার এপিলেপ্সি ধরা পড়ে। তার পরে নানা জায়গায় ছুটেছেন। গিয়েছেন দক্ষিণ ভারতেও। লাভ হয়নি। ১৭ নভেম্বর দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মধুস্মিতার ‘ব্রেন ডেথে’র কথা জানান চিকিৎসকেরা। সেখানেই সহকর্মী ও অন্যদের প্রস্তাবমতো মেয়ের অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন ওই দম্পতি।

দিলীপবাবু বলেন, “তিন মাস আগে আমাদের ইউনিটে অঙ্গদান নিয়ে একটি শিবির হয়েছিল। সেখানেই প্রথম বিষয়টি জানতে পারি। মেয়ের অকালমৃত্যুর দুঃখ ভোলার নয়। তবে তার অঙ্গ কোনও অসুস্থ মানুষকে নতুন করে বাঁচাবে, এর থেকে ভাল তো আর কিছু হতে পারে না।’’ এই সমস্ত কথার মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অর্চনাদেবী। বলেন, “মেয়েকে আর ফিরে পাব না। তবে ওর অঙ্গ কারও শরীরে রয়েছে এটা ভেবেই সান্ত্বনা পাচ্ছি। সমাজের সবাই যাতে অঙ্গদানে এগিয়ে আসেন তার জন্য যেখানে প্রচার হবে, সেখানেই যেতে রাজি।”

দিদিকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছে পিঙ্কি। তার মুখে কথা নেই। পিঙ্কি যে স্কুলে পড়ে, সেটির অধ্যক্ষ এনকে গৌতম বলেন, “মেয়ের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ হয়েও ওই দম্পতি দৃঢ়তার সঙ্গে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা সমাজের কাছে আদর্শ। আমরা ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের কাছে এই ঘটনার কথা তুলে ধরব।”

এমটিপিএস-এর সিআইএসএফ ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডান্ট শ্রী লজ্জারাম বলেন, “অঙ্গদানে আমরা প্রচার চালাই। তবে এমন একটি জ্বলন্ত উদাহরণ আগে দেখিনি। আমি নিশ্চিত এই পরিবার অনেককেই প্রেরণা দেবে।’’

দুর্গাপুর ব্যারাজ লাগোয়া একটি শ্মশানে রবিবার রাতেই মধুস্মিতার শেষকৃত্য হয়। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি সিআইএসএফের পদস্থ আধিকারিকেরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সিআইএসএফ কলোনির সামনেই মিষ্টির দোকান রয়েছে উত্তম গায়েন, গৌতম গায়েনদের। তাঁরা বলেন, “মধুস্মিতাকে কয়েক বার ওর বাবা মায়ের সঙ্গে বাইরে যেতে আমরা দেখেছি। একটি শোকস্তব্ধ পরিবার হাসপাতালে দাঁড়িয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেছে, শুনেই অবাক হয়েছি। মৃত্যুর পরে দেহের অঙ্গদান করা হয় বলে আমরা এত দিন শুনেছি। এ বার তার উদাহরণও পেলাম।”

Organ Donation Campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy