Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুই বীরহোড় বোন মাধ্যমিকে

মানভূম বীরহোড় অ্যাকাডেমির সদস্য চুনু শিকারি জানান, বীরহোড়দের জীবন ও জীবিকা জঙ্গলকে ঘিরেই। প্রথাগত শিক্ষার চল এখনও তাঁদের মধ্যে খুব বেশি নেই। তাঁর দাবি, এত দিন বীরহোড়দের মধ্যে দু’জন মাধ্যমিকে বসেছিল। দু’জনেই ছাত্র। এই প্রথম দুই ছাত্রী মাধ্যমিক দিচ্ছে।

পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে জানকী শিকারি ও রতন শিকারি। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে জানকী শিকারি ও রতন শিকারি। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫৩
Share: Save:

বীরহোড় উপজাতির দুই মেয়ের হাত ধরে নারীশিক্ষার আলো পৌঁছল বাঘমুণ্ডির ভূপতিপল্লিতে।

দুই বোন— রথনি শিকারি ও জানকী শিকারি। বাঘমুণ্ডির পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী এ বারে মাধ্যমিকে বসেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, বীরহোড়দের মধ্যে ওই দুই বোন প্রথম মাধ্যমিকের গণ্ডী ছুঁল। এমনকী গ্রামের মেয়েদের মধ্যেও।

মানভূম বীরহোড় অ্যাকাডেমির সদস্য চুনু শিকারি জানান, বীরহোড়দের জীবন ও জীবিকা জঙ্গলকে ঘিরেই। প্রথাগত শিক্ষার চল এখনও তাঁদের মধ্যে খুব বেশি নেই। তাঁর দাবি, এত দিন বীরহোড়দের মধ্যে দু’জন মাধ্যমিকে বসেছিল। দু’জনেই ছাত্র। এই প্রথম দুই ছাত্রী মাধ্যমিক দিচ্ছে।

বীরহোড়রা মূলত বসবাস করেন ঝাড়খণ্ডে। শিকার ও সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে দিন কাটে। বলরামপুর আর বাঘমুণ্ডি মিলিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ের আশপাশে চার-পাঁচটি গ্রামেও বেশ কিছু বীরহোড় পরিবার রয়েছে। তেমনই একটি হল বাঘমুণ্ডির ভূপতিপল্লি।

গ্রামের স্কুলে পড়া যায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ভূপতিপল্লির ভোলানাথ শিকারি ও তুরি শিকারির দুই মেয়েরই পাখির চোখ ছিল মাধ্যমিক। অষ্টম শ্রেণির পরে তাই রথনি আর জানকী ভর্তি হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের ধসকার রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক স্কুলে। যাওয়ার পথে পড়ে জঙ্গল। স্কুলের হস্টেলে থেকে শুরু হয় পড়াশোনা। বাবা প্রথাগত পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। মা নাম-সই করতে পারেন। জানকী বলে, ‘‘বাবার তো সারাটা দিন জঙ্গলেই কাটে। ওখানেই আমাদের জীবিকা।’’

চুনু শিকারি বলেন, ‘‘গ্রামে নারী শিক্ষার আলো এল দুই ছাত্রীর হাত ধরে। ওরা অন্যদেরও উৎসাহিত করবে।’’ রথনি আর জানকীর স্কুলের শিক্ষক সৌরভ দত্ত এবং পরিচালন সমিতির সদস্য জলধর কর্মকারও বলছেন, ‘‘এটা অনেক বড় ব্যাপার। আশা করছি ওরা ভাল ফলও করবে।’’

পরীক্ষা বলে মেয়েরা অনেক দিন বাড়ি যেতে পারেনি। বাবা না আসতে পারলেও পরীক্ষার আগের দিন মা হস্টেলে এসেছিলেন। জানকী আর রথনি বলে, ‘‘মা বলেছে ভাল করে পরীক্ষা দিতে।’’

সোমবার বলরামপুর লালিমতী গার্লস হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে দু’জনেই জানিয়েছে, পরীক্ষা ভাল হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE