জয়ের-আনন্দে: পুরুলিয়া শহরে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের আবির খেলা। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
দোল আসতে এখনও কয়েক দিন বাকি। তার আগেই রং খেলায় মাতল রাঢ়বঙ্গের দু’জেলার ছ’টি শহর। তার মধ্যে পাঁচ শহরেই উড়ল ঘাসফুলের পতাকা। একটিতে হাত-ঘাসফুল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আপাতত ত্রিশঙ্কু ফল। গত তিন বছরে গেরুয়া শিবিরের যে উত্থান হয়েছিল, পুরভোটে তা থমকে গেল।
২০১৯-এর লোকসভা ও ২০২১-এর বিধানসভা— দু’টি ভোটেই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার ছ’টি পুরসভায় পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুরে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। ঝালদায় লোকসভা ভোটে বিজেপির থেকে এবং বিধানসভা ভোটে আজসু-র থেকে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। এ বার ঝালদা ছাড়া, সব ক’টি পুরসভাতেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল রাজ্যের শাসক দল। বছর ঘুরতেই সব ক’টি শহরে গেরুয়ার বদলে উড়ল সবুজ আবির।
গত কয়েক বছরে বিজেপির ভাল ফল ছাড়াও, এ বার ‘নির্দল-কাঁটা’ নিয়ে চিন্তা ছিল তৃণমূলের। অনেক নেতা-কর্মী দলে টিকিট না পেয়ে অন্য দলেও গিয়েছিলেন। পুরুলিয়া শহরে গত বোর্ডের পুরপ্রধান শামিমদাদ খান-সহ কয়েক জন কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। পুরুলিয়া শহরে ২০১৫ সালের পর থেকেই সাফল্য নেই তৃণমূলের। তবে চাকা এ বার ঘুরবে বলে দাবি করেছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। ঝালদায় ভোটের প্রচার-পর্ব চলাকালীনও এক বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপি যে বিশেষ দাগ কাটতে পারবে না, এ থেকেই তার আন্দাজ মিলেছিল বলে দাবি তৃণমূল নেতাদের। তবে ঝালদায় তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়েছে কংগ্রেস।
রঘুনাথপুরে আগের ভোটগুলির মতো ‘অন্তর্ঘাত’ হতে পারে, আশঙ্কা করছিলেন তৃণমূলের একাংশ। তাই এ বার রঘুনাথপুরে গিয়ে বারবার বৈঠক করেন দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, এই শহরে জমি হারিয়েছে বিজেপি। বিরোধী পরিসরের অনেকটাই দখল করছে কংগ্রেস। রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাম-কংগ্রেসের ভোটের একাংশ বিজেপির দিকে যাওয়ায়, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে তাদের ভাল ফল হয়েছিল। কিন্তু পুরভোটে তেমনটা হয়নি বলেই অনুমান।
পুরুলিয়ার তিনটি পুরসভার মোট ৪৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৩১টি, কংগ্রেস আটটি এবং বিজেপি পাঁচটি। নির্দলেরা জয়ী হয়েছেন চারটিতে। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘বিজেপি গত দু’টি ভোটে ভাল ফল করলেও, মানুষ তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বিষয়টি ধরে ফেলেছেন। জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সেখানে তৃণমূলের সরকার মানুষের জন্য কী কাজ করছে, তা স্পষ্ট। এই জয় তারই প্রতিফলন।’’ জেলার বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন বলে, মানুষ সঙ্গে থাকছেন।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার যদিও দাবি, এক-একটি ভোটের প্রেক্ষিতে আলাদা। পুরুলিয়ায় গত পুরভোটে তাঁরা কোনও আসন না পেলেও, এ বার তিনটি আসনে জিতেছেন। রঘুনাথপুরে আসন একটি থেকে বেড়ে দু’টি হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল হয়নি। তবে দু’জায়গাতেই আমরা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি। মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।’’
বাঁকুড়ার তিনটি পুরসভাতেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। বিষ্ণুপুর ছাড়া, অন্য দু’টি পুরসভা বাঁকুড়া ও সোনামুখীতে বিজেপি খাতাই খুলতে পারেনি। এ দিন গণনা যত এগিয়েছে, কেন্দ্রের সামনে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিড় হালকা হয়েছে। বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার ও বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা, দু’জনই শহরের যে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সেখানে এ বার প্রথম তিনেও জায়গা পায়নি বিজেপি। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার অভিযোগ করেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের এক বছরের মধ্যে বিজেপির ভোট কী ভাবে তা এত কমতে পারে? বাঁকুড়ার ফলাফল কোনও ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমি বলেছিলাম, পুরনো প্রযুক্তির ইভিএম ব্যবহার করা চলবে না। কারণ, তাতে কারচুপি করা সহজ। সে আশঙ্কাই সত্যি হল!’’ বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের দাবি, “মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারলে, তৃণমূল সব জায়গায় হারত।’’
তবে অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বাঁকুড়া শহর সভাপতি সিন্টু রজক বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক ফল হয়েছে।’’ বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন পুর-প্রশাসক তথা এ বার জয়ী প্রার্থী অর্চিতা বিদের দাবি, “বিষ্ণুপুরের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের সোনামুখী পুরভোটের পর্যবেক্ষক প্রসেনজিৎ দুবে আবার অভিযোগ করেন, “ভোটে জিততে নানা কৌশল অবলম্বন করেছিল বিরোধীরা। মানুষ তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy