Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আশিসের পাশে ছাপ্পা-কাণ্ডের রেকিব

ওই নামে এলাকায় দলের কেউ নেই বলে দাবি করেছিলেন শাসকদলের জেলা সভাপতি। জামিন পেয়ে অভিযুক্ত নেতা নিজের বক্তব্য ছিল, তিনি নাকি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্তই নন।

রামপুরহাটে সোমবার তৃণমূলের মিছিলে প্রার্থীর পাশে হাঁটছেন আব্দুর রেকিব (চিহ্নিত)। —সব্যসাচী ইসলাম

রামপুরহাটে সোমবার তৃণমূলের মিছিলে প্রার্থীর পাশে হাঁটছেন আব্দুর রেকিব (চিহ্নিত)। —সব্যসাচী ইসলাম

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৯
Share: Save:

ওই নামে এলাকায় দলের কেউ নেই বলে দাবি করেছিলেন শাসকদলের জেলা সভাপতি। জামিন পেয়ে অভিযুক্ত নেতা নিজের বক্তব্য ছিল, তিনি নাকি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্তই নন। গত পুরভোটে রামপুরহাটে সদলবলে ছাপ্পাভোট দিয়ে সংবাদের শিরোনামে আসা সেই তৃণমূল নেতা আব্দুর রেকিবকে পাশে নিয়েই শহরে এ বারের বিধানসভার প্রচার শুরু করলেন রামপুরহাটের তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। যা দেখে নিন্দার ঝড় তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারা।

অবশ্য ঘটনার সময়ে ছাপ্পা-কাণ্ডে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন আশিসবাবু। সেই তিনি-ই বুধবার বলছেন, ‘‘জেলা সভাপতি ওঁকে দলে ফিরিয়ে নিয়েছেন। মিছিলে দলের কর্মী হিসাবে কে আমার পাশে হাঁটছেন, তা দেখার সময় থাকে না। তা ছাড়া ওঁর বিরুদ্ধে তো এখনও দোষ প্রমাণিত হয়নি।’’ আশিসের ওই বক্তব্যকে ধার করেই শাসকদল তৃণমূলকে বিঁধেছেন শহরের সিপিএম নেতা তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মনের অভিযোগ, ‘‘ফিরিয়ে নেওয়ার কথা যখন মেনে নেওয়া হচ্ছে, তখন প্রমাণিত হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি তৃণমূলেরই লোক ছিলেন। সামনে বিধানসভায় ভোট লুঠের রাস্তা সাফ রাখতেই আশিসবাবুদের রেকিবকে ফেরাতে হয়েছে।’’ তৃণমূলের এই কাজ অত্যন্ত নিন্দনীয় বলেই তাঁর দাবি।

ঘটনা হল, গত বছর পুরসভা ভোট চলাকালীন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত রামপুরহাট হাইস্কুলের ৫ নম্বর ঘরে ৪৬ নম্বর বুথে আবদুর রেকিব (রামপুরহাটে পুরভোটের তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য) জনা কুড়ি তৃণমূল কর্মীকে নিয়ে জোর করে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। ভোটকর্মীদের বের করে দিয়ে শুরু হয় ছাপ্পা ভোট। উপস্থিত পুলিশ কোনও বাধা দেয়নি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবদুর রেকিবকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস। এর পরেই ওই বুথে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। ওই ঘটনার জেরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ওই বুথে পুনর্নির্বাচনও হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে পুলিশ রেকিবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৩৭ (এ)(১-বি) ধারায় মামলা দায়ের করেছিল। ধৃত রেকিবকে রামপুরহাট আদালত জামিন দিয়েছিল। তখন অভিযুক্তকে দলের সঙ্গে কেউ নন বলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করলেও জামিনে ছাড়া পেতেই হৈহৈ করে মোটরবাইকে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন শাসকদলের কর্মীরাই। সেই রেকিবকেই এ দিন তৃণমূলের পতাকা হাতে আশিসবাবুর পাশে পাশে হাঁটতে দেখা গেল রামপুরহাটে। দলীয় কার্যালয় থেকে সারা শহর পরিক্রমা করল সেই মিছল। যে রেকিব এক দিন দাবি করেছিলেন, তিনি কোনও দল করেন না— আজ তাঁকেই বলতে শোনা গেল, ‘‘আমি তৃণমূলের এক জন একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে মিছিলে গিয়েছিলাম। এর বাইরে কিছু বলব না।’’ তৃণমূলেরই এক নেতার বক্তব্য, রেকিম যে কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে বাধ্য হয়েছিল দল। আসন্ন বিধানসভা ভোট করাতে রেকিবের গুরুত্বকে কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। তাই ফের তাঁকে শাসকদল তৃণমূলের মিছিলে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে।

এই ঘটনা শাসকদলের প্রকৃত মুখোশ খুলে দিল বলেই দাবি করেছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। তাঁর দাবি, ‘‘রামপুরহাটের ইতিহাসে সে দিন কী কাণ্ড ঘটেছিল, তা সবাই মনে রেখেছেন। সে সময়ে চুপ থেকে ঘটনার দায় অস্বীকার করেছিলেন আশিসবাবু। আজকে সেই লোকটার পাশে হেঁটেই আশিসবাবু প্রমাণ করলেন তিনি ঠিক কোন পথে চলছেন। মানুষ সব দেখছে। মানুষই এর জবাব দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rigging assembly eletion vote campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE