রাস্তা জুড়ে শুধু টোটো। হাঁটাই দায়। — নিজস্ব চিত্র
যানজটে এমনিতেই থমকে থাকে সাঁইথিয়া। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তার উপরে ক্রমশ বাড়ছে টোটোর উৎপাত। পরিস্থিতি এমনই, পথে পা রাখাই দায়।
শহরবাসীর কথায়, এমনিতেই সাঁইথিয়ার রাস্তা চওড়া নয়। তার উপরে এখন শুরু হয়েছে ‘টোটো-রাজ।’ অভিযোগ, ‘‘টোটোর জন্য রাস্তা পারাপার করা তো দূরের কথা, পথে চলাই দায়। কখন যে, পিছন থেকে ধাক্কা মারবে তার ঠিক নাই। সব সময় আতঙ্কে পথ চলতে হয়। শুধু রাস্তা নয়, টোটোর দাঁড়ানো বা স্ট্যান্ডের জায়গা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। প্রশাসন সব দেখেও চুপ।’’
সাঁইথিয়া শহরে রাস্তারই অভাব। রাস্তা বলতে কার্যত পশ্চিম থেকে পুবে চলে যাওয়া একটি রাস্তা। এই রাস্তকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে শহর। বিভিন্ন পাড়ার রাস্তা এসে ওই রাস্তায় মিশেছে। বর্তমানে বেশ কয়েকমাস থেকে নতুন জল প্রকল্পের কাজে সেই সব রাস্তাতেই চলছে খোঁড়াখুড়ি। ফলে যানজট ও রাস্তা সমস্যা আরও বেড়েছে। আর সেই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে টোটো। শহরবাসীর কথায়, শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যাতায়াতে সত্যিই টোটোর বিকল্প পাওয়া মুশকিল। কিন্তু পথে বের হলে নাভিশ্বাস ওঠার মতো অবস্থা। সাইকেল, মটরবাইকে, রিক্সায়, গাড়িতে বা সর্বপরি টোটোতে যাতে চেপেই পথে নামুন না কেন, কখন গন্তব্যস্থল পৌঁছাবেন তার কোনও ঠিক নাই। এমনকী পায়ে হেঁটেও না।
ইউনিয়ন বোর্ড মোড়, এসবিআই মোড়, মোহনবাগান মোড়, হাটতলা মোড়, নন্দিকেশ্বরী চৌরাস্তা মোড়, হাসপাতাল মোড়, পালির মোড়, কলেজ মোড়— সর্বত্রই টোটোর মিছিল। অভিজ্ঞতা বলছে, সকাল থেকে সন্ধে এই পথগুলিই টোটোর কারণে যানজট লেগে থাকে। থমকে যায় অ্যামবুল্যান্সও। তখন টোটো চালকেরা সুযোগ পেলে যে যার মতো গলি পথে ঢুকে সেই পথেও জ্যাম লাগিয়ে দেন। ফলে পথ চলতি মানুষজন থেকে সাইকেল, মটর বাইক আরোহীদের যাতায়াতের গলিপথও বন্ধ হয়ে যায়। টোটো-জটের কথা মানছেন পুরপ্রধান।
অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক তপন মুখোপাধ্যায়, বিবেকানন্দ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ তপন চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক ভাস্কর কয়েড়ি, সেন্ট এ্যান্ড্রুজ স্কুলের শিক্ষক মানিক রায়, হাই স্কুলের শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সিউড়ির নিত্যযাত্রী সিরাজ শেখ, ব্যবসায়ী হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাক্তার সমীর বিত্তাররা বলেন, ‘‘ব্যবসা, শিক্ষা-সহ নানা কারণে প্রতিদিন ছোট বড় অসংখ্য গাড়ি হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এই শহরে। ফলে বহিরাগত ভিড়ের কারণেও যানজট সমস্যা ছিলই। গৃহবধূ সৌমী দাস, বুলা মিত্র, রাখী পোদ্দাররা বলেন, ‘‘টোটো হওয়াতে একদিকে সুবিধা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু টোটোর কারণে পথে বেরতেই ভয় হয়।’’
টোটোর কারণে শহরে যানজট বেড়েছে।— সে কথা স্বীকার করে নেন সাঁইথিয়া মা নন্দিকেশ্বরী টোটো চালক ইউনিয়ানের সম্পাদক গোপাল দাস। তাঁর কথায়, আসলে একটা রাস্তা হওয়াতেই এত সমস্যা। তিনি বলেন, ‘‘শহরে কম বেশি ২৫০ মতো টোটো আছে। তার মধ্যে টোটো ইউনিয়নে নাম নথিভুক্ত আছে ১৭৬ জনের। নতুন করে আর নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে না।’’
তিনি দাবি করেন, ২০-২২টি টোটোর আরটিআই দফতর থেকে টোটো চালানোর অনুমতি ও রুট পারমিট রয়েছে। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন আরটিও স্বয়ং। আরটিও বীরবিক্রম রায় বলেন, ‘‘সাঁইথিয়ায় টোটো চালানোর জন্য কিছু আবেদন জমা পরেছে। তবে এখনও কাউকে রুট পার্মিট বা টোটো চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তবে শুধু সাঁইথিয়া নয়, বিনা পারমিটের প্রচুর টোটো চলছে। তা নিয়ে বোর্ড মিটিংও হয়েছে। কিন্তু যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারাধীন তাই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘এই শহরে যানজট দীর্ঘদিনের সমস্যা। টোটোর কারণে সেই সমস্যা যে অনেক বেড়ে গিয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নাই। তবে অন্যান্য শহরে টোটোর বাড়বাড়ন্ত দেখে পুর কর্তৃপক্ষ আগেই সতর্ক হয়ে যায়। টোটো নিয়ত্রণে রাখতে ইউনিয়ানের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই বৈঠক করা হয়। আমাদের হিসাবে এখনও পর্যন্ত ১৬৮টা টোটো আছে। হয়তো পরে কয়েকটা বেড়ে থাকতে পারে। তবে তা ২০০ ছাড়ায়নি’’।
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘জল প্রকল্পের জন্য যে সমস্ত রাস্তা খোঁড়া হয়েছে, তা জল প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই সারিয়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy