Advertisement
E-Paper

বোমায় উড়ল প্রধানের গোয়াল ঘর

বাড়িতে বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে বদরুদ্দোজাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এ দিনই সিউড়ি আদালতে তুলে ৯ দিনের জন্য বদরুদ্দোজাকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানান, কী  কারণে বিস্ফোরণ ঘটল, তার তদন্ত চলছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বাড়ির মালিককে। 

নিজস্ব সংবাদদাতা  

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৮
তছনছ: রেঙ্গুনি গ্রামে বিস্ফোরণের পরে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

তছনছ: রেঙ্গুনি গ্রামে বিস্ফোরণের পরে। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

খয়রাশোলের পরে সদাইপুর। ফের বিস্ফোরণ বীরভূমে। এ বার প্রচণ্ড শব্দে উড়ে গেল তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের গোয়ালঘর। টিনের চাল উড়ে গিয়ে জখম হলেন গ্রামেরই এক বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার কাকভোরে ঘটনাটি ঘটেছে সদাইপুর থানা এলাকায় রেঙ্গুনি গ্রামে। ক’দিন আগেই কাঁকরতলা থানার বড়রা গ্রামে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে।

রেঙ্গুনি গ্রামটি দুবরাজপুর ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হাইতুন্নেসা খাতুনদের গোয়াল উড়লেও, এলাকাবাসীর একাংশ এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন তাঁর বাবা, তৃণমূলের প্রাক্তন বুথ সভাপতি শেখ বদরুদ্দোজাকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, মজুত রাখা বোমা ফেটেই এমন কাণ্ড। বাড়িতে বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে বদরুদ্দোজাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এ দিনই সিউড়ি আদালতে তুলে ৯ দিনের জন্য বদরুদ্দোজাকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানান, কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটল, তার তদন্ত চলছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বাড়ির মালিককে।

অন্য দিকে প্রধান হাইতুন্নেসার দাবি, গ্রামের বেশ কিছু মানুষ তাঁদের পরিবারকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র করেছে। বিস্ফোরণের পিছনে রয়েছে তারাই। হাইতুন্নেসা বলেন, ‘‘আমাদের গোটা পরিবারকে গ্রামছাড়া করার চেষ্টা বহুদিন ধরেই চলছে। বেশ কয়েক বার আক্রান্ত হয়েছে আমাদের বাড়ি। হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে আমাকে ও পরিবারকে। এই বিস্ফোরণও বাইরের লোকজন ঘটিয়েছে।’’ তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র বলছেন, ‘‘ঘটনা শুনেছি। ঘটনার পিছনে যেই থাক, নিরপক্ষে তদন্ত করে পলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেঙ্গুনি গ্রামে মোট তিনটি বাড়ি শেখ বদরুদ্দোজার। গ্রামের মাঝামাঝি আদি বাড়ি। ছোট মেয়ে হাইতুন্নেসা-সহ বদরুদ্দোজাদের বাস সেখানেই। একটু তফাতে রাস্তা ঘেঁষে রয়েছে নির্মীয়মাণ দোতলা বিশাল পাকা বাড়ি। ওই বাড়ি লাগায়ো টিনের চাল ও ইটের দেওয়াল যুক্ত আর একটি বাড়ি ছিল। সেই বাড়িটিই এ দিন উড়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সকালে ওই বাড়ির সামনেই গরু বাঁধতে এসেছিলেন বদরুদ্দোজা। তখনই বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে গ্রাম। সবাই দেখেন, কার্যত উড়ে গিয়েছে বাড়িটি। টিনের টুকরো উড়ে একশো মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। লোহার শাটার গিয়ে পড়ে সামনের পুকুরে। আশপাশের মাটির বাড়িতে ফাটল ধরে যায়। সেই সময় কাছের পুকুরে গিয়েছিলেন পড়শি জগাই বাউড়ি। টিনের উড়ন্ত টুকরোর আঘাতে মারাত্মক জখম হন তিনি। দেখতে দেখতে ভিড় জমে যায় এলাকায়। চলে আসে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বদরুদ্দোজার পরিবারের প্রতি গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। মাস দুয়েক আগেই ওই বাড়ি ঘিরে বোমাবাজি হয়। গত ২৬ জুন হাইতুন্নেসা খাতুন ও তাঁর মাকে মারধর করা হয়। একই সময়ে মাঠে বীজতলা করে ফেরার পথে প্রধানের তিন ভাইয়ের উপরে হামলা চালায় গ্রামের বিপক্ষ গোষ্ঠী। গ্রামবাসীর অনেকের অভিযোগ, কিছুদিন আগে দল বদরুদ্দোজাকে বুথ সভাপতির পদ থেকে সরালেও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে এলাকার মানুষের কাছ থেকে যে ভাবে টাকা লুটেছেন, মানুষকে কষ্ট দিয়েছেন, তার জন্যই রাগ। যদিও বদরুদ্দোজার পরিবারের সদস্যদের দাবি, কোনও অন্যায় কাজ তাঁরা করেননি। বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই মানুষের বিরাগভাজন হয়েছেন।

এ দিন হাইতুন্নেসা দাবি করেন, পুলিশের খাতায় অভিযোগ থাকায় তাঁর তিন ভাইকে পরে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের বৃহস্পতিবার সিউড়ি আদালতে জামিন পাওয়ার কথা ছিল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গ্রামের মানুষের একটা অংশ আগেই বলেছিল, জেল থেকে বেরোতে দেবে না ভাইদের। এ দিনের বিস্ফোরণের পিছনে তাদেরই হাত রয়েছে।’’ এলাকায় বদরুদ্দোজার বিরোধী বলে পরিচিত শেখ ফিরোজ বলছেন, ‘‘কে ওদের বাড়িতে বোমা রাখবে? গ্রামের মানুষের কি অন্য কাজ নেই! আসলে ছেলেরা ছাড়া পাবে জেনে ফের একবার অশান্তি পাকাতেই বোমা মজুত করেছিল বদরুদ্দোজা। সেটাই ফেটেছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে হাইতুন্নেসা ও তাঁর দিদি বদরুন্নেসার দাবি, ‘‘ওই বাড়িতে ধান ছিল। ধান বিক্রি হওয়ার পরে ফাঁকাই ছিল। বোমা মজুত থাকলে ওখানে কেউ গরু বাঁধতে যায়!’’

cowshed blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy