Advertisement
০৮ মে ২০২৪
TMC

TMC: দেহরক্ষী চাওয়ার হিড়িক পড়েছে, মাওবাদী আতঙ্ক কি তাড়া করছে বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতাদের?

বাঁকুড়ার পাঁচ তৃণমূল নেতা ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপারের কাছে। যদিও পুলিশ এ কথা স্বীকার করেনি।

দেহরক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গত বছর পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য চিত্তরঞ্জন মাহাতো।

দেহরক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গত বছর পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য চিত্তরঞ্জন মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২২ ১৪:২৬
Share: Save:

দেহরক্ষী চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদনের হিড়িক পড়ে গিয়েছে জঙ্গলমহলের বড়, মাঝারি এবং ছোট মাপের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে। বাঁকুড়ার রানিবাঁধের পাঁচ তৃণমূল নেতা বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের দফতরে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী চেয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে গত ৮ এপ্রিল মাওবাদীরা বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল। তার জোরালো প্রভাব পড়েছিল জঙ্গলমহলে। তার জেরেই তৃণমূল নেতাদের এই ‘প্রস্তুতি’ বলে মনে করছেন অনেকে। আবেদনকারীদের কেউ কেউ তা প্রকাশ্যে স্বীকারও করে নিচ্ছেন।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য চিত্তরঞ্জন মাহাতো তাঁর দেহরক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গত বছর লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন পুলিশ সুপারের কাছে। এ বার অবশ্য তিনি মৌখিক ভাবে বিষয়টি আরও এক বার পুলিশের কাছে উত্থাপন করেছেন। চিত্তরঞ্জনের পথে হেঁটে আরও কয়েক জন তৃণমূল নেতা নিরাপত্তারক্ষীর জন্য পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। চিত্তরঞ্জনের বক্তব্য, ‘‘বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে আমাকে রানিবাঁধের রাউতোড়া, রুদড়া-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হয়। সম্প্রতি বিজেপির উস্কানিতে ফের জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা একটু সক্রিয় হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে, সাবধানে ঘোরাফেরা করা উচিত। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলে দলের নির্দেশে ‘গ্রামে চলো’ কর্মসূচি শুরু হবে। সেই সময় জঙ্গলমহলে দিনে হোক বা রাতে, যাতে অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারি সে জন্য আমি এবং আরও চার জন তৃণমূল নেতা ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’

যদিও বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তরফে এমন কোনও আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করা হয়নি।

তৃণমূল নেতাদের এমন নিরাপত্তারক্ষী চাওয়া নিয়ে বিজেপি কটাক্ষ করেছে। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীল রুদ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘শাসকদলের নেতারা বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পে কাটমানি নিয়েছেন। তাই এখন মাওবাদী আতঙ্ক তাঁদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে।’’

তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য এখনও জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের গতিবিধি বেড়েছে, এ কথা মানতে নারাজ। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা রাইপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুর কথায়, ‘‘এক সময় জঙ্গলমহলে মাওবাদী প্রভাব থাকলেও এখন এলাকায় কোনও অশান্তি নেই। মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন। তৃণমূল নেতারা ভয় পাচ্ছেন এমন কোনও বিষয়ও নেই। আমাদের কাছে মানুষই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তারক্ষী। মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ থাকলে তাঁরাই আমাদের নিরাপত্তা দেবেন।’’

বাঁকুড়া-সহ জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে মাওবাদীদের নিয়ে রাজ্যকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এই তথ্য হাতে পেতেই জঙ্গলমহল জুড়ে ১৫ দিনের জন্য চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য পুলিশ। সাম্প্রতিক কালে একাধিক মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার উদ্ধার হয়েছে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায়। গত ৮ এপ্রিল মাওবাদীদের ডাকা বন্‌ধের ভাল প্রভাবও পড়েছিল জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে। এই পরিস্থিতিতে পাঁচ তৃণমূল নেতার দেহরক্ষী নিয়োগের আবেদন ঘিরে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। মাওবাদী আতঙ্কে শাসক দলের নেতাদের এই দেহরক্ষীর আবেদন? জঙ্গলমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে অন্য যুক্তিও। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে জঙ্গলমহলের একাংশ নেতা জনমানসে এই ভাবে নিজেদের ‘ওজন বাড়ানোর’ চেষ্টা করছেন বলেও কারও কারও মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Junglemahal Maoist CPI Maoist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE