পঞ্চায়েতের বরাদ্দ করা অর্থে নিকাশি নালা তৈরি নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলি চলল বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার চকাই গ্রামে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি নাসিম শেখ। পাল্টা নাসিম-গোষ্ঠীর মারে গুরুতর জখম হন গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সেকেন্দর খান। আহত দু’জনকেই উদ্ধার করে প্রথমে সোনামুখী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দু’জনকেই স্থানান্তরিত করা হয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে।
গুলি চালানো ও সংঘর্ষের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে শনিবার রাতেই বকুল খান নামে সেকেন্দরের এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতকে রবিবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানোর কথা পুলিশের। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বন্দুকটি কোথা থেকে আনা হয়েছিল, সে ব্যাপারেও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি চকাই গ্রামে একটি পাকা নিকাশি নালা তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করে সোনামুখী ব্লকের পিয়ারবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। এই নিকাশি নালা তৈরি নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয় তৃণমূলের নাসিম-গোষ্ঠীর সঙ্গে সেকেন্দার-গোষ্ঠীর। শনিবার সকাল থেকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় বচসাও হয়। বিকালে আচমকাই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। অভিযোগ, সংঘর্ষ চলাকালীন সেকেন্দর বন্দুক বার করে গুলি দু’রাউন্ড ছোড়েন। প্রথম গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও দ্বিতীয় গুলিটি নাসিমের পেট ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। আহত হন নাসিম। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে সোনামুখী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ওই ঘটনার পরেই অভিযুক্ত সেকেন্দারের উপর চড়াও হয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
তৃণমূলের গুলিবিদ্ধ বুথ সভাপতি নাসিম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের বরাদ্দ টাকায় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। সেকেন্দার খান ও তার লোকজন চাইছিল অন্য জায়গায় নিকাশি নালাটি তৈরি করতে। এই নিয়ে গন্ডগোলের মাঝেই আমাকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। পরে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সেকেন্দর খান।’’ সেকেন্দার অবশ্য কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। তবে মা ফতেজা বিবি বলেন, ‘‘আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। সে গুলি-বন্দুক কোথায় পাবে? নাসিম শেখের লোকজনই আমার ছেলেকে অযথা মারধর করেছে।’’
তৃণমূলের বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চকাই গ্রামে নিকাশি নালা তৈরি করা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি। ওই দুই গোষ্ঠী কোন দলের, তা আমার জানা নেই। ঘটনায় দু’জন আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।’’
সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি বলেন, ‘‘২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে শাসকদলের নেতৃত্বে গুলি-বোমার রাজ চলছে সারা রাজ্যে। লুটের টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে শাসকদলের দুই গোষ্ঠী একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ করছে। সেই কারণেই শান্ত সোনামুখী অশান্ত হয়ে উঠল।’’