Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ দু’দলেরই

একই দিনে থানা ঘেরাও বিজেপি-তৃণমূলের

অভিযোগটা একই—পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার। সেই অভিযোগে বুধবার বাঁকুড়ার দু’টি থানা ঘেরাও হল। বাঁকুড়া সদর থানায় বিজেপি। আর গঙ্গাজলঘাটিতে থানা ঘেরাও করল শাসক দল তৃণমূলই! দু’টি ক্ষেত্রেই দলের শতাধিক কর্মী-সমর্থক থানা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে।

বাঁকুড়া সদর থানায় বিক্ষোভ বিজেপি কর্মীদের। (ডান দিকে) গঙ্গাজলঘাটি থানা ঘেরাও তৃণমূলের।  —নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়া সদর থানায় বিক্ষোভ বিজেপি কর্মীদের। (ডান দিকে) গঙ্গাজলঘাটি থানা ঘেরাও তৃণমূলের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০১:০৮
Share: Save:

অভিযোগটা একই—পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার। সেই অভিযোগে বুধবার বাঁকুড়ার দু’টি থানা ঘেরাও হল। বাঁকুড়া সদর থানায় বিজেপি। আর গঙ্গাজলঘাটিতে থানা ঘেরাও করল শাসক দল তৃণমূলই! দু’টি ক্ষেত্রেই দলের শতাধিক কর্মী-সমর্থক থানা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে।

সদর থানায় বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার। গত ২৮ জুন সদর থানার মন্যাডি গ্রামে বিজেপি এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে দু’পক্ষের ১২ জন জখম হন। ঘটনার দু’দিন পরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী ওই গ্রামে গিয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোদের ঘরে কেউ ঢুকলে কেটে দিবি, আমি বুঝে নেব’। তাঁর এই বক্তব্যকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অরূপবাবুকে গ্রেফতারের দাবিতে সদর থানায় অভিযোগ জমা করতে যান জেলা বিজেপি-র নেতারা। তবে, লিখিত বয়ান জমা নিয়ে থানা থেকে স্ট্যাম্প দেওয়া হলেও তা এফআইআর বা জেনারেল ডায়েরি হিসাবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। এই নিয়ে ফের সরব হন বিজেপি নেতৃত্ব।

এই ঘটনার পর দিনই বিজেপি-র জেলা সম্পাদক, বাঁকুড়ার বাসিন্দা নীলাদ্রিশেখর দানাকে মন্যাডি গ্রামে হামলা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন প্রায় ছশো বিজেপি কর্মী বাঁকুড়া শহরে পুলিশের বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল করে সদর থানায় জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখান। থানা চত্বরে মাইক লাগিয়ে নিজেদের বক্তব্যে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন জেলা বিজেপি-র সভাপতি জয়ন্ত মণ্ডল, সহ-সভাপতি জীবন চক্রবর্তী, দলের মুখপাত্র অজয় ঘটক। ধৃত নেতা নীলাদ্রিশেখরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবিও ওঠে। পাশাপাশি জেলা সভাধিপতিকে খুনের প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করার দাবিও তোলেন বিজেপি নেতারা। মোট ছ’দফা দাবির একটি স্মারকলিপিও থানায় জমা দেওয়া হয়।

এ দিন অবশ্য অরূপবাবুর বিরুদ্ধে বিজেপি-র আগে দায়ের করা অভিযোগকে জেনারেল ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করে জিডি নম্বর দিয়েছে সদর থানা। কেন অভিযোগ জমা নেওয়ার দিনই সেটা করা হল না, তার সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ কর্তারা। সুভাষবাবুর দাবি, “আন্দোলনের জেরে চাপে পড়েই পুলিশ অবশেষে আমাদের অভিযোগ নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে, শুধু কাগজে কলমে জিডি করলেই হবে না। অরূপবাবুকে গ্রেফতার করতে হবে।” তাঁর আরও অভিযোগ, রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বিষ্ণুপুর আদালতে বলেছিলেন, ছাপ্পাভোটে অভিযুক্ত সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহা নিজের বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু, পুলিশ তাঁকে ধরেনি। সুভাষবাবুর কথায়, “মন্ত্রীর নিজের কথাতেই পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ নিরপেক্ষ হয়ে কাজ না করলে আমরা আরও বড় আন্দোলনে নামব।”

অরূপবাবুর অবশ্য দাবি, “সুভাষবাবুর নিজের ছেলেই মন্যাডি গ্রামে আমাদের কর্মীদের উপরে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানোয় অভিযুক্ত। পুলিশ আগে তাকে গ্রেফতার করুক। আমার বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না।” সুভাষবাবু বলেন, “আমার ছেলের সঙ্গে বিজেপি দলের কোনও সম্পর্কই নেই। সে বাঁকুড়া মেডিক্যালের হাউসস্টাফ। অথচ তৃণমূলের নেতারা ওর বিরুদ্ধেও মিথ্যা অভিযোগ ফাঁদছেন।”

অন্য দিকে, এ দিন গঙ্গাজলঘাটি থানায় তৃণমূলের বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন দলেরই জেলা পরিষদ সদস্যা মঙ্গলা মাজি। সঙ্গে ছিলেন এলাকার তৃণমূল নেতা, মঙ্গলাদেবীর স্বামী নিমাই মাজি। এ দিন নিমাইবাবু ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের সমর্থনে কয়েক হাজার দলীয় কর্মীকে নিয়ে গঙ্গাজলঘাটিতে একটি মিছিলের আয়োজন করেছিলেন। মিছিল শেষে কর্মীদের নিয়েই তিনি থানায় ঢুকে পড়েন। কর্মীরা থানা ঘেরাও করে মাটিতে বসে পড়েন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, এই ধরনের কোনও কর্মসূচির আগাম খবর থানায় ছিল না।

নিমাইবাবু ও মঙ্গলাদেবী ওসি-র কাছে অভিযোগ করেন, গঙ্গাজলঘাটি ব্লকে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইপুকুরকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের উপদ্রব বাড়ছে। উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগেই ছাইপুকুরে অবৈধ ভাবে দুষ্কৃতীরা ছাইয়ের ফেনা সংগ্রহ করছে, খবর পেয়ে মঙ্গলাদেবী তা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর উপরে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে ক্ষোভ মঙ্গলাদেবীর।

এ দিন থানা থেকে বেরিয়ে নিমাইবাবু অভিযোগ করেন, “এলাকায় দুষ্কৃতীরা দিনের আলোয় দৌরাত্ম চালাচ্ছে। আসানসোল থেকে মাফিয়া চক্রের দলবল ব্লকে ঢুকে নানা অবৈধ কাজ করছে। কিন্তু, পুলিশ সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। আমরা এই ঘটনার বিরুদ্ধেই এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছি।” মঙ্গলাদেবী বলেন, “আমি শাসক দলের জেলা পরিষদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দুষ্কৃতীরা আমার উপরে হামলা করে পার পেয়ে গেল! আমার অভিযোগকেই পুলিশ পাত্তা দিচ্ছে না। তাহলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ তো শুনবেই না পুলিশ!” থানার ওসি সাত দিনের মধ্যে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জানিয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি, তিনি ব্যবস্থা না নিলে এ বার এসপি অফিস ঘেরাও করবেন তাঁরা। জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ এ দিন ফোন ধরেননি। জেলা সভাধিপতি বলেন, “নিমাই এখন জেলায় দলের কোনও পদে নেই। তবে, মঙ্গলা কিছু করলে তা আমাকে জানিয়েই করার কথা। ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।”

জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, মঙ্গলাদেবীর তোলা অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁর অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে। এলাকার পরিস্থিতিও শান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police station gherao tmc bjp bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE