Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলে ফের ভাঙন, কংগ্রেসে তারকেশ

পুরভোটের মুখে পুরুলিয়ায় শাসকদলে ভাঙন চলছেই। দলের টিকিট না পেয়ে এ বার তৃণমূল ছেড়ে দিলেন পুরুলিয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়! পুরভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার সময় থেকেই শহরে জল্পনা ছিল, এ বার তৃণমূলের প্রথম সারির কাউন্সিলরদের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন। রবিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যায়, সেখানে তারকেশবাবুর নাম নেই। ওই দিন সন্ধ্যাতেই কংগ্রেসে চলে যান তিনি।

পুরুলিয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান। —নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

পুরভোটের মুখে পুরুলিয়ায় শাসকদলে ভাঙন চলছেই। দলের টিকিট না পেয়ে এ বার তৃণমূল ছেড়ে দিলেন পুরুলিয়ার বিদায়ী পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়!

পুরভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার সময় থেকেই শহরে জল্পনা ছিল, এ বার তৃণমূলের প্রথম সারির কাউন্সিলরদের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন। রবিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যায়, সেখানে তারকেশবাবুর নাম নেই। ওই দিন সন্ধ্যাতেই কংগ্রেসে চলে যান তিনি। সোমবার সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। তারকেশবাবু অবশ্য একা নন। এর আগে টিকিট পাওয়া নিয়েই দলের সঙ্গে মতান্তরের জেরে শনিবার কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাই, পুরুলিয়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।

জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “তারকেশবাবু কংগ্রেসে ফেরায় আমাদের সংগঠন আরও মজবুত হল। আগেও তিনি অনেকবার কংগ্রেস থেকে জিতেছিলেন।” কিন্তু বিদায়ী বোর্ডের কাজে বিরক্ত হয়েই তো তৃণমূল তাঁকে এ বার প্রার্থী করেনি। তাহলে কেন নিলেন? রথীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, “তৃণমূল ওদের অনেক কাউন্সিলরকেই টিকিট দিল। শুধু তারকেশবাবুকেই ভিলেন করা হল। এই তো ওদের দলের সংস্কৃতি!”

তৃণমূল সূত্রের খবর, পুরুলিয়া পুরসভার কাজকর্ম পরিচালনা নিয়ে দলের সঙ্গে পুরপ্রধান-সহ দলের একাধিক কাউন্সিলরের মতান্তর শুরু হয়। দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ ছিল, পুরপ্রধান-সহ কয়েক জন কাউন্সিলর মিলে নিজের ইচ্ছেয় পুরসভা চালাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে অন্য তৃণমূল কাউন্সিলর এবং জেলা তৃণমূলেও ক্ষোভ ছড়াচ্ছিল। ভোটে মুখ বদলানোর পাশাপাশি (দল এ বার পুরপ্রধান পদে মুখ করেছে পুরুলিয়ার বিধায়ক কেপি সিংহদেওকে) বর্তমান পুরপ্রধানকে ছেঁটে ফেলার যে ভাবনা শুরু করেছে, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। যদিও পুরপ্রধান তারকেশবাবু প্রথম থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। টিকিট অনিশ্চিত জেনে কয়েক জন কাউন্সিলর এক কংগ্রেস নেতার সঙ্গে গোপনে বৈঠকও করেন।

সোমবার তারকেশবাবু বলেন, “দল আমাকে প্রার্থী করেনি। আমি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি।” পুরসভা পরিচালনা সম্পর্কে দলের সঙ্গে মতান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এত দিন তো সেকথা প্রকাশ্যে আসেনি বা আমাকে জানানো হয়নি। তা ছাড়া পুরসভা আমার একার সিদ্ধান্তে চলত না। সেখানে আরও অনেকের মতামত থাকত। চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল, উপপুরপ্রধান-সহ সকলেই ছিলেন। তাঁদেরও তো অনেকে টিকিট পেয়েছেন। তা ছাড়া, প্রার্থী নিয়ে আমার সঙ্গে দল কোনও আলোচনাই করেনি।” তবু অভিযোগের তির কেন তাঁর দিকে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না বলেই দাবি তারকেশবাবুর। সেই উত্তর পেতে এ বারও ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই তিনি লড়বেন বলে জানিয়েছেন। পুরুলিয়া পুরসভার মোট ছ’বারের কাউন্সিলর তারকেশবাবু এই ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই অতীতে চার বার বিজয়ী হয়েছেন। তবে কংগ্রেসের টিকিটে লড়বেন, নাকি নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন, তা খোলসা করনেনি বিদায়ী পুরপ্রধান।

তারকেশবাবুর দল বদল নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি কেপি সিংহদেও। তাঁর কথায়, “আজ যাঁরা দলের বিরোধিতায় যাচ্ছেন, তাঁরা গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তখন তো কাজ করার সুযোগ ছিল। এ নিয়ে আর কী বলব।” জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “পুরসভা পরিচালনা নিয়ে নানা মহল থেকে অভিযোগ এসেছিল দলের কাছে। নেতৃত্বকে সেই সব অভিযোগকে গুরুত্ব দিতেই হয়। এ সব বিষয়গুলিকে সামনে রেখে বর্তমান পুরবোর্ডের কয়েক জনকে প্রার্থী করা হয়নি। তার মধ্যে পুরপ্রধানও রয়েছেন।”

দলবদল অবশ্য অব্যাহত রয়েছে মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলাকালীনও। দিনকয়েক আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন বিদায়ী কাউন্সিলর সৈয়দ সাকিল আহমেদ। কংগ্রেসের চার বারের এই কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার সময় মন্তব্য করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতাদর্শ মেনে তিনি তৃণমূলে যাচ্ছেন। এ বার ফের তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরেছেন তিনি। আর এ বার দলবদলের বিষয়ে তাঁর যুক্তি, “তৃণমূলে গিয়ে দেখলাম, কাজ করার পরিবেশ নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব রয়েছে। তাই ফের কংগ্রেসেই ফিরলাম।” কংগ্রেসেরই একাংশ অবশ্য বলছে, এটা সুবিধাবাদী রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়। তৃণমূলে টিকিট না পেয়ে তিনি কংগ্রেসে ফিরলেন। এ কথা মানতে চাননি সৈয়দ সাকিল আহমেদ। তাঁর কথায়, “টিকিট না পেয়ে ফিরেছি, সেটা সত্যি নয়। আমি বরাবর কংগ্রেসেই ছিলাম। ২০০০ সালে নিজে লড়িনি, দলের প্রার্থীকে জিতিয়েছিলাম।” এ বারও অবশ্য তিনি লড়বেন। তাঁর পছন্দ ২২ নম্বর ওয়ার্ড। যেখানে তৃণমূলের প্রার্থী বিদায়ী উপপুরপ্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE