Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইন্দিরা আবাসের টাকা তুলতে ঘুষের দাবি প্রধানের, নালিশ

ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে যোগ্য প্রাপকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অনেক ক্ষেত্রে আবার ঘর নির্মাণ না করে সরকারি টাকা নয়ছয় করার অভিযোগও উঠেছে। এ বার প্রকল্পের কিস্তির টাকা তুলতে সই করার বিনিময়ে প্রাপকদের কাছ থেকে সরাসরি ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৮
Share: Save:

ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে যোগ্য প্রাপকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অনেক ক্ষেত্রে আবার ঘর নির্মাণ না করে সরকারি টাকা নয়ছয় করার অভিযোগও উঠেছে। এ বার প্রকল্পের কিস্তির টাকা তুলতে সই করার বিনিময়ে প্রাপকদের কাছ থেকে সরাসরি ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে। সাঁইথিয়ার দেরিয়াপুর পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় সম্প্রতি বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রধান যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এমন গুরুতর অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সাঁইথিয়ার বিডিও জাহিদ সাহুদ বলেন, “ওই পঞ্চায়েতে ইন্দিরা আবাস প্রকল্প নিয়ে এমন একটা অভিযোগ পেয়েছি। যার তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দেরিয়াপুর পঞ্চায়েতের বাঘডোলা বনগ্রামের কয়েক জন বিপিএল তালিকাভুক্ত বাসিন্দা ইন্দিরা আবাস যোজনায় গৃহ নির্মাণের জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরে মাস চারেক আগে পঞ্চায়েত থেকে বাড়ি তৈরি বাবদ প্রথম কিস্তির সাড়ে ১৭ হাজার টাকা প্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া হয়। একই পদ্ধতিতে মাস দু’য়েক আগে প্রাপকেরা দ্বিতীয় কিস্তির ৪২ হাজার টাকাও পেয়েছিলেন। গণ্ডগোলটা হয় তৃতীয় কিস্তির (১০,৫০০) টাকা তোলার সময়। অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান লক্ষ্মী হাঁসদা এ বার নির্দিষ্ট কিছু প্রাপকদের কিস্তির টাকা তোলার আবেদনপত্রে সই করতে অস্বীকার করেন। ওই সই করার বিনিময়ে প্রধান তাঁদের কাছ থেকে মোটা টাকার ঘুষ চান বলে অভিযোগকারীদের দাবি।

বিডিও-কে দেওয়া চিঠিতে অন্যতম অভিযোগকারী সুমি মুর্মু দাবি করেছেন, বাড়ি তৈরির সময় প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার আগেই লক্ষ্মীদেবী তাঁর কাছে ৫ হাজার টাকা ঘুষ চান। সুমিদেবী বলেন, “আমি প্রধানকে অত টাকা দিতে পারবো না বলে জানিয়ে দিই। দরকারে ব্লকে অভিযোগ করব বলেও তাঁকে সাফ জানিয়ে দিই। তার পরেই প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আমার ব্যাঙ্কের পাসবইয়ে জমা পড়ে।” এ বার তৃতীয় কিস্তির টাকার জন্য দুর্গাপুজোর আগে সুমিদেবী সমস্ত কাগজপত্র পঞ্চায়েতে জমা দেন। তাঁর দাবি, আবেদনের ভিত্তিতে নিয়ম মতো পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক বাবলু সাহা প্রয়োজনীয় তদন্তও করে যান। কিন্তু তার পরেও তিনি প্রাপ্য তৃতীয় কিস্তির টাকা পাননি। তাঁর অভিযোগ, “প্রধানের কাছে খোঁজ নিতে গেলে তিনি আমাকে স্পষ্টই জানিয়ে দেন, তিনি সই না করলে কোনও টাকা পাব না। তাঁকে ৫ হাজার টাকা দিলে তবেই তিনি আমার তৃতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।”

প্রধানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন বাঘডোলার আর এক বাসিন্দা চরণ হাঁসদাও। তিনি বলেন, “তৃতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছি। নির্মাণ সহায়ক তদন্তও করেছেন। প্রধান ৫ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি অস্বীকার করায় তিনি সই করেননি। সে কারণেই ওরা আমার তৃতীয় কিস্তির টাকা আটকে দিয়েছে।” এই পরিস্থিতিতে তিনি নির্মাণ সহায়কের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু বাবলুবাবু নিজেকে ‘প্রধানের চাকর’ বলে সম্বোধন করে বিষয়টি এড়িয়ে যান বলে চরণ হাঁসদার অভিযোগ। তাঁর আরও দাবি, বিডিও-র কাছে অভিযোগের কথা জানাজানি হতেই প্রধানের স্বামী আনন্দ হাঁসদা তিন হাজার টাকা দিলেই বিষয়টি মিটমাট করিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রস্তাব দেন। তিনি অবশ্য ওই টাকা দিতেও অস্বীকার করেন।

এ দিন গ্রামে দুই অভিযোগকারীর কাছে যেতেই সেখানে প্রধানের স্বামী হাজির হয়ে যান। আনন্দ হাঁসদার সামনে সুমিদেবী ভয়ে ভয়ে বিডিও-কে অভিযোগ করার কথা অস্বীকার করেন। তাঁর সামনে দাঁড়িয়েই প্রধানের স্বামী দাবি করতে থাকেন, “আসলে আমার স্ত্রীকে ফাঁসাতেই সুমিদেবীর নাম করে কেউ বিডিও-র কাছে মিথ্যা নালিশ করেছে।” এর পরে চরণ হাঁসদার বাড়িতে যেতে সেখানেও হাজির হয়ে যান প্রধানের স্বামী। অবশ্য সুমিদেবীর মতো ভয় না পেয়ে চরণ হাঁসদা প্রধানের স্বামীর সামনেই তাঁর সমস্ত অভিযোগের কথা জানান। তাঁর ওই কথায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যান আনন্দ হাঁসদা।

গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ওই দুই প্রাপকের অভিযোগ নিয়ে পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, প্রধান দাবি করেন, “মিথ্যা অভিযোগ। আসলে ঠিক ভাবে বাড়ি তৈরি করেনি বলেই চরণ হাঁসদার তৃতীয় কিস্তির টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু বাড়ি তৈরিতে সমস্যা থাকলে চরণরা দু’টি কিস্তির টাকা পেলেন কী করে? নিরুত্তর থাকেন লক্ষ্মীদেবী। চরণ হাঁসদার স্ত্রী হপনময়দেবী বলেন, “আমাদের এক ছটাকও জমি নেই। মায়ের দেওয়া জমিতে বাস করি। কেমন করে টাকা দেব বাবু?” এখন এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে তাঁরা এখন বিডিও-র তদন্তের দিকেই তাকিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE