Advertisement
E-Paper

এ বার সাত্তোরে অফিস বিজেপি-র

এ বার দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফার খাসতালুক সাত্তোরেই গেরুয়া পতাকা তুলল বিজেপি! সোমবার হাজারখানেক কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে পাড়ুইয়ের সাত্তোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওই দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন বিজেপি-র আমন্ত্রিত সদস্য জয়প্রকাশ মজুমদার। এ দিনই ওই পঞ্চায়েত এলাকার ৮-৯টি গ্রামের হাজারখানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক দলে যোগ দিয়েছেন বলেও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
সাত্তোরের সভামঞ্চে বিজেপি-তে যোগ। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

সাত্তোরের সভামঞ্চে বিজেপি-তে যোগ। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

এ বার দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফার খাসতালুক সাত্তোরেই গেরুয়া পতাকা তুলল বিজেপি!

সোমবার হাজারখানেক কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে পাড়ুইয়ের সাত্তোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওই দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন বিজেপি-র আমন্ত্রিত সদস্য জয়প্রকাশ মজুমদার। এ দিনই ওই পঞ্চায়েত এলাকার ৮-৯টি গ্রামের হাজারখানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক দলে যোগ দিয়েছেন বলেও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন। যাঁদের অধিকাংশই আবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ জন। বিজেপি-র দাবি, তাদের উত্থানের ভয়ে পাড়ুই থানা এলাকার আটটি অঞ্চলের নেতৃত্বের পরিচালনায় নানা রদবদল করেও দলের ভাঙন ঠেকাতে পারছে না শাসক দল।

শেখ মুস্তফা অবশ্য দাবি করেন, “আমার বিরুদ্ধে বিজেপি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। যারা দল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকায় তোলাবাজি-সহ নানা অভিযোগ ছিল। ওদেরল চলে যাওয়ায় দলের কোনও ক্ষতিই হবে না।” তাঁর আরও সংযোজন, “যে কোনও রাজনৈতিক দলই এখানে দলীয় কার্যালয় খুলতে পারে। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আগামী বিধানসভা ভোটেই ওরা সমস্ত জবাব পেয়ে যাবেন।”

দল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের সাত্তোরের অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফা এবং সভাপতি লালু মোল্লা এবং তাঁর জামাই তথা পঞ্চায়েতের প্রধান মহসিন মোল্লার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলের নীচুতলার কর্মী-সমর্থকদের বহু দিন ধরেই ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। কিন্তু, দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁরা এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য জারি রাখতে পেরেছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু পাড়ুইকে কেন্দ্র করে বিজেপি-র উত্থান সেই আধিপত্যকেই ধাক্কা দিয়েছে। বিক্ষুব্ধদের একটা বড় অংশ তাই গেরুয়া শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন। এ দিনও তার ছায়া দেখা গিয়েছে।

উদ্বোধনের পাশাপাশি এ দিনই সেখানে একটি জনসভাও করে বিজেপি। সেখানেই বিজেপি-তে যোগ দেন তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সাত্তোর অঞ্চল সহ-সভাপতি রবাই চৌধুরী। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়েই বিক্ষুব্ধ ওই নেতা শাসক দলের ‘বঞ্চনা’, ‘দুর্নীতি’র নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তাঁর সঙ্গেই তৃণমূল ছেড়ে যাদবপুর, বিষ্ণুণ্ডন্ডা, শিমুলিয়া, ভেঁড়ামারি, সাত্তোর, কেন্দ্রডাঙাল, আমগোড়ে, শুঁড়িপুর প্রভৃতি এলাকার হাজারখানেক কর্মী-সমর্থক দলে যোগ দিয়েছেন বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি।

এ দিকে, দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধনে এসে এ দিন শাসকদল তৃণমূলকে একহাত নিয়েছেন জয়প্রকাশবাবু। জনসভায় তিনি শ্লোগান তোলেন, “আপনার আমার দু’টি ভুল। সিপিএম আর তৃণমূল।” তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগও তিনি করেন। তিনি দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক দিন তার দাম মেটাতে হবে।” উঠেছিল দুধকুমার মণ্ডলের উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রসঙ্গও। জয়প্রকাশবাবু দাবি করেন, “একটা কষ্ট, একটা ব্যথা থেকে দুধকুমারবাবু আবেগে ওই কথা বলে ফেলেছেন। কিন্তু বিজেপি এই বক্তব্যকে সমর্থন করে না। তাই দল তাঁকে সতর্কও করে দিয়েছে।” এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর দিকে পাল্টা অভিযোগের আঙুল তোলেন বিজেপি-র ওই আমন্ত্রিত সদস্য। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘বাংলায় আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারি’। কেন এ রকম বলছেন? বাংলার মানুষ শান্তি চান। আগুন চান না। মুখ্যমন্ত্রী আপনি চেষ্টা করেও আগুন লাগাতে পারবেন না। বাংলার মানুষ নিজেদের রক্ত দিয়ে ওই আগুন নেভাবে।”

এ দিনের কর্মসূচিতে অবশ্য ছিলেন না দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলই। দলেরই একাংশে তা নিয়ে আবার গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিতর্কিত মন্তব্য করে দলীয় নেতৃত্বের কাছে শো-কজ খেয়ে কি দলের দাপুটে এই নেতা কিছুটা হলেও ‘ঠান্ডা’ হয়ে গেলেন?

ফোনে দুধকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, জেলা বিজেপি নেতৃত্বের সূত্রে জানা গিয়েছে, শারীরিক অসুস্থার কারণে তিনি কলকাতায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। তার জন্যই এ দিন দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনে তাঁকে দেখা যায়নি। যদিও উদ্বোধন ও জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি-র জেলা সম্পাদক অর্জুন সাহা, পাড়ুই এলাকার বিজেপি নেতা নিমাই দাস, উজ্জ্বল মজুমদার প্রমুখ। এ দিনের সভায় অর্জুনবাবু কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল সরকারি পরিবর্তনই এনেছে বটে। কী পরিবর্তন হয়েছে? না, এই সরকার বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় তুলে দিয়েছে। তার বদলে তারা নতুন বর্ণপরিচয় চালু করেছে ‘অ-এ অনুব্রত দুষ্টু ছেলে, আ-এ আরাবুল আসছে তেড়ে!” রাজ্যের মানুষ সামনের ভোটেই এই পরিবর্তনের ‘পরিবর্তন’ আনবেন বলে বিজেপি নেতারা এ দিন দাবি করেন।

join bjp tmc bjp parui
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy