E-Paper

সৌমিত্রর ফেরার জল্পনা চালাকি, দাবি সুজাতার

সৌমিত্রের কথায় বিশেষ ভরসা দেখছে না রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ, সৌমিত্রর অতীত। ২০১১ সালে কংগ্রেসের কোতুলপুরের বিধায়ক হয়ে ২০১৪-তে তিনি তৃণমূলে যান।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ০৮:২১
সুজাতা মণ্ডল।।

সুজাতা মণ্ডল।। —ফাইল চিত্র।

বিজেপি ছেড়ে সাংসদ সৌমিত্র খাঁ কি তৃণমূলে ফিরছেন? এ নিয়ে পাড়ার চায়ের ঠেক থেকে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা চলছে। যদিও এ বিষয়ে ‘রাজ্য নেতৃত্ব’-এর নিষেধাজ্ঞা থাকায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা তৃণমূল নেতারা।

সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলকে পরাজিত করেছেন সৌমিত্র। কিন্তু জেতার পর থেকেই তিনি বেসুরো। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে লাগাতার আক্রমণ করার পাশাপাশি গুণগান করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যা থেকে তাঁর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে সৌমিত্রের দাবি, “বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আমি কতদিন টিকতে পারব, পরের ব্যাপার। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংসদে যেমন ভোট দিতে বলবেন দেব। যেমন চলতে বলবেন, তেমনই চলব। তৃণমূলে যাওয়ার বিষয়ে কিছু ভাবছি না।”

যদিও সৌমিত্রের কথায় বিশেষ ভরসা দেখছে না রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ, সৌমিত্রর অতীত। ২০১১ সালে কংগ্রেসের কোতুলপুরের বিধায়ক হয়ে ২০১৪-তে তিনি তৃণমূলে যান। ওই বছরেই তিনি তৃণমূলের বিষ্ণুপুরের সাংসদ হন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তারপরেই বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে বিজেপির সাংসদ হন। এ বার বিজেপির টিকিটে জিতলেও ফল প্রকাশের পরের দিনই তিনি অভিষেকের ভোট কৌশলের প্রশংসা করেন। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার তিনি জানালেন, বিষ্ণুপুরের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সাক্ষাৎ চান। সেই সঙ্গে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা আটকে দিয়ে রাজ্য বিজেপি ভুল করেছে বলেও অভিযোগ করেন। সৌমিত্রর হঠাৎ এই বদলের কারণ নিয়ে ধন্দে জেলা তৃণমূলের অনেকে। সৌমিত্রের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিন বারের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রের মন্ত্রীত্ব না পাওয়ায় তিনি মানসিক আঘাত পেয়েছেন। বিজেপি সূত্রে দাবি, সৌমিত্রকে রাজ্যে সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার আভাস দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে সৌমিত্র রাজ্য সভাপতি ছাড়া অন্য পদ নিতে রাজি নন বলে জানান। কিন্তু সেই পদ মিলবে কি না নিশ্চয়তা মেলেনি। এই পরিস্থিতিতেই দলকে ‘চাপে’ রাখতে সৌমিত্র তৃণমূলে ফেরার জল্পনা তৈরি করছেন বলে বিজেপির
একাংশের ব্যাখ্যা।

সৌমিত্র তৃণমূলে গেলে শাসকদলের জেলা নেতা-নেত্রীরা তা মেনে নেবেন কি না, বিষ্ণুপুরবাসীর মধ্যে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী সুজাতার দাবি, “তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশকে হাত করে অন্যায় ভাবে সৌমিত্র জিতেছেন। নিজের যোগ্যতায় তিনি জেতেননি বলে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে পাত্তা দিচ্ছেন না। গাড্ডায় পড়ে তাই তৃণমূলের সুনাম করছেন। এটা সৌমিত্রর চালাকি ছাড়া কিছু নয়। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবর্জনাকে গুরুত্ব দেন না।”

সুজাতা আগে অভিযোগ করেন কিছু বিধায়ক ও পদাধিকারীদের একাংশ লোকসভা নির্বাচনে দলের সঙ্গে বেইমানি করে সৌমিত্রকে সাহায্য করেছেন। বিজেপির টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যাওয়া বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ মন্তব্য করতে চাননি। বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “সৌমিত্র নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে যতটা নোংরা ভাষায় আক্রমণ করতেন, এখন ততটাই ভদ্র ভাষায় সুনাম করছেন। ওকে দলে নেওয়া, না নেওয়া এ সব শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়।’’ তবে তৃণমূলের এক জেলা নেতার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “সৌমিত্র তৃণমূল ঘরানার ছেলে, রাজনৈতিক দক্ষতাও রয়েছে। আর দল ছেড়ে পরে ফিরে আসার ঘটনা আমাদের দলে নতুন নয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy