Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

স্বরূপ নেই, পুজোয় জাঁক বাদ

গত শুক্রবার রাধাষ্টমী উপলক্ষে নানুরের এই গ্রামের শ্যামসুন্দর মন্দিরেই প্রসাদ খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াই। অভিযোগ, বাবাকে মারের হাত বাঁচাতে গিয়েই বুকে গুলি খান স্বরূপ।

সন্তানহারা: ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে এ ভাবেই বাড়ি ফিরলেন ভুবনেশ্বর গড়াই। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

সন্তানহারা: ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে এ ভাবেই বাড়ি ফিরলেন ভুবনেশ্বর গড়াই। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

বাসুদেব ঘোষ
নানুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০০
Share: Save:

যুদ্ধ শেষ। দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম স্বরূপ গড়াই মারা গেলেন রবিবার রাতে। শোকের আবহে এ বার দুর্গাপুজোয় জাঁক করবেন না রামকৃষ্ণপুরের বাসিন্দারা।

গত শুক্রবার রাধাষ্টমী উপলক্ষে নানুরের এই গ্রামের শ্যামসুন্দর মন্দিরেই প্রসাদ খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াই। অভিযোগ, বাবাকে মারের হাত বাঁচাতে গিয়েই বুকে গুলি খান স্বরূপ। রবিবার রাতে কলকাতার এক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। স্বরূপের মৃত্যু ঘিরে সোমবার দিনভর তপ্ত হয়েছে বীরভূম এবং রাজ্য রাজনীতি। তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে চাপানউতোরে জড়িয়েছে বিজেপি এবং পুলিশ।

আর এ সব থেকে দূরে গ্রামের ছেলের মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছে রামকৃষ্ণপুরের গড়াইপাড়া। শোকে ভেঙে পড়েছে স্বরূপের পরিবারও। এ দিনও গ্রামে গিয়ে বোমা ফাটার চিহ্ন, চাপচাপ রক্তের দাগ দেখা গেল গ্রামের শিব মন্দিরের রাস্তায়। পড়ে থাকতে দেখা গেল তাজা বোমাও। শুক্রবার রাতে গ্রামের শ্যামসুন্দর মন্দিরে রাধাষ্টমী মহোৎসব থেকে খাওয়া দাওয়া করে সপরিবার স্বরূপরা বাড়ি ফিরছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, সেই সময় গ্রামে দলের পতাকা টাঙানো নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল কর্মীদের বচসা বাধে। বিজেপি-র অভিযোগ, স্বরূপের বাবা ভুবনেশ্বর গরাইকে মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। বাবাকে বাঁচাতে আসছিলেন স্বরূপ। তখন তাঁকে লক্ষ্য করে তিনটি বোমা ছোড়া হয়। তার মধ্যে দু’টি ফাটেনি, একটি বোমায় গ্রামের শিবমন্দিরে কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বরূপকে বুকে গুলি করা হয়। শিবমন্দিরের সামনেই লুটিয়ে পড়েন স্বরূপ।

ছেলের মৃত্যুর খবরে বোলপুর হাসপাতালে শুয়ে থাকতে পারেননি স্বরূপের বাবা, মারধরে আহত ভুবনেশ্বরবাবু। তাঁকে হাতে-পায়ে প্লাস্টার অবস্থাতেই হাসপাতাল থেকে এ দিন গ্রামে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই বৃদ্ধ। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। স্বরূপের বড় বৌদি মঞ্জু গড়াই বলেন, ‘‘যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চরম সাজা চাই। এই ঘটনার পরে আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পুলিশ-প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক।’’ স্বরূপের স্ত্রী চায়নাদেবী রয়েছেন কলকাতায়। তাঁদের তিন ছেলেমেয়েকে আগলে রেখেছেন পরিবারের বাকি সদস্যেরা।

এ দিন সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামে ঢোকার মূল রাস্তার দু’পাশে সার সার লোক অপেক্ষা করছেন। তখনও তাঁরা জানেন না, এ দিন আর দেহ ফিরবে না গ্রামে। গ্রামের মহিলারা স্বরূপের বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন। অনেকেই পরিবারের লোকদের সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গড়াইপাড়ার দুর্গা মন্দিরে প্রতি বছর জাঁকজমক সহকারে পুজো হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুজোর দিনগুলি আনন্দে কাটান গ্রামবাসীরা। এ বছরও প্রতিমা ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, পুজোর ঠিক আগেই গ্রামের ছেলের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে সকলকে। গ্রামবাসীরা ঠিক করেছেন, পুজো বন্ধ হবে না। তবে কোনও আড়ম্বরও থাকবে না। গ্রামবাসী সুনীল গড়াই, ভারতী গড়াই, নির্মল পালরা বললেন, ‘‘দুর্গা মন্দিরের সামনের বাড়িটাই স্বরূপের। তাই পুজোর ক’টা দিন এই মন্দির প্রাঙ্গণে হই-হুল্লোড় করলে তার পরিবারেরও খারাপ লাগবে। তাই আমরা এ বছর নিয়ম রক্ষার জন্য যতটুকু পুজো করা দরকার, ততটুকুই করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death BJP Member
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE