Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ফিরল না ছেলে, এল মৃত্যুর খবর

পুরুলিয়ার রেল শহর আদ্রার রাঙ্গুনির বাসিন্দা প্রশান্ত রাজোয়াড় (২২) নামের ওই যুবকের মৃত্যু কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, তাঁর পরিবার-পরিজনেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২৯
Share: Save:

তিন মাস পরে ছেলে গুজরাত থেকে ফিরছে বলে অপেক্ষায় ছিলেন মা। বাড়িতে ছিল খুশির আমেজ। কিন্তু রাত পর্যন্ত তিনি না ফেরায়, তা বদলে যায় উদ্বেগে। দুঃশ্চিন্তার মধ্যে রাত কাটার পরে সকালে এলাকাতেই ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের খবর আসতে নেমে এল শোকের ছায়া।

পুরুলিয়ার রেল শহর আদ্রার রাঙ্গুনির বাসিন্দা প্রশান্ত রাজোয়াড় (২২) নামের ওই যুবকের মৃত্যু কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, তাঁর পরিবার-পরিজনেরা। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। বাসিন্দারাও আত্মহত্যা বলে মানতে নারাজ। প্রশান্তর দেহ উদ্ধার ঘিরে তাই রহস্য দানা বেঁধেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় এ নিয়ে কেউ অভিযোগ দায়ের করেননি।

মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথপুর থানার চেলিয়ামা-পুরুলিয়া রাস্তার পাশে, চেলিয়ামার অদূরে প্রশান্তর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। তাই দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়ে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন বছর ধরে মামারবাড়ি রঘুনাথপুর থানা এলাকার জোরাডির চাতরমহুলে থেকেই তিনি সাঁওতালডিহি কলেজে পড়াশোনা করেন। মাস তিনেক আগে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে গুজরাতে তিনি শ্রমিকের কাজ করতে যান। সেখান থেকে তাঁর ফেরার কথা ছিল সোমবার রাতে।

তাঁর মা শুভদ্রা রাজোয়াড় কিছু দিন ধরে চাতরমহুলে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কলেজ শেষ করেই ছেলেটা অত দূরে কাজ করতে চলে গিয়েছিল। আমার মনে সায় ছিল না। বলেছিলাম, ফিরে আয়। এখানেই কোনও কাজ নিশ্চয় জুটে যাবে। জানিয়েছিল, সোমবার রাতে ফিরবে।’’ তিনি জানান, সোমবার রাত ৯টায় ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। তখন প্রশান্ত তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন, তিনি পুরুলিয়া নেমে গিয়েছেন। বাড়ি ফিরছেন।

কিন্তু আর ফেরেননি। শুভদ্রাদেবীর কথায়, ‘‘রাত পর্যন্ত ছেলে না ফেরায় চিন্তা হচ্ছিল। অনেক রাত পর্যন্ত বেশ কয়েকবার তাকে ফোন করার চেষ্টা করি। কিন্তু লাইন পাওয়া যায়নি।’’ তারপরে এ দিন বেলার দিকে খবর আসে, প্রশান্ত মারা গিয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

তবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ধন্দ কাটছে না পুলিশের। প্রথমত, ওই যুবকের দেহ মিলেছে চেলিয়ামা এলাকায় গ্রামের এক প্রান্তে একটি পুকুরের পাড়ে। গাছ থেকে তাঁর দেহ ঝুলছিল। সেখান থেকে তাঁর বাড়ি আদ্রার রাঙ্গুনি অনেক দূর। তবে ঘটনাস্থল থেকে তাঁর মামার বাড়ি রঘুনাথপুর থানা এলাকার জোরাডির চাতরমহুল গ্রাম প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ফলে ওই জায়গায় কেন তিনি নেমেছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে কী তাঁকে কেউ বা কারা জোর করে নামিয়েছিলেন? দ্বিতীয়ত, তাঁর দেহ গাছের একটি ডাল থেকে ঝুললেও হাঁটু মাটি ছুঁয়েছিল।

তা দেখে স্থানীয়দের দাবি, ঘটনাটি আত্মহত্যার নয়। তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। তবে পুলিশের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে স্পষ্ট হবে বলে মত পুলিশের। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ট্রেনের টিকিট ও মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

প্রশান্তর বাবা লক্ষ্মীকান্ত রাজোয়াড় বাকি দুই ছেলেকে নিয়ে রাঙ্গুনিতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ বলেই ছেলে কাজ খুঁজতে ভিন্‌ রাজ্যে গিয়েছিল। কিন্তু কী ভাবে সে মারা গেল বুঝতে পারছি না। পুলিশই তদন্ত করে জানাক কী ঘটেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Death Raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE