শিশু বিভাগে উপচে পড়ছে রোগী। গত ৫ জুন থেকে ১৪ জুন— এই দশ দিনে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে ৩১ সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, যে নবজাতকেরা মারা গিয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই ওজন কম ছিল। পাশাপাশি সংক্রমণ, জন্মগত শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিসের শিকার হয়েছে ওই শিশুরা।
পরের পর শিশুমৃত্যু নিয়ে যখন জেলা ও রাজ্য স্তরে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে গেলেও এখনও দরজা খোলেনি এই হাসপাতালের ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব’-এর!
গত বছর ৩১ জুলাই হুড়ার লালপুর টেলিকম ময়দানের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এই ইউনিটির উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও রোগীদের জন্য দরজা বন্ধ রয়েছে এই বিভাগের। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী জেলার প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেই পুরুলিয়ার মতো প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জেলায় মা ও শিশুদের আরও উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে সদর হাসপাতালে মাদার ও চাইল্ড হাব কেয়ার ইউনিট গড়ে তালা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ২০১১ সালেই পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ এই হাব গড়ার জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ২০১৩ সালের অগস্ট মাস নাগাদ এই ইউনিটের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। ওই বছরই সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এলে এই ইউনিট উদ্বোধন করবেন, সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোনো হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সেই সফরে এই ইউনিটের উদ্বোধন হয়নি।
বছর খানেক পরে জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এলে তাঁর হাত দিয়ে ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব’-এর উদ্বোধন করানো হয়। তার পরেও কেটে গিয়েছে প্রায় ১১ মাস। এখনও দরজা বন্ধ এই ইউনিটের।
কী বলছে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের বাস্তব চিত্র?
হাসপাতালের তিন তলায় নবনির্মিত এই হাবের দরজায় এখনও তালা ঝুলছে। এর পাশাপাশি যে ‘স্টেপডাউন ইউনিট’ রয়েছে, তা-ও বন্ধ বেশ কয়েক মাস। নবজাতকদের পরিচর্যা কেন্দ্রের ভর্তি থাকা সদ্যোজাত শিশুদের অবস্থা একটু উন্নতি হলে তাদের স্টেপডাউন ইউনিটে ভর্তি করানোর কথা। কিন্তু মাস চারেক ধরে এই বিভাগে সংস্কারের কাজ চলায় বিভাগটিই বন্ধ। সোমবার হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চাইতে এসে পুরুলিয়া পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস প্রশ্ন তুলেছেন, এই বিভাগটি চালু থাকলে যে ক’টি শয্যা স্টেপডাউন বিভাগে থাকত, সেখানে অন্তত কিছু শিশুকে স্থানান্তরিত করা যেত। অন্য দিকে, শিশু বিভাগ অর্থাৎ নিওন্যাটাল ইউনিটে শয্যার সংখ্যা ৩০। মঙ্গলবার এই বিভাগে ৫২টি শিশু ভর্তি রয়েছে। কার্যত প্রতি শয্যায় দু’টি করে শিশু ভর্তি থাকার কারণে তাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে স্বীকার করেছেন এই বিভাগেরই এক চিকিৎসক।
এ হেন পরিস্থতিতেও কেন চালু করা যায়নি মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাব?
হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন জানাচ্ছেন, ওই হাবের অবস্থান তিন তলায়। আর প্রসূতি বিভাগের অবস্থান দোতলায়। ফলে লিফট আবশ্যক। কিন্তু লিফটের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণেই ওই বিভাগ এখনও চালু করা যায়নি। তাঁর আশ্বাস, ‘‘ শীঘ্রই যাতে লিফটের কাজ শুরু হয়ে যায়, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘দ্রুত স্টেপডাউন ইউনিটটি চালু করার চেষ্টাও চলছে। ওই বিভাগে সংস্কারের কাজ চলছে। হাসপাতালের তিনতলায় থাকা মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব আংশিক ভাবেও যাতে চালু করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’