Advertisement
E-Paper

ঐতিহ্যে অমলিন দেখুড়িয়ার পুজো

কেউ বলে আঠারো হাতের কালী। কেউ বা বলে তারও বেশি। আসলে রামপুরহাট থানার দেখুড়িয়া গ্রামের বিশাল আকারের কালী প্রতিমা যাঁরাই দেখেছেন তাঁরা স্মৃতি থেকে এলাকার নাম স্মরণ করতে না পারলেও কালীঠাকুরের চেহারা আজও তাঁদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৭
তখনও শেষ হয়নি প্রতিমা তৈরি। ছবি: অনির্বাণ সেন।

তখনও শেষ হয়নি প্রতিমা তৈরি। ছবি: অনির্বাণ সেন।

কেউ বলে আঠারো হাতের কালী। কেউ বা বলে তারও বেশি। আসলে রামপুরহাট থানার দেখুড়িয়া গ্রামের বিশাল আকারের কালী প্রতিমা যাঁরাই দেখেছেন তাঁরা স্মৃতি থেকে এলাকার নাম স্মরণ করতে না পারলেও কালীঠাকুরের চেহারা আজও তাঁদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই একই ঐতিহ্য আভিজাত্য আজও সমান তালে বজায় রেখেছেন রামপুরহাট থানার দেখুড়িয়া গ্রামের এই কালীপুজোর উদ্যোক্তারা। গ্রামবাসী বসন্ত মুখোপাধ্যায় জানালেন, গ্রামের ভট্টাচার্য এবং মুখোপাধ্যায় বাড়ির পাঁচ শরিকের এই পুজো গ্রামের এখন কুলদেবতা। এই দিগম্বরা মা কালী গ্রামবাসীর কাছে যেমন গ্রাম্যদেবী তেমনই আশপাশ এলাকা শুধু নয় দূর দূরান্তের ভক্তদের কাছে যথেষ্ট সমাদৃত। স্বমহিমায় দেখুড়িয়ার কালী আজও চারশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত পঞ্চমুন্ডির আসনে বিরাজ করেন।”

দেখুড়িয়ার কালী পুজোর স্থান এখন ৩০ ফুট উচ্চতার পাকামণ্ডপ হয়েছে। পাকা দালানের মণ্ডপ ঘিরে নির্মাণ হয়েছে সুউচ্চ লোহার গেট। পুজোর শরিকেনরা জানালেন, আগে কেবলমাত্র মা কালীর পঞ্চমুন্ডির আসন লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা ছিল। মাথার উপর ছাউনি ছিল না। দশ বছর আগে পুজোর শরিকদের উদ্যোগে এবং ভক্তদের দানে মন্দির সংস্কার হয়েছে। পুজোর শরিক তপন ভটাচার্য জানালেন, আগে দেখুড়িয়া গ্রামে চতুষ্পাঠি শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। গুরুগৃহে থেকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আজও অনেকে নিজের নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে কাজ করছেন। এখনও তারাপীঠের সেবাইত বা পাণ্ডারা দেখুড়িয়ার গুরুগৃহে দীক্ষা নিয়ে পুজার্চনা শুরু করেন। আজ থেকে চারশো বছর আগে দেখুড়িয়া গ্রামের জমিদার শতঞ্জীব ভট্টাচার্য এই পঞ্চমুন্ডির বেদী নির্মাণ করেন এবং কাশী থেকে শিলামূর্তি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠিত করেন। বংশ পরম্পরায় শতঞ্জীব ভট্টাচার্যের বংশের পাঁচ শরিক এই পুজো এখন চালিয়ে যাচ্ছেন। অরূপ মুখোপাধ্যায় নামে আর এক শরিক জানালেন, পাঁচ শরিকের মধ্যে ভাগ করে এখানে নিত্য পুজো হয়।

কালীপুজোর দিন দুপুরে দেখুড়িয়ার কালী মন্দিরে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চমুন্ডির আসনের সামনে শিলামূর্তিকে ভালভাবে মোছার কাজ চলছে। বেদীতে তখনও মা কালীকে ওঠানো হয়নি। মৃত্‌শিল্পী তখনও মায়ের গায়ে রঙ চড়াচ্ছেন। তারাপীঠ ঘুরতে এসে ভক্তের দল কালী পুজোর দিন দেখুড়িয়ার কালী দর্শন করেও যাচ্ছেন। শরিক চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনেকে ধারণা বশত মাকে আঠারো হাতের কালীর রূপ দিয়ে থাকেন। আসলে তা নয়। তবে উচ্চতায় বড় মাপের এ টুকু বলা যেতে পারে।”

দেখুড়িয়ার কালী যেমন সুউচ্চ তেমনি শ্যামবর্ণা। মাকালীর ধ্যানের উপর ভিত্তি করে এই মায়ের এই রঙ আজও সমান ভাবে বংশ পরম্পরায় বজায় রেখেছেন গ্রামের মৃত্‌শিল্পী। পুজোর আর এক শরিক মৃনালাভ চট্টোপাধ্যায়, তন্ময় মুখোপাধ্যায়রা বললেন, “কালীপুজোর জন্য প্রতিমা তৈরি, শিল্পী, ঢাকি, কোটালদের জন্য বসত বাড়ির জায়গা-সহ জমি সেই জমিদার আমল থেকে দেওয়া আছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সেই জায়গা জমি রাখতে পেরেছেন কেউ বা রাখতে পারেননি। তবে এখনও সমান ঐতিহ্যে বংশ পরম্পরায় জমিদার আমলের মৃত্‌শিল্পী, ঢাকি, কোটালদের পরিবারের সদস্যরা সমান ভাবে পুজোতে অংশগ্রহণ করে থাকেন।” এখনও আভিজাত্য বজায় রেখে দেখুড়িয়ার সুউচ্চ কালীর ডাকের সাজ রামপুরহাট থানার খরুণ গ্রামের মালাকার শিল্পীরা করে আসছেন। সন্ধ্যায় মালাকাররা সুসজ্জিত করে সাজানোর পর দেবীকে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসানো হয়। আর সকলের কাঁদে চড়ে দিনের বেলায় মা কালীর বিসর্জন করা এখনও দেখুড়িয়া গ্রামবাসীর প্রাচীন ঐতিহ্য এবং আভিজাত্য।

dekhuria kali puja rampurhat apurba chattopadhay apoorba chattopadhay kali pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy