ধোপদুরস্ত দুই যুবক বাড়ি বয়ে এসেছিল। জানিয়েছিল, তাদের কাছে আছে একটা পাউডার, যা দিয়ে মাজলে নিমেষে নতুনের মতো ঝকঝকে হয়ে যায় পুরনো কাঁসা-পিতলের বাসন। সেই পাউডারের কেরামতিতে মুগ্ধ গৃহিনীকে কিছু ক্ষণের মধ্যেই বেকুব বানিয়ে দু’খানি সোনার দুল নিয়ে চম্পট দিল তারা। কপাল চাপড়ে কাশীপুরের রথতলা এলাকার বাসিন্দা ওই বধূ এখন বলছেন, ‘‘একেই বলে সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরনো।’’
শনিবার বেলা তখন ১০টা। বাড়ির কর্তা কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন। এমন সময়ে বেজে উঠল ডোরবেল। হাতের কাজ ফেলে দরজা খুলতে একটু দেরি হয়েছে গৃহিনী শিউলি গোস্বামীর। এসে দেখেন দুই যুবক দাঁড় করিয়ে রাখা মোটরবাইকে উঠতে যাচ্ছে। ডোরবেল বাজালেও, কথা বলার জন্য যেন আদৌ মরিয়া নন তাঁরা। দরজা খুলতে দেখে ফিরে এলেন দু’জনে। দাবি করলেন, একটা সংস্থা থেকে আসছেন। তামা, কাঁসা, পিতলের বাসনকোসন নিমেষে ঝকঝকে ফেলে এমন একটা পাউডার বানিয়েছে ওই সংস্থা। তাঁরা সেটারই প্রচার করেছেন। ঝরঝরে বাংলা, মাঝে মধ্যে দু’-একটা হিন্দি শব্দের মিশেল। কথা শুনে শিউলিদেবীর মনেই হয়নি ওই দুই যুবকের অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
কথাবার্তার মাঝেই তুলসীতলা থেকে একটা তামার ঘটি নিয়ে মেজে ঝকঝকে করে দিলেন এক যুবক। শিউলীদেবী বলেন, ‘‘দেখেশুনে আমি পাউডারটা কিনতে চাইলাম। কিন্তু ওরা জানাল, সেটা বিক্রি নেই। পরে দোকানে পাওয়া যাবে। এখন শুধু বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছে।’’ সেলসম্যানের পরিচয় আরও জোরদার করতে একটা কাগজে শিউলিদেবীকে দিয়ে নাম, ফোন নম্বরও লিখিয়ে নেয় তাঁরা। সেই কাগজে আরও অনেক সই আর ফোন নম্বর ছিল। তার পরেই ওই দুই যুবক দাবি করেন, পাউডারটি সোনা-রুপোর গয়নাও ঝকঝকে করে দিতে পারে। শিউলিদেবীর দাবি, তাঁদের ফাঁদে পা দিয়ে তিনি ঘরের ভিতর থেকে দু’টি সোনার দুল এনে হাতে তুলে দেন। দুই যুবক গয়না মাজতে বসেন দাওয়ায়।
শিউলিদেবীর দাবি, কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে। থাকতে না পেরে ঘরের ভিতরে চলে যান। বোনকে বলেন, মাজা হলে দুল দু’টো নিয়ে আসতে। কিন্তু তক্ষুণি দাওয়ায় গিয়ে শিউলিদেবীর বোন দেখেন, কেউ নেই!
টনক নড়তে সবাই যখন বাইরে বেরিয়ে খোঁজ শুরু করেছেন, পড়শিদের থেকে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়ি থেকে ধীরে সুস্থে বেরিয়ে মোটরবাইক নিয়ে চলে গিয়েছেন ওই দুই যুবক। খবর যায় পুলিশের কাছে। তদন্তও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু ওই দুই ভুয়ো সেলসম্যানের টিকির দেখা এখনও মেলেনি। বাড়ির কর্তা দেবাশিস গোস্বামী বলছেন, ‘‘যে পাউডারটা বেচতে এসেছিল হয়তো সেটাতেই কোনও কেরামতি ছিল। তাতেই ওঁর মাথা ঝিমঝিম করেছিল।’’