Advertisement
E-Paper

মুখেভাতের চার দিনেই সমস্ত শেষ

অসুস্থ হিরন্ময়ের চিকিৎসা করাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরবাইকে রঘুনাথপুরে যাচ্ছিলেন বংশীধারী। কিন্তু তা আর হল না।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৮
উদ্ধার: ক্রেন দিয়ে তোলা হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাক। শুক্রবার বিকেলে রঘুনাথপুর থানার শালঞ্চি চেকড্যামের সেতুর কাছে। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার: ক্রেন দিয়ে তোলা হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাক। শুক্রবার বিকেলে রঘুনাথপুর থানার শালঞ্চি চেকড্যামের সেতুর কাছে। নিজস্ব চিত্র

চার দিন আগেই মুখেভাতের অনুষ্ঠান পেরিয়েছে একরত্তি হিরন্ময়ের। শুক্রবার সকালেও বাড়িতে ছিল আত্মীয়দের ভিড়। তারই মধ্যে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া থানার আস্তা গ্রামে খবর আসে— আধ ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হওয়া হিরন্ময় ও তার বাবা-মা তিন জনেই ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে মারা গিয়েছে। বাড়ির খুশির আমেজ এক লহমায় মুছে যায় শুক্রবার সকালে। শোকাহত গোটা গ্রাম। তাঁদের অনেকে ছুটে যান দুর্ঘটনাস্থলে।

অসুস্থ হিরন্ময়ের চিকিৎসা করাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরবাইকে রঘুনাথপুরে যাচ্ছিলেন বংশীধারী। কিন্তু তা আর হল না। রঘুনাথপুর থানার শালঞ্চি গ্রামের কাছে, ঝাড়ুখামার মোড় থেকে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায় বেসামাল হয়ে কয়লাবাহী একটি ট্রাক তাঁদের উপরে উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই তিন জনের মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে সেখানে আসেন বংশীধারীর কাকা দিলীপকুমার মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘কোথা থেকে কী ঘটে গেল! ট্রাকচালকের সামান্য ভুলে আমাদের পরিবারের তিনটে প্রাণ এক সাথে চলে গেল।” জা ঝর্নার সঙ্গে সেখানে এসেছিলেন বংশীধারীর মা তিলকাদেবী। এক সঙ্গে ছেলে, নাতি, বৌমা তিন জনের মৃত্যুর সংবাদ শুনে শোকে তিনি কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন।

বংশীধারী ও তাঁর ছেলের দেহ ট্রাকের নীচে চাপা পড়েছিল। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল না। ট্রাকের চাকার নীচে বেরিয়েছিল মহুয়ার পা। সে দিকে তাকিয়ে নাগাড়ে কেঁদে চলেছিলেন তিনি। ঝর্নাদেবী তাঁকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন বটে। কিন্তু সামলানো যাচ্ছিল না দু’জনকেই।

পেট্রোলপাম্পের কর্মী বংশীধারীর বোন রেখা মণ্ডলের সদ্য সন্তান প্রসব হয়েছে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। তাঁকে দেখতে এবং সেখানে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করাতে সকাল ন’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু উল্টো দিক থেকে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা দিতে যাওয়া ট্রাক তাঁদের উপরে উল্টে পড়ে। বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ যখন ক্রেন দিয়ে ট্রাকটিকে সরিয়ে দেহগুলি উদ্ধার করা হয়, তখন একরত্তি হিরন্ময়ের দেহ দেখে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনেরও চোখের জল বাঁধ মানেনি।

ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর সামনেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পেট্রোল পাম্পের কর্মী ছিলেন বংশীধারী। বছর তিনেক আগে বিয়ে হয় হুড়া থানার দেশড়া গ্রামের মহুয়ার সঙ্গে। হিরন্ময় ওই দম্পতির একটি মাত্র সন্তান। সদ্য ছ’মাসে পা দিয়েছে। গত মাসের শেষের দিকে অন্নপ্রাশন হয় তার। কিন্তু তখন মামার বাড়িতে এক জনের মৃত্যু হওয়ায় মূল অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান হয় সোমবার।

বংশীধারীর কাকা দিলীপকুমার মণ্ডল জানান, ছেলে, নাতি, বৌমার মৃত্যুর খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর দাদা শঙ্করচন্দ্র মণ্ডল। নাতিটা দাদুর বড় ন্যাওটা ছিল। শঙ্করবাবু তাই কিছুতেই শোকের ধাক্কা সামলাতে পারছেন না। তিনি ঘটনাস্থলে আসতেও পারেননি। বংশীধারীর মা তিলকাদেবী কাঁদতে কাঁদতে বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘ওরা বলেছিল বাড়িতে ফিরে দুপুরে খাবে। আর কেউই কখনও ফিরবে না।’’

ভাইপোর অন্নপ্রাশন উপলক্ষে পুরুলিয়া থেকে আস্তা গ্রামে এসেছিলেন বংশীধারীর দাদা গিরিধারী মণ্ডল। তিনিও ছুটে এসেছিলেন শালঞ্চিতে। মা, কাকিমাকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন বটে। কিন্তু নিজেকেই ধরে রাখতে পারছিলেন না।

দিলীপবাবুই শুধু বলার অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘হিরন্ময়কে নিয়ে সবাই আনন্দে মেতেছিল। কে জানত এত বড় শোক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে?’’

Accident Death raghunathpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy