Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মাশরুম চাষ করেই ভাগ্য বদল লক্ষ্মী-অণিমাদের

লাভপুরের জামনা মহাসঙ্ঘের আওতাধীন বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী আর্থিক স্বনির্ভরতার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে লাভপুরের জামনা পঞ্চায়েতের হরানন্দপুর, রামকৃষ্ণপুর, জামনা, ধ্রুববাটি-সহ আট-দশটি গ্রামের মহিলারা গড়ে তোলেন ‘আমরা ক’জন মাশরুম-স্পন উৎপাদক সমিতি’। সেই সমিতিই ঘুরিয়ে দিয়েছে তাঁদের জীবনের পথ। ক’বছরেই ওই সমিতির ২১ জন সদস্যের পরিবারে সমৃদ্ধি ফিরেছে।

সমৃদ্ধি: মাশরুম প্যাকেট করছেন এলাকার মহিলারা। সোমনাথ মুস্তাফি

সমৃদ্ধি: মাশরুম প্যাকেট করছেন এলাকার মহিলারা। সোমনাথ মুস্তাফি

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

বছর সাতেক আগেও পরের দিন কী করে মেয়ের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেবেন, সেই দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যেত সুলতা বাগদির। এখন সুলতার সন্তান ভরা পেটেই স্কুলে যায়। মেয়েকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে তিনি গৃহশিক্ষকও দিয়েছেন। তাঁর মতো লাভপুরের অনেকেরই হেঁশেলের হাল পাল্টে গিয়েছে। আলাদীনের প্রদীপ কিংবা লটারি প্রাপ্তি নয়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই এখন তাঁরা রোজগার করে সংসারে শ্রী ফিরিয়ে এনেছেন।

২০১১ সালের কথা। লাভপুরের জামনা মহাসঙ্ঘের আওতাধীন বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী আর্থিক স্বনির্ভরতার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে লাভপুরের জামনা পঞ্চায়েতের হরানন্দপুর, রামকৃষ্ণপুর, জামনা, ধ্রুববাটি-সহ আট-দশটি গ্রামের মহিলারা গড়ে তোলেন ‘আমরা ক’জন মাশরুম-স্পন উৎপাদক সমিতি’। সেই সমিতিই ঘুরিয়ে দিয়েছে তাঁদের জীবনের পথ। ক’বছরেই ওই সমিতির ২১ জন সদস্যের পরিবারে সমৃদ্ধি ফিরেছে।

পশ্চিমবঙ্গ সামগ্রিক উন্নয়ন বিভাগ, ব্লক কৃষি দফতর, পঞ্চায়েত, নিত্য সঙ্ঘ এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় জামনায় একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রায় ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে মাশরুম তৈরির ব্যবসা শুরু করেন তাঁরা। বাজারে তো বটেই জেলার আরও ন’টি ব্লকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে মাশরুমের ‘স্পন’ বা বীজ সরবরাহ করছেন তাঁরা।

সমিতির সদস্যেরা জানাচ্ছেন, ১০০ গ্রামের ‘স্পন’ তৈরি করতে গম, ভুট্টা, ধান, রাসায়নিক, তুলো, রাবার, প্যাকেট-সহ খরচ পড়ে প্রায় ছ’টাকা। ২০০ গ্রামের ক্ষেত্রে খরচ হয় ন’টাকা। ১০/১৫ দিনের মাথায় ‘স্পন’ তৈরি হয়ে যায়। তখন ১০০ গ্রামের স্পন বিক্রি হয় ১৫ টাকায়, ২০০ গ্রামের স্পন ২৫ টাকায়। আবার একটি ২০০ গ্রামের ‘স্পন’ থেকে ২২ দিনের মাথায় অতিরিক্ত কিছু টাকা খরচ করে প্রায় এক কেজি পূর্ণাঙ্গ মাশরুম মেলে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০০ টাকা। ১৮/২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাসরুম চাষ ভাল হয়।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলেও মূলত তিন মাস স্বাভাবিক তাপমাত্রায় চাষ করেন ওই সমিতির সদস্যেরা। সেই সময়ের মধ্যেই প্রায় ১৭ হাজার ‘স্পন’-সহ পূর্ণাঙ্গ মাশরুম উৎপাদন হয়। লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ জরুরি প্রয়োজনের জন্য মহাসঙ্ঘের মাধ্যমে নিজেদের ব্যাঙ্কের পাসবইয়ে জমা রাখেন তাঁরা। সব মিলিয়ে ওই সদস্যদের এখন বছরে প্রায় ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। আর তাঁদের পাসবইয়ে জমা পড়েছে চার লক্ষাধিক টাকা।

স্বভাবতই স্বামীর রোজগারের সঙ্গে স্ত্রীদের আয় জমা পড়ে সমৃদ্ধি ফিরেছে ওই সব পরিবারে। রামকৃষ্ণপুরের ছবি ঘোষ এক চোখে দেখতে পান না। মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী গঙ্গাধর ঘোষের দিন মজুরিই ছিল একমাত্র সম্বল। একই অবস্থা হরানন্দপুরের সুনীতা বাগদিরও। স্বামী স্বপন বাগদির দিনমজুরির আয়েই চলত তাঁর। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া মেয়ের পড়াশোনার-খরচ সহ চার সদ্যস্যের সংসার। তাঁরা বলেন, ‘‘বছর সাতেক আগেও আমরা ছেলেমেয়ের পড়াশোনার কথা ভাবতে পারতাম না। পরের দিন কী করে ছেলেমেয়েদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেবেন, সেই চিন্তায় তাঁদের রাতে ঘুম আসত না। এখন আর সেই দুশ্চিন্তা নেই।’’

ওই মহাসঙ্ঘের পরিচালক বিশ্বজিৎ পাল এবং দলনেত্রী অনিমা দাস জানান, দারিদ্রের চাপে ওই মহিলারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। জীবনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু মাশরুম চাষ করে তাঁরা এখন অনেক কিছু করার কথা ভাবতে পারছেন।’’ বিডিও (লাভপুর) জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই মহিলারা নিজেদের উদ্যোমে পরিবারের সমৃদ্ধি ফিরিয়েছেন। ব্লক প্রশাসন ওঁদের পাশে আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE