শরীরে ডাইনি ভর করেছে, এই অপবাদে বধূকে অর্ধনগ্ন করে নাচানোর অভিযোগ উঠল ওঝার বিরুদ্ধে। রবিবার বীরভূমের রামপুরহাট থানার তাঁতবান্দা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে দুই ওঝাকে আটক করেছে পুলিশ। পাশাপাশি, আক্রান্ত বধূকে উদ্ধার করে বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে মহিলার স্বামীকেও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই মহিলা দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। বহু চিকিৎসা করিয়েও কোনও লাভ হয়নি। শেষমেশ উপায়ান্তর না দেখে ওঝার শরণাপন্ন হয় ওই পরিবার। ওঝা দেখেশুনে জানান, বধূকে ডাইনিতে ধরেছে! শরীর থেকে ডাইনি তাড়াতে পুজো করতে হবে, তা হলেই সব অসুখ সেরে যাবে। পুজোর খরচের জন্য দুই পাড়ার প্রায় ৫০-৬০ পরিবার থেকে চাঁদাও তোলা হয়। সেইমতো রবিবার সকালে দুই ওঝা গ্রামে পৌঁছোন। গ্রামেরই হনুমানবেদিতে শুরু হয় পুজো। অভিযোগ, এর পর সেখানে ওই বধূকে অর্ধনগ্ন করে নাচানো হয়। ‘ডাইনি’ তাড়ানোর দৃশ্য দেখতে ভিড় জমান গ্রামবাসীরাও।
আরও পড়ুন:
তবে অবৈজ্ঞানিক এই রীতির প্রতিবাদ জানিয়ে সন্তোষ মির্ধা নামে এক গ্রামবাসী রামপুরহাট থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে গ্রামে পৌঁছোয় বিশাল পুলিশবাহিনী। তারাই লাঠিচার্জ করে গ্রামবাসীদের সেখান থেকে সরিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে। তিনি এখনও রামপুরহাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আটক করা হয়েছে দুই ওঝাকেও, তাঁদের মধ্যে এক জন মহিলা। জানা গিয়েছে, দুই ওঝা এসেছিলেন সীমান্তবর্তী ঝাড়খণ্ড থেকে।
আক্রান্ত বধূর ছেলে অজয় রায়ের কথায়, “মা দীর্ঘ দিন ধরেই অবসাদগ্রস্ত ছিল। অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই গ্রামবাসীরা মিলে ওঝা ডেকে রোগ দূর করাচ্ছিলাম!” অন্য দিকে, পুলিশে অভিযোগ জানানো সন্তোষ বলছেন, “আমি খবর পেয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখলাম, পুজোর নামে এক বধূকে অর্ধনগ্ন করে নাচানো হচ্ছে। আমি গ্রামবাসীদের সামনে এ ভাবে এক মহিলাকে হেনস্থা করার প্রতিবাদ করি। এর পর সেখান থেকে পালিয়ে এসে থানায় খবর দিই। পুলিশ দুই ওঝাকে আটক করে। এখনকার দিনে এ রকম অন্ধবিশ্বাস রাখা উচিত নয়।’’