E-Paper

সমঝোতায় শান  বাম-কংগ্রেসের

জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, পুরভোটের ঠিক পরেই ঝালদার দলীয় পুরপ্রতিনিধি তপন কান্দুর হত্যার জেরে তৈরি হওয়া সহানুভূতির হাওয়া এখনও কংগ্রেসের পালে রয়েছে।

প্রশান্ত পাল 

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১০:০৯
বদলে গিয়েছে জেলার বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের শরীরী ভাষা।

বদলে গিয়েছে জেলার বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের শরীরী ভাষা।

ঝালদা পুরসভা দখলে আনায় কিছুটা চাঙ্গা ঝিমিয়ে পড়া কংগ্রেস নেতৃত্ব। এর মধ্যে সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলে বদলে গিয়েছে জেলার বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের শরীরী ভাষা। এই আবহেই আসতে চলেছে পঞ্চায়েত ভোট। এখনও বাম বা কংগ্রেস নেতারা ভোটে সরাসরি জোটের কথা না বললেও নিচুতলায় তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী ‘মানুষের জোটের’ তত্ত্ব তুলে কার্যত ভোট-সমঝোতায় সিলমোহর দিয়ে রেখেছেন তাঁরা।

জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, পুরভোটের ঠিক পরেই ঝালদার দলীয় পুরপ্রতিনিধি তপন কান্দুর হত্যার জেরে তৈরি হওয়া সহানুভূতির হাওয়া এখনও কংগ্রেসের পালে রয়েছে। সেই সঙ্গে ঝালদা পুরসভার ক্ষমতা দখল নিয়ে আইনি লড়াইয়ের জয়ে উজ্জীবিত কংগ্রেস কর্মীরা। তপনের ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে তৃণমূলের পরাজয়কে ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন তাঁরা।

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের পরে রাজ্যে বিরোধী পরিসরে বাম-কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় বাম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের মুখে বারবার শোনা যাচ্ছে, তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী ‘মানুষের জোটের’ কথা। সম্প্রতি জেলার সমস্ত এরিয়া কমিটির আহ্বায়কদের নিয়ে কর্মিসভা করে দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র তৃণমূল-বিজেপিকে হারানোর জন্য ‘মানুষের জোটের’ কথা বলেন। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল-বিজেপিকে পরাস্ত করতে মানুষের জোট গড়া বামফ্রন্টের ঘোষিত সিদ্ধান্ত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের জোট গড়তে হবে। সেখানে আমরা কংগ্রেসকে আহ্বান জানাচ্ছি। যেখানে কংগ্রেস ওই দুই দলকে হারাতে পারবে, সেখানে আমাদের সমর্থন থাকবে।’’

রাজনৈতির মহলের পর্যবেক্ষণ, জেলায় বামেদের সক্রিয়তা ইদানীং বেড়েছে। কয়েক মাস পুরুলিয়া রাস ময়দানের সভা করতে এসে ভিড় দেখে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছিলেন, ‘মানুষের ভয় ভাঙছে’। দলের জেলা সম্পাদক প্রদীপের দাবি, ‘‘গত এক বছরে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ অভিযান কর্মসূচি সফল ভাবে সংগঠিত করেছি। কর্মীরা রাস্তায় নেমেছেন।’’

পঞ্চায়েত ভোটে সমঝোতার প্রশ্নে বামেদের বার্তা দিয়ে রেখেছে কংগ্রেসও। বর্যীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের পঞ্চায়েত নির্বাচন (সংগঠন) কমিটির চেয়ারম্যান এবং জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘যেখানে কংগ্রেসের শক্তি রয়েছে, সেখানে কংগ্রেসের প্রতীকে লড়াই হবে। আমরা দেখব, গ্রামের মানুষ কী চাইছেন। এলাকাভেদে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে মানুষ যা চাইবেন, অর্থাৎ নিচুতলার রাজনৈতিক সমীকরণ মোতাবেক মানুষের চাওয়াকে সমর্থন করা হবে।’’

গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে পুরুলিয়ায় উল্কার গতিতে উত্থান হয় বিজেপির। বামেদের ভোটব্যাঙ্ককে কার্যত দখল করেছিল গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটে জেলার ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে আটটিতে এগিয়েছিল বিজেপি। যদিও বিধানসভা ভোটে তারা ছ’টি আসন পায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, বিধানসভা ভোটের পরে বিজেপি কর্মীদের সে সক্রিয়তা নেই। যার প্রভাব পড়েছে পুরভোটে। জেলা বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তা মানতে নারাজ।

বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা বলেন, ‘‘ভোটাররা কোনও দলের সম্পত্তি নন। মানুষ যাঁকে যোগ্য মনে করেন, তাঁকেই ভোট দেন। গত বিধানসভা এবং পুরভোটে বামেরা শূন্যে নেমে এসেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ বিজেপিকেই যোগ্য মনে করেন।’’ তাঁর দাবি, গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে যা ফলাফল হয়েছে, ‘‘এ বারও তা-ই হবে।’’

কী ভাবছে তৃণমূল?

দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাম-কংগ্রেসের জোট হলেও তা হালে পানি পাবে না। গত এক দশকের বেশি সময়ে গ্রামে যা উন্নয়ন হয়েছে, তা দেখে সহজেই বলা যায়, মানুষের সমর্থন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি থাকবে। আগে কিছু দিনের জন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল বিরোধীরা। পুরভোটের ফলাফলে বোঝা গিয়েছে, মানুষ আমাদের কাছেই ফিরে এসেছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panchayat Election purulia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy