Advertisement
E-Paper

ট্রাফিক ওসি-কে ‘হেনস্থা’ সিউড়িতে

‘পথে চলার নিয়ম’ শেখাতে গিয়ে হেনস্থার মুখে বারবার পড়তে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশকর্মীদের। মোটরবাইক আরোহী, টোটো চালক তো বটেই কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারও রক্তচক্ষুর সামনে পড়েছেন তাঁদের অনেকেই। এ বার ট্রাফিক পুলিশের কর্তব্যরত ওসি-কে হেনস্থার অভিযোগ উঠল দু’জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে। তা-ও জেলাসদরে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০২:১৮
কর্তব্য: যান নিয়ন্ত্রণে সুমন প্রামাণিক। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

কর্তব্য: যান নিয়ন্ত্রণে সুমন প্রামাণিক। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

‘পথে চলার নিয়ম’ শেখাতে গিয়ে হেনস্থার মুখে বারবার পড়তে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশকর্মীদের। মোটরবাইক আরোহী, টোটো চালক তো বটেই কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারও রক্তচক্ষুর সামনে পড়েছেন তাঁদের অনেকেই। এ বার ট্রাফিক পুলিশের কর্তব্যরত ওসি-কে হেনস্থার অভিযোগ উঠল দু’জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে। তা-ও জেলাসদরে!

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিকেলে সিউড়িতে এক হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীর পথ আটকান ওসি সুমন প্রামাণিক। ওই আরোহীর জরিমানার কাগজ লিখছিলেন তিনি। অভিযোগ, জরিমানার টাকা দেওয়া দূর, পরিতোষ রায় নামে ওই আইনজীবী এবং তাঁর সঙ্গী আইনজীবী রামপ্রসাদ মণ্ডল ওই পুলিশ অফিসারকে প্রকাশ্য রাস্তায় হেনস্থা করেন।

জেলার পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানান, কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে হেনস্থা ও হুমকি দেওয়ায় দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে সিউড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

থানায় লিখিত অভিযোগ হওয়ার আগেই মোবাইল ফোনে তোলা আইনজীবী ও ট্রাফিক পুলিশের সেই সংঘাতের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, মঙ্গলবার বিকেলে সিউড়ি শহরে পুলিশ লাইনের কাছে যান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন সুমনবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার। ট্রাফিক আইন ভাঙা ও হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের দিকেও নজর রাখা হচ্ছিল। সেই সময় দুই আইনজীবী মোটরবাইকে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের কারও হেলমেট ছিল না। ওসির নির্দেশে এক সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁদের থামিয়ে মোটরবাইকের চাবি খুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

সংঘাতের সূত্রপাত তখনই। ট্রাফিক আইন ভাঙায় পরিতোষবাবুকে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযোগ, জরিমানা দিতে অস্বীকার করেন ওই আইনজীবী। তা নিয়ে দু’পক্ষে বচসা শুরু হয়। খবর পেয়ে আরও কয়েক জন আইনজীবী ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এ ভাবে পুলিশ জরিমানা করতে পারে না বলে তাঁরা দাবি করেন। দাবি করেন, নন-কগনিজিবল রিপোর্ট (ধর্তব্যের মধ্যে থাকা অপরাধ নয়) ও সিজার লিস্ট দেওয়ার। ওই পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া হয়। বাধা দেওয়া হয় সরকারি কাজে।

অভিযোগকারী সুমনবাবু ও দুই আইনজীবী এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। পরিতোষবাবু বক্তব্য, ‘‘বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। তার আগে এ নিয়ে কিছু বলব না।’’ সিউড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যেটুকু শুনেছি তাতে হেনস্থার কোনও ঘটনা ঘটেনি। আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে কথাকাটি হয়েছে মাত্র। জরিমানা দিলে অপরাধ স্বীকার করা হয়। এটা সবাই মানতে না-ও পারেন। তিনি আইন ভেঙেছেন কিনা তা আদালতের বিচার্য। জরিমানা না দিয়ে রিপোর্ট, সিজার লিস্ট চাওয়া অন্যায় নয়।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের যানজট এড়াতে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। তার মধ্যে রয়েছে টোটো চলাচল নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ দখলদার হঠানো, কিছু রাস্তাকে ওয়ান ওয়ে ঘোষণা করা। সব চেয়ে উল্লখেযোগ্য সিউড়ি শহরে স্বয়ংক্রিয় সিগনালিং ব্যবস্থা চালু করা। পুলিশের দাবি, এর পরেও অনুশাসন মানছেন না শহরবাসীর একাংশ। বাধা দিলেই পুলিশকে আক্রান্ত হতে হচ্ছে।

পথে চলার নিয়ম শেখাতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা এনভিএফ ও এএসআই কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আগেও একাধিক বার ঘটেছে। গত বছর মে মাসে সিউড়ির বেণীমাধব মোড়ে ওসি ট্রাফিক প্রশান্ত শিকদারের নেতৃত্বে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে সামলাচ্ছিলেন এনভিএফ কর্মী মহম্মদ ইসমাইল। বিনা হেলমেটে মোটরবাইক চালিয়ে সিউড়ির লম্বোদরপুরে ফেরার পথে এক আরোহীর পথ আটকালে ওই এনভিএফ কর্মীকে এলোপাথারি মেরে পালান মোটরবাইক চালক। ২০১৫ সালের জানুয়ারি ও ডিসেম্বরে শহরে আক্রান্ত হয়েছিলেন দু’জন এনভিএফ কর্মী। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে হেনস্থা করা হয়েছিল ট্রাফিকের এক এএসআই-কে। প্রতিটি ঘটনায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ। গ্রেফতারও করা হয়েছে অভিযুক্তদের। কিন্তু ট্রাফিককর্মীদের হেনস্থা করার ঘটনায় ছেদ পড়েনি।

তবে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, মঙ্গলবার কোনও পুলিশকেই হেনস্থা করা হয়নি। আর শহরবাসীদের একাংশ বলছেন— যান নিয়ন্ত্রণের নামে কখনও যা করা হয়, তা সব সময় মেনে নেওয়া যায় না। পিছন থেকে মোটরবাইক ধরে টানা, চাবি কেড়ে নেওয়া, প্রকাশ্যে জামার কলার ধরে টানা। এ সবে কার্যত পুলিশের ‘দাদাগিরি’ই সামনে আসে। নগর-রক্ষকদের এটা নিয়েও ভাবতে হবে।

Harassment Traffic Police Traffic OC Lawyers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy