Advertisement
০৭ মে ২০২৪

উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেও চিন্তিত তিন ছাত্র

গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাবা এখনও পটের গান গেয়ে বেড়ান। তার সঙ্গে ডাক পেলে গাছ গাছালির শিকড় বাকড় দিয়ে জড়িবুটির ওষুধ দিয়ে গৃহস্থ বাড়ির গরুর অসুখ সারিয়ে দেন। বিনিময়ে কিছু টাকা রোজগার হয়। আর সম্বল বলতে বাবা ১০০ দিন প্রকল্পের জব কার্ড হোল্ডার। তাও বছরে সব দিন কাজ হয় না। মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া গ্রামের স্কুল থেকে এমনই এক পরিবারের ছেলে অলোক পটুয়া এ বারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪২৩ নম্বর পেয়ে স্কুলের সেরা হয়েছে।

অলোক পটুয়া ও ওসমান আলি ও সলমন আলি।

অলোক পটুয়া ও ওসমান আলি ও সলমন আলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০১:৪৫
Share: Save:

গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাবা এখনও পটের গান গেয়ে বেড়ান। তার সঙ্গে ডাক পেলে গাছ গাছালির শিকড় বাকড় দিয়ে জড়িবুটির ওষুধ দিয়ে গৃহস্থ বাড়ির গরুর অসুখ সারিয়ে দেন। বিনিময়ে কিছু টাকা রোজগার হয়। আর সম্বল বলতে বাবা ১০০ দিন প্রকল্পের জব কার্ড হোল্ডার। তাও বছরে সব দিন কাজ হয় না। মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া গ্রামের স্কুল থেকে এমনই এক পরিবারের ছেলে অলোক পটুয়া এ বারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪২৩ নম্বর পেয়ে স্কুলের সেরা হয়েছে। গ্রামেরই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করেও পরিবারের দিকে তাকিয়ে অলোক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেনি। বাবা ফুলচাঁদ পটুয়া জানালেন, “বিজ্ঞান নিয়ে পড়াতে ছেলেকে তিনটি বিষয়ে টিউশন দিতে হত। পরিবারের আয় বলতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে পটের গান শুনিয়ে যা আয় হয় এবং গোপালকদের ডাকে তাদের সেবা করার জন্য ডাক পেলে পয়সা নিয়ে সেবা করেন। এই আয়ের উপর নির্ভর করে সংসারের চার জন সদস্যের মুখে খাবার জোটাতে হয় তাঁকে। এর পরেও ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালাতে হয়। তাঁর আক্ষেপ, “ছেলের ইচ্ছের দাম দিতে পারিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের শিক্ষকরা যথেষ্ট সাহায্য না করলে ছেলেটা ভাল ফল করতে পারত না।” অলোকের ইচ্ছে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করা। কিন্তু পরিবারের এই অবস্থায় ভূগোল নিয়ে পড়াটা তার কাছে এখন সমস্যা।

একই অবস্থা মাড়গ্রাম থানার কবিরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ওমর আলিরও। ২০০০ সালের বনা্যয় পেশায় দিনমজুর ওমর আলির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পরে আর ভাল করে কিছু করে উঠতে পারেননি। এই পরিবেশে থেকে দুই ছেলে মাধ্যমিক পাশ করেছে চাঁদপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক নুরুল হকের প্রচেষ্টায়। দুই ছেলে আলামিন মিশনের সহযোগিতায় মেদিনীপুরের কেশপুর থানার অধীন কলাগ্রাম শহিদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি বিদ্যাপীঠ থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। কিন্তু এর পরে কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় ঘুম ছুটেছে ওমর আলির। তাঁর দুই ছেলে ওসমান আলি (৪৩০) এবং সলমন আলিদের (৩৮২) ইচ্ছে, রসায়ন নিয়ে পড়া। কিন্তু দিনমজুর বাবার অবস্থার দিকে তাকিয়ে তাদের ইচ্ছে পূরণ কীভাবে হবে সেটাই এখন দুই ভাইয়ের বড় সমস্যা। চাঁদপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক নুরুল হক বলেন, “এই তিন দুঃস্থ ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সাহায্য করে এসেছি। এখন ওদের ইচ্ছে পূরণের জন্য আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী যতটা করার চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE