Advertisement
E-Paper

কেষ্টর গ্রামেই হার তৃণমূলের

চড়াম-চড়াম থেকে শুরু করে ‘গুড়-জলের’ তত্ত্ব। একের পর এক হুমকি, হুঁশিয়ারিতে ভোট মরসুমে শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন বীরভূমে ১১-০ করে দেখিয়ে দেবেন। হয়েছে ৯-২।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:৩৪

চড়াম-চড়াম থেকে শুরু করে ‘গুড়-জলের’ তত্ত্ব। একের পর এক হুমকি, হুঁশিয়ারিতে ভোট মরসুমে শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন বীরভূমে ১১-০ করে দেখিয়ে দেবেন। হয়েছে ৯-২। অনুগামীদের আক্ষেপ, ‘‘কেষ্টদা একটুর জন্যে কথা রাখতে পারেননি!’’ কিন্ত, ওই দুই আসনে কেন হার হল— তার কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে উঠে এসেছে ঢেড় বেশি অস্বস্তিকর তথ্য। বিধানসভা ভোটের বুথভিত্তিক ফল বলছে, বীরভূমের নানুরে নিজের পৈতৃক ভিটে হাটসেরান্দিতেই সিপিএমের থেকে কম ভোট পেয়েছেন গুড়-জলের দাওয়াইয়ের প্রবক্তা অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। পিছিয়ে পড়েছেন

একেবারে ঘরেই!

অনুব্রত অবশ্য এখন আর এই গ্রামে থাকেন না। তবে ফি বছর পুজোর ছুটিতে বেশ কিছু দিন হাটসেরান্দি কাটিয়ে যান। গ্রামে তাঁর পরিজনেরা রয়েছেন। রয়েছেন বহু কর্মী-সমর্থকও। এ হেন তল্লাটের ৪টি বুথে সিপিএম পেয়েছে মোট ৯৬০টি ভোট। তৃণমূল ৯১৪টি ভোট।

ঘটনা হল, শুধু হাটসেরান্দি নয় তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে চণ্ডীদাস-নানুর, থুপসড়া, নওয়ানগর-কড্ডা, বড়া-সাওতা, দাসকলগ্রাম-কড়েয়া ২ নম্বর পঞ্চায়েতেও। চারকল গ্রাম পঞ্চায়েতের পাপুড়ি গ্রামের পাঁচটি বুথে তৃণমূলের প্রাপ্ত মোট ভোট ১৯৯! সেখানে সিপিএম পেয়েছে ২২১৪টি ভোট। নানুরের চারটি বুথেও এগিয়ে সিপিএম। তৃণমূল পেয়েছে ৯৭৫টি ভোট, সিপিএমের ভোট ১৩৬২। ওই চারটি বুথের একটিতে নানুরের তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরার বাড়ি। অন্য একটিতে ভোটার খোদ নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য। থুপসড়ার সাঁতরা গ্রামের দু’টি বুথে ১৮ ভোটে এগিয়ে রয়েছে সিপিএম। ওই গ্রামেই বাড়ি দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খানের। শুধু নানুর ব্লকে নয়, ওই বিধানসভা কেন্দ্রের অনুব্রতর খাসতালুক সিঙ্গি, সিয়ান-মুলুক, বাহিরী-পাঁচশোয়া পঞ্চায়েতেও এগিয়ে সিপিএম। যার জন্য দিনের শেষে জিতে গিয়েছেন নানুরের সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধান।

এমন ফলের নেপথ্যে উঠে আসছে সেই একটিই কারণ— কাজল শেখ। নানুরের পরাজিত প্রার্থী গদাধরের অনুগামীদের অভিযোগ, নানুরে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থীর জয়ের পিছনে ‘আসল কারিগর’ কাজলই! তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে নানুরের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তৃণমূল সমর্থক ভোটারদের ভোটও গিয়েছে সিপিএমের ঝুলিতে। কাজলেরই ‘নির্দেশে’ ১৭ এপ্রিল, বীরভূমে ভোটের দিন নানুরের অন্তত ৫১টি বুথে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এজেন্টই বসাতে পারেননি গদাধর। খোদ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে যখন এজেন্ট বসিয়েছেন, ততক্ষণে খেল খতম!

তৃণমূলের একটি সূত্রের মত, এলাকা কার দখলে থাকবে তা নিয়েই গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে গদাধরের সঙ্গে কাজলের গোষ্ঠীর সংঘাত চরমে ওঠে। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কমার আশঙ্কায় গদাধরকে প্রার্থী হিসাবে চাননি কাজল। রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এ নিয়ে দরবারও করেন। কিন্তু জেলা কমিটির সুপারিশে তাকে অগ্রাহ্য করে গদাধরকেই প্রার্থী করে দল। তারপরই নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে কাজল পরোক্ষে সিপিএমকে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ।

পরাজয়ের ব্যাখ্যায় কাজল-গদাধরের কোন্দলের পাশাপাশি এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, পাঁচ বছরে নেতাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়াটাও কাল হয়েছে। তৃণমূল নেতারা অবশ্য তা মানতে চাননি।

কাজলের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি এসএমএসর-ও। তাঁর এক অনুগামী জানিয়েছেন, ‘‘শুধু দাদার ঘাড়ে দোষ চাপালে হবে না। ভোটের আগে বড় বড় বুলি দেওয়া কেষ্টদা-সহ একগাদা নেতা কেন নিজেদের বুথে জিততে পারলেন না তা দেখলেই পরিস্কার হবে আসল সমস্যা কোথায়!’’ গদাধর দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। হারের কারণ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি গদাধর।

জেলা রাজনীতিতে শাসকদলের মুখ অনুব্রত। তৃণমূলের এমন দাপুটে নেতার গ্রামেই এমন কাণ্ড কতটা অস্বস্তির? অনুব্রত বলছেন, ‘‘সে জবাব আপনাদের দেব কেন?’’ কিছুটা থেমে যোগ করলেন, ‘‘নানুরে হারের ব্যাখ্যা দিয়ে দলনেত্রীকে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। আর কিছু বলব না।’’ বাকিটা বলে দিচ্ছেন অনুগামীরা—‘‘কেষ্টদা নিজের বুথেই সিপিএমের কাছে হেরে গিয়েছেন। লজ্জার সেই হার নিয়ে দাদা প্রবল অস্বস্তিতে। ফলে আর কী-ই বা বলতে পারেন?’’

TMC Village CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy