Advertisement
E-Paper

পুরনো ঠিকানা পাল্টাল তারাশঙ্করের ‘হাটতলা’

থলি হাতে ঘুরে ঘুরে সব্জি কিনেছেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানেই কবি কমলাকান্ত পাঠককে দেখা গিয়েছে বিক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করতে। এমনই হাজারও স্মৃতিকে পিছনে ফেলে চলে গেল হাটতলা। স্মৃতিভারে কারও মনখারাপ হল। কেউবা স্বাগত জানালেন বদলকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫১

থলি হাতে ঘুরে ঘুরে সব্জি কিনেছেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানেই কবি কমলাকান্ত পাঠককে দেখা গিয়েছে বিক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করতে। এমনই হাজারও স্মৃতিকে পিছনে ফেলে চলে গেল হাটতলা। স্মৃতিভারে কারও মনখারাপ হল। কেউবা স্বাগত জানালেন বদলকে। এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই সোমবার বদলে গেল লাভপুরের সব্জিহাটের ১৫০ বছরের পুরনো ঠিকানা। স্থানীয় ঝাঁ চকচকে কিসান মান্ডিই হল তার নয়া ঠিকানা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫০ বছর আগে লাভপুরের রথতলা পাড়ার একটি খোলা জায়গায় সোম ও শুক্রবার সব্জিহাট বসান স্থানীয় জমিদার যাদবলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই হাটটি ছিল যাদবলাল ট্রাস্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন। পরে নির্ধারিত জায়গা ছাড়িয়ে রাস্তার দু’দিকেও হাট বসতে শুরু করে। ক্রমে জায়গাটি ‘হাটতলা’ হিসাবেই পরিচিত লাভ করে। দোকানপাটের সাইনবোর্ড তো বটেই ডাকবিভাগের চিঠির ঠিকানাতেও হাটতলা স্বীকৃতি লাভ করে। সেই হাটই এ বার নিজের পরিচিতিটুকু রেখে প্রায় আড়াইশো মিটার দূরের কিসান মান্ডিতে উঠে গেল।

ওই ঠিকানা বদল নিয়ে এ দিন নানা মহলে নানা প্রতিক্রিয়া শোনা গেল। কার্যত মুষড়ে পড়েছেন হাট সংলগ্ন এলাকার স্থায়ী ব্যবসায়ীরা। খাবারের দোকানদার সঞ্জিত রুজ, কাপড় ব্যবসায়ী আশিস গুঁইরা বলছেন, ‘‘মূলত হাটবারের দু’দিনের বেচাকেনার উপর নির্ভর করে এত দিন আমাদের দোকান চলত। সেই হাটই সরে যাওয়ায় এর পর তো আমাদের মাছি তাড়াতে হবে।’’ সমস্যা ভ্যান চালকদেরও। রমেশ হাজরা, গণেশ দাসরা জানান, ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভ্যান চালকদেরও এলাকা নির্ধারিত রয়েছে। এর পর আর তাঁরা ওই এলাকায় হাটের মালপত্র বইতে পারবেন না। স্থান পরিবর্তন নিয়ে সংশয় রয়েছেন সব্জি ব্যবসায়ী মন্টু শেখ, ফল বিক্রেতা হোসেন মল্লিকরা। তাঁরা বলেন, ‘‘এখানে বিক্রিবাটা কেমন হবে কে জানে। খদ্দেররা এত দূরে হাট করতে আসবেন, না স্থানীয় স্থায়ী দোকান থেকেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নেবেন, তা কয়েক দিন গেলেই বোঝা যাবে।’’

তবে, হাট সরে যাওয়ায় খুশিও হয়েছেন কেউ কেউ। স্থানীয় বাসিন্দা তন্ময় চক্রবর্তী, শ্যামলী দাসদের কথায়, ‘‘আমাদের হয়তো কিছুটা দূরে যেতে হবে। কিন্তু হাটবারের দিনে রাস্তার যানজটে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। তা ছাড়া হাটতলায় কোনও শেড ছিল না। রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট হতো। কিসান মান্ডিতে সেই সমস্যা হবে না।’’

হাট নিয়ে আজও নস্টালজিক হয়ে পড়েন ‘যাদবলাল দেবোত্তর ট্রাস্ট’ তথা হাট মালিকদের অন্যতম সদস্য সুব্রতনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্করের ভ্রাতুষ্পুত্র বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রয়োজনের তাগিদে স্থান বদল হতেই পারে। কিন্তু ওই হাটের সঙ্গে বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি কমলাকান্ত পাঠকেরাও ওই হাটে ঝোলা হাতে সব্জি কিনেছেন। সেই স্মৃতিটাই হারিয়ে যাবে। আর হাটতলার আগে এক দিন পুরনো শব্দটা যোগ হয়ে যাবে।’’

এ দিকে, লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস জানিয়েছেন, উন্নতমানের পরিষেবা দিতে এবং ওই এলাকার যানজট এড়াতেই সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাটটি কিসান মান্ডিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিসান মান্ডিতে দু’টি শেড-সহ ১৮টি স্টল রয়েছে। ব্যবসায়ীরা স্টলগুলিতে ন্যূনতম এবং শেডে বিনা ভাড়ায় ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন। বিক্রেতাদের পাশাপাশি ক্রেতাদেরও সুবিধা হবে।

vegetable market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy