Advertisement
০৪ মে ২০২৪

থরে থরে কেক, কোথায় বড়দিনের ক্রেতা

সান্তা এলো। কিন্তু এ বার হাসি ফোটাতে পারল না বড়দিনকে কেন্দ্র করে বাড়তি রোজকারের আসায় থাকা লোকজনকে। কেকের বিক্রি যেমন জমেনি, তেমনই সান্তার টুপি, মুখোশ থেকে উপহারেও সেই জমজমাটি বেচাকেনা জমল না।

পসরা সাজিয়ে। বাঁকুড়ায় শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পসরা সাজিয়ে। বাঁকুড়ায় শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

সান্তা এলো। কিন্তু এ বার হাসি ফোটাতে পারল না বড়দিনকে কেন্দ্র করে বাড়তি রোজকারের আসায় থাকা লোকজনকে। কেকের বিক্রি যেমন জমেনি, তেমনই সান্তার টুপি, মুখোশ থেকে উপহারেও সেই জমজমাটি বেচাকেনা জমল না। বড়দিনের আগের দিন শনিবার বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে ক্রেতাদের ভিড়ের সেই চেনা ছবি চোখে পড়ল না। অনেককে দোকানে সারি সারি কেকের প্যাকেট সাজিয়ে বসে থাকতে দেখে গেল। খদ্দের এলেও ক্যাশবাক্স তাতে বিশেষ ভরল না। অনেকে অবশ্য এর পিছনে নোট-বাতিলের ছায়াই দেখছেন।

পুরুলিয়ার পোস্ট অফিস মোড়ের অন্যতম প্রাচীন কেকের দোকানদার সমরবরণ দাস আক্ষেপ করেন, ‘‘অন্যবার ২২ ডিসেম্বরের পর থেকেই বাজার উঠতে শুরু করে। কিন্তু এ বারে বাজারে ঝিমোচ্ছে। এ রকম অবস্থা শেষ কবে দেখেছি, মনে পড়ছে না। বাজার আঁচ করে, এ বার কেকও কম তুলেছি।’’ পুরুলিয়া শহর ও আশপাশে নামী সংস্থার কেক সরবরাহ করেন প্রদীপ চৌরাশিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘বাজার মন্দা বলে অর্ডারও অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।’’ পুরুলিয়া শহরের একটি বেকারির মালিক সোমনাথ দত্ত অর্ধেকেরও কম মালের অর্ডার তিনি পেয়েছেন। তাঁর অনুমান, ‘‘নোট-বাতিলের চক্করেই এ বার বাজারের এই হাল।’’

বাঁকুড়াতেও বড়দিনের বাজার টিমটিম করছে। সকাল থেকে টেবিলে প্যাকেট-প্যাকেট কেক সাজিয়ে বাঁকুড়ার রাস্তার পাশে বসে রয়েছেন দোকানিরা। কিন্তু ক্রেতার দেখা কই? বড়কালীতলার একটি বেকারির মালিক মুসলেম খানের কথায়, “এত খারাপ বাজার কখনও দেখিনি। কিন্তু এ বার কেক বানানোর বরাত প্রায় নেই বললেই চলে।” তিনি জানাচ্ছেন, গত বছর দেড়লক্ষ টাকারও বেশি ব্যবসা হয়েছিল বড়দিন উপলক্ষে। এ বার ব্যবসা হয়েছে মেরেকেটে ৩০ হাজার। তিনি জানাচ্ছেন, নোট বাতিলের পর থেকেই ব্যবসার হাল নিম্নমুখী।

বাঁকুড়া শহরের মিনিমার্কেটের কেক বিক্রেতা কিরণ গড়াই এ বার মাত্র ২০ হাজার টাকার কেক তুলেছেন। তিনি জানান, সাড়ে ৫ হাজার টাকার বেশি মাল বিক্রি করতে পারেননি। মিনিমার্কেটেরই আরেক ব্যবসাদার নীলমণি দে প্রায় ৪০ হাজার টাকার কেক তুলেছেন। শনিবার বিকেল পর্যন্ত মাত্র ২০ হাজার টাকার মাল বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি। তাঁদের কথায়, “ব্যবসা হয় বড়দিনের আগের দিনেই। তারপরই আর চাহিদা থাকে না। দিনভর দোকানে মাছি তাড়ালাম।”

মারখাচ্ছে বড়দিনের সাজ পোশাকের ব্যবসাও। বাঁকুড়া শহরের ইঁদারাগড়া এলাকার ব্যবসায়ী রাজু আঁশ তাঁর দোকানে বড়দিনের টুপি, মুখোশ, সান্টাক্লজ পোশাক, বেলুন, ক্রিসমাস ট্রি-র পসরা সাজিয়ে বসেছেন। অথচ ক্রেতা নেই। রাজুবাবু বলেন, “৩০ হাজার টাকার মাল তুলে ১০ হাজার টাকারও বিক্রি হয়নি। মাথায় হাত পড়েছে আমাদের মত ব্যবসায়ীদের।”

বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ের সদর শহর হিসেবে আদ্রা রেলশহর গড়ে ওঠার পর থেকে এখানে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা বাস করতেন। সেই সূত্রে এখানে বেশ কয়েকটি গির্জাও রয়েছে। কিন্তু কেক বিক্রির পাশাপাশি বড়দিনের সেই কাটার জৌলুস এখানেও হারিয়েছে। এখানকার মহম্মদ সুলেমানের আশা, ‘‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কেক নিয়ে বসে থাকব। সান্তাক্লজ নিশ্চয় আমাদের অখুশি করবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Cake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE