Advertisement
E-Paper

জন্মদিনেই দুর্ঘটনার বলি যুবক

মঙ্গলবার গভীর রাতে ওন্দার দেশবাঁধ এলাকায়, বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় পড়ল তাঁদের গাড়ি। মৃত্যু হল অভিজিৎ কুণ্ডু (২৫) এবং তাঁর মামা তপনকুমার ঘোষালের (৪৫)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৫
অভিজিৎ কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র

মাস ছয়েক আগে মেয়ে হয়েছে। প্রাণবন্ত যুবকটির মুখের হাসি আরও চওড়া হয়ে উঠেছিল তার পর থেকে। পঁচিশে পা দিয়ে মামা আর বন্ধুদের নিয়ে রওনা হয়েছিলেন দিঘার পথে। কিন্তু জন্মদিনের রাত আর পোহাল না। মঙ্গলবার গভীর রাতে ওন্দার দেশবাঁধ এলাকায়, বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় পড়ল তাঁদের গাড়ি। মৃত্যু হল অভিজিৎ কুণ্ডু (২৫) এবং তাঁর মামা তপনকুমার ঘোষালের (৪৫)। অভিজিৎ অন্ডালের দিগনালা এবং তপনবাবু দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের বাসিন্দা। জখম হয়েছেন অভিজিতের বন্ধু সনৎ কুণ্ডু, বনমালি কুণ্ডু, লাল্টু লায়েক ও ভোলানাথ লায়েক। তাঁদের বাড়িও দিগনালায়।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন সেনাকর্মী তপনবাবু অবসরের পরে দুর্গাপুর দমকল বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সিটি সেন্টারে সরকারি আবাসনে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। অভিজিৎ পেশায় ব্যবসায়ী। ছ’মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে তাঁর। মঙ্গলবার রাতেই চার বন্ধু ও মামা তপনবাবুকে নিয়ে সিটি সেন্টার থেকে একটি গাড়িতে দিঘার উদ্দেশে রওনা হন অভিজিৎ। গাড়িটি তিনি নিজেই চালাচ্ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে রাত ১টার পরে। দেশবাঁধ এলাকায় দ্রুত গতিতে একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টো দিক থেকে আসা বাসের মুখোমুখি পড়ে যায় অভিজিতের গাড়ি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটির পিছনে ধাক্কা মারে গাড়িটি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ছয় যাত্রীকে উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে যায়। অভিজিৎ ও তপনবাবু মৃত বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসক। বাকিদের ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হয়। বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার শুভেন্দুবিকাশ সাহা বলেন, “চার জনই বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছেন।”

দুর্ঘটনাগ্রস্ত: এমনই হাল হয়েছে গাড়িটির। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরেই ট্রাক ফেলে চম্পট দেয় চালক। ট্রাক ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, রাতে কুয়াশার জন্য দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছিল না। তার উপরে গাড়ির গতি বেশি ছিল। সব মিলিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে বাঁকুড়াতেই গত বছরের শেষে দু’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ডিসেম্বরের গোড়ায় শিক্ষামূলক ভ্রমণে বেরনো স্কুল পড়ুয়াদের একটি বাস মড়ার এলাকাতেই দুর্ঘটনায় পড়ে। মাসের শেষে আবার মড়ার পঞ্চায়েত অফিসের সামনে দুর্ঘটনায় তুবড়ে যায় পর্যটকদের একটি বাস।

এই দুর্ঘটনার পরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে মৃতদের পরিবারে। বুধবার হাসপাতালের মর্গে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তপনবাবুর ছেলে ত্রিদিব ঘোষাল। তপনবাবুর দাদা গঙ্গাজলঘাটির তড়কাবাইদের বাসিন্দা মনসারাম ঘোষাল বলেন, “ভাগ্নে অভিজিতের সঙ্গে ওর বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। বিশ্বাসই হচ্ছে না দুটো প্রাণবন্ত মানুষ আর নেই।” অভিজিতের আত্মীয় বড়জোড়ার বাসিন্দা তথা বাঁকুড়ার সিপিএম নেতা সুজয় চৌধুরী বলেন, “কয়েক বছর আগেই অভিজিতের বিয়ে হয়েছিল। ওর একটি ছ’মাসের মেয়ে রয়েছে। এই ঘটনায় গোটা পরিবার শোকে স্তব্ধ।” এ দিন অভিজিৎদের মা উমারানিদেবী, স্ত্রী সুর্পণাদেবী কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। প্রতিবেশীরা তাঁদের বাড়িতে ভিড় করেছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ময়না তদন্তের পরে মৃতদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

Road accident Accidental Death ওন্দা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy