Advertisement
১১ মে ২০২৪
জল্পনা মনিরুলের ফেরা নিয়েও
BJP

আমার নেতা অনুব্রত, এ কী সুর গদাধরের!

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে দিল্লিতে গিয়ে মুকুল রায়ের হাত ধরেই গদাধর ও মনিরুল বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন।

মনিরুল ইসলাম (বাঁ দিকে) ও গদাধর হাজরা।

মনিরুল ইসলাম (বাঁ দিকে) ও গদাধর হাজরা। নিজস্ব চিত্র।

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

প্রশ্নটা বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই জেলার রাজনৈতিক শিবিরে ঘুরছিল। মুকুল রায় ক’দিন আগে বিজেপি-র সঙ্গ ত্যাগ করে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘটানোর পরে সেই জল্পনা তীব্রতর হয়েছে বীরভূমে। গদাধর হাজরা এবং মনিরুল ইসলামেরও কি তা হলে ‘ঘর ওয়াপসি’ হতে চলেছে?

জল্পনার পিছনে অবশ্য কারণ আছে। ওই দু’জনেই মুকুল ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে দিল্লিতে গিয়ে মুকুল রায়ের হাত ধরেই গদাধর ও মনিরুল বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। সেই গদাধরই এখন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ‘আমার নেতা’ বলে সম্বোধন করছেন!

তবে, ওই দু’জনের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি নিয়ে যে শাসকদলে আলোচনা চলছে, তা পরিষ্কার দলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের কথাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘ওঁরা কেউ দলে ফেরার জন্য আবেদন করেননি। তবে, ঘনিষ্ঠ মহলে দলে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে শুনেছি।’’ একই সঙ্গে মলয়বাবু জানিয়েছেন, এক সময় যাঁরা দলে ছিলেন, তাঁদের ফেরানোর ব্যাপারটি বিবেচনা করবেন জেলা সভাপতি। তাই এ ক্ষেত্রেও বিষয়টি তাঁর বিবেচনা সাপেক্ষ। এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘গদাধর-মনিরুল তৃণমূলে ফিরছেন বলে জানা নেই। তবে, ওঁদের যোগদানে দলের কোনও লাভ হয়নি। চলে গেলেও ক্ষতি হবে না।’’

প্রসঙ্গত, ২০১১ এবং ’১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে লাভপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া মনিরুল পর নানা কারণে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধের জেরে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন। অন্য দিকে, ২০১১ সালে গদাধর হাজরা নানুর কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হলেও পরের বার তৃণমূল নেতা কাজল শেখের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে সিপিএমের কাছে হেরে যান। তার পরেও গদাধরকে জেলা যুব সভাপতির পদ দেওয়া হয়। কিন্তু, পরে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁরও দূরত্ব তৈরি হয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর কাজলকে ব্লক কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করে দল।

এর পরেই মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন মনিরুল ও গদাধর। ওই দু’জনের যোগদান নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই জেলা বিজেপি নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশের মনে ক্ষোভ ছিল। সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে গদাধরকে কিছু প্রচারে দেখা গেলেও মনিরুলকে দেখা যায়নি বললেই চলে। কিন্তু, হঠাইই বিধানসভা ভোটের আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে মনিরুল লাভপুর থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেন। শাসকদলের প্রার্থীকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হারানোর চ্যালেঞ্জও ছোড়েন। ভোটের ফলে অবশ্য কোনও ছাপই তিনি ফেলতে পারেননি। বস্তুত, ভোটের পরে ওই দু’জনেরই রাজনৈতিক জীবন নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।

সূত্রের খবর, এই অবস্থায় গদাধর ও মনিরুল তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলেরই জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘নানা সময়ে আমাদের দলের এবং মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেও মুকুল রায় জায়গা পেয়েছেন। গদাধর-মনিরুলকে নিয়েও আলোচনা চলছে।’’ এ ব্যাপারে বারবার চেষ্টা করেও মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে গদাধর হাজরা স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘কথাবার্তা চলছে। অনুব্রত মণ্ডল আমার নেতা। তিনি যা বলবেন তাই হবে।’’

তবে, এঁদের দলে নেওয়া তৃণমূলের নিচুতলা মেনে নেবে কি না, সে আশঙ্কাও করছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। দলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য এবং লাভপুরের ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলের কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু, এ ব্যাপারে জেলা নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা সেটাই মেনে নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC mukul roy manirul islam Gadadhar Hazra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE