হাসপাতালে আহত কিশোর। —নিজস্ব চিত্র।
‘মামা’ বলে ডাকার অপরাধে এক কিশোরকে মারধরের অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে খোদ রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনের সামনেই। জখম ওই কিশোরকে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হয়েছে। এ দিকে, বছর তেরোর ওই কিশোরকে অন্যায় ভাবে মারধর করা হয়েছে শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আইন অমান্য কর্মসূচিতে আসা বামপন্থী কর্মীরা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সরিয়ে দেওয়া ওই পুলিশ কর্মীকে। রামপুরহাট থানার আইসি ঘটনাস্থলে এসে ক্ষমাও চেয়ে নেন।
যদিও রাত পর্যন্ত ওই কিশোরের পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়নি। এ ভাবে মারধর করা ঠিক হয়েছে? এর স্পষ্ট উত্তর দেননি এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
প্রসঙ্গত, এ দিন মূল্যবৃদ্ধি রোধ, কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা, শ্রমিক বিরোধী বিল বাতিল, মজুরি আইনে সংশোধন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার বিলগ্নীকরণ রোধ-সহ ১০ দফা দাবিতে জেলা জুড়ে আইন অমান্য আন্দোলন করে শাসকবিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি। রামপুরহাটেও রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। সে জন্য মহকুমার মুরারই, মাড়গ্রাম, নলহাটি, রামপুরহাট থানার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে শহরে আইন অমান্য আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা। আরসিপিআই-এর জেলা সম্পাদক কামাল হাসানের সঙ্গে মাড়গ্রাম থানার ভোল্লা গ্রাম থেকে সাহেব শেখ নামে ওই কিশোর এসেছিল। সে স্থানীয় একডালা হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলে না গিয়ে মিছিলে কেন? তার জবাব, ‘‘মিছিলে যাইনি। বাড়িতে মা-বাবাকে বলে কাকা ও মামাদের সঙ্গে মিছিল দেখতে এসেছিলাম।’’ কেন পুলিশ মারল? বাম হাতের কব্জির উপর হাত বোলাতে বোলাতে কিশোর বলে, ‘‘কিছুই জানি না। পুলিশ এসে আমাকে বলতে লাগল ব্যাটা সাহস তো তোর খুব। আমাদের মামা বলিস। চল ব্যাটা বলেই লাঠি দিয়ে বাম হাতে পায়ে মারতে লাগল। আমি যতই বলছি আমি আমার মামাকে ডাকছি। ততই লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। আমাকে মারছে দেখে মামা, কাকা অন্য লোকজন ছুটে এসে পুলিশ কে ঘিরে না ধরলে, যে ভাবে পুলিশ মারতে শুরু করেছিল তাতে মনে হয় আরও বিপদ হতে পারত।’’ ওই কিশোরের পরিবারের দাবি, মিছিল শেষে সে নিজের মামাকে খুঁজছিল। মামাকে দেখতে না পেয়ে ‘মামা’ ‘মামা’ বলে ডাক ছাড়তেই কিশোরটিকে লাঠি দিয়ে মেরেছে পুলিশ। আরসিপিআই নেতা কামাল হাসান, কাকা মহম্মদ সফিউদ্দিনদের অভিযোগ, ‘‘বাচ্চাছেলে মিছিলের ভিড়ে ওর মামাকে দেখতে না পেয়ে মামা মামা বলে চিৎকার করে ডেকেছে। আর তাই শুনে একজন পুলিশ কর্মী যে ভাবে তাকে মারল, দেখে খারাপ লাগল।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে আইন অমান্য আন্দোলন শেষ হওয়ার পর বাচ্চাছেলেটি তার মামার খোঁজ করছিল। এর পরেই পুলিশ ওই কিশোরকে লাঠি দিয়ে মেরেছে।’’
যদিও পুলিশের দাবি, কিশোরটি রাস্তার সামনে প্রস্রাব করছিল। তা দেখে ওই পুলিশকর্মী আপত্তি করে। তখন কিশোরটি ওই পুলিশকর্মীটি গালিগালাজ করে মামা বলে। এতেই তিনি রেগে গিয়ে কিশোরটিকে লাঠি দিয়ে এক ঘা দিয়েছেন। মহম্মদ মৈনুউদ্দিন নামে সাহেব শেখের গ্রামের বাসিন্দা ক্ষোভে বললেন, ‘‘বাচ্চা ছেলের মুখে মামা ডাক শুনে পুলিশের এত রাগ? এমন মেরেছে ছেলেটি যন্ত্রনায় ছটপট করছিল। চিকিৎসকেরা অবশ্য বলেছেন, কোথাও ভাঙার চিহ্ন নেই। তবুও এক্সরে করার নির্দেশ দিয়েছেন।’’