দলীয় নেতাকে লাথি মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি তথা স্থানীয় বনগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তুষার মণ্ডলের বিরুদ্ধে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনা বলে দাবি তৃণমূল কর্মীদের একাংশের। চায়ের দোকানের নজর ক্যামেরায় ওই ঘটনার ফুটেজ (আনন্দবাজার পত্রিকা ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি ) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
যাঁকে লাথি মারা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই গোপীনাথ মণ্ডল বনগ্রাম অঞ্চল কমিটির সভাপতি অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসাবে পরিচিত। তুষারের বিরুদ্ধে জমি জবরদখলের অভিযোগ তোলায় ‘আক্রোশে’ তাঁকে লাথি মারা হয়েছে বলে অরবিন্দের দাবি। সাঁইথিয়ায় শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল অবশ্য নতুন নয়। তুষার মণ্ডলের সঙ্গে ব্লক সভাপতি সাবের আলি খান এবং অঞ্চল সভাপতি অরবিন্দের মধ্যেও বিবাদ রয়েছে বলে দল সূত্রের খবর। গরুপাচার মামলায় জেলে যাওয়ার আগে তৎকালীন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কর্মিসভায় দু’পক্ষকেই সতর্ক করেন। কিন্তু, তাতেও কোনও কাজ হয়নি বলে দলের কর্মীরাই জানাচ্ছেন।
তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে রাজ্য কমিটি মনোনীত এবং অরবিন্দ অনুগামী হিসাবে পরিচিত প্রার্থীকে ভোটাভুটিতে হারিয়ে নিজের পছন্দের সদস্যাকে বনগ্রামের প্রধান করার অভিযোগ ওঠে তুষারের বিরুদ্ধে। পরবর্তী কালে অরবিন্দ-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতে ভাঙচুরের অভিযোগ তোলেন তুষার। তুষারের বিরুদ্ধে ৬৬ বিঘে সরকারি জমি জবরদখলের অভিযোগে সরব হন অরবিন্দ।
সেই ‘আক্রোশেই’ অরবিন্দের ‘ঘনিষ্ঠ’, দলের অঞ্চল সাধারণ সম্পাদক গোপীনাথ মণ্ডল ওরফে বাবনকে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে তুষারের বিরুদ্ধে।
বাবনের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় দহিরা মোড়ের একটি চায়ের দোকানে। বাবনের অভিযোগ, ‘‘আমরা ১০১২ জন পঞ্চায়েত সদস্যা শিবানী বাগদির স্বামী নিরঞ্জনের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। সেই সময় তুষার মণ্ডল মোটরবাইক হাঁকিয়ে এসে মদ্যপ অবস্থায় আমাকে গালিগালাজ করে। হঠাৎ বুকে লাথিও মারে।’’ দোকানের নজর ক্যামেরার ফুটেজে সব ধরা আছে বলেও বাবনের দাবি। অরবিন্দ বলেন, ‘‘আমরা তুষার মণ্ডলের সরকারি জমি জবরদখল-সহ বনগ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন দুর্নীতির প্রতিবাদে সরব হয়েছি। সেই আক্রোশেই বাবনকে ওই ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। পুলিশ এবং দলের নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’ তুষারকে বারবার ফোন করে এবং মেসেজ পাঠিয়েও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
বিজেপির স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন , ‘‘তৃণমূল নেতারা মুদ্রার এ-পিঠ আর ও-পিঠ। বালির ঘাট, সরকারি প্রকল্পের টাকার ভাগ বাঁটোয়ারার জন্যই ওই সংঘাত।’’ তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য অভিজিৎ সিংহ জানান, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। খতিয়ে দেখে দলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পুলিশ জানায়, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)