Advertisement
E-Paper

খেত ভরেছে সূর্যমুখী, চিন্তা তেল মিল নিয়ে

খেতে ফলন দেখে ওঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। সেই সঙ্গে বাড়িয়েছে দুশ্চিন্তাও। ওঁরা খয়রাশোলের কয়েক জন চাষি। কৃষি দফতরের ‘আত্মা’ (এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি) প্রকল্পে এ বার খয়রাশোলে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। কিন্তু ভাল ফলন হলেও এলাকায় সূর্যমুখী পেশাইয়ের উপযুক্ত তেল মিল নেই। তার উপর রয়েছে টিয়াপাখির উৎপাত। তাই উৎপাদিত তেল বিক্রি করে তুলনায় কম টাকা রোজগারের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০১
খয়রাশোলের বালিতা গ্রামে সূর্যমুখী চাষের ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

খয়রাশোলের বালিতা গ্রামে সূর্যমুখী চাষের ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

খেতে ফলন দেখে ওঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। সেই সঙ্গে বাড়িয়েছে দুশ্চিন্তাও। ওঁরা খয়রাশোলের কয়েক জন চাষি। কৃষি দফতরের ‘আত্মা’ (এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি) প্রকল্পে এ বার খয়রাশোলে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। কিন্তু ভাল ফলন হলেও এলাকায় সূর্যমুখী পেশাইয়ের উপযুক্ত তেল মিল নেই। তার উপর রয়েছে টিয়াপাখির উৎপাত। তাই উৎপাদিত তেল বিক্রি করে তুলনায় কম টাকা রোজগারের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

চাষি ও কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় খেতে সূর্যমুখীর বীজ বপন করা হয়েছিল। ফসল ঘরে তোলা যাবে এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথম দিকে। নিজের খেতে ওই চাষ করতে বিশেষ সমস্যা বা খরচ নেই। এক জন চাষি বিঘা প্রতি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করে দেড় কুইন্ট্যাল পর্যন্ত তৈলবীজ পেতে পারেন।

এমনিতে দু’একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগকে বাদ দিলে খয়রাশোলে সূর্যমুখীর চাষ খুব একটা হয় না। কিন্তু পরীক্ষামূলক ভাবে চলতি মরসুমে অজয় নদ ঘেঁষা রশিদপুর, ফতেপুর ও বালিতা গ্রাম থেকে ওই পাঁচ চাষিকে বেছে নিয়ে প্রদর্শন ক্ষেত্র করিয়েছে ব্লক কৃষি দফতর। উদ্দেশ্য এ রকম একটি বিকল্প ও অর্থকরী চাষে চাষিদের আগ্রহী করে তোলা। রবিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, যাঁদের জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে, প্রত্যেকের যথেষ্ট ভাল ফলন হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলার কথা। কিন্তু ফলন ভাল হলেও চাষ নিয়ে মূলত দু’টি সমস্যার কথা চাষিরা তুলে ধরছেন। তাঁদের মত, এলাকায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ ভবিষ্যতে অন্য চাষিদের মধ্যে কতটা জনপ্রিয় হবে, তা নির্ভর করছে সমস্যাগুলির মেটার উপরেই।

খয়রাশোলের ওই বিশেষ প্রদর্শন ক্ষেত্রে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন ফতেপুর গ্রামের ফাল্গুনী পাল, বালিতা গ্রামের অজয় পাল রশিদপুরের সুশান্ত সাঁইরা। তাঁরা বলেন, “সকাল-বিকেল সূর্যমুখী খেতে টিয়াপাখির মিলিত আক্রমণে বীজ পেকে যাওয়া ফসল জমিতে রাখা খুবই সমস্যার। দু’বেলা পাহারা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আমরা।” একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথাও তাঁরা জানালেন। ওই এলাকায় সূর্যমুখী বীজ পেষাই করার জন্য যথোপযুক্ত তেলমিল নেই। তাই স্থানীয় কিছু সাধারণ তেলমিলের উপরেই তাঁদের নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু ওই চাষিরা বলছেন, “ওই সব তেল মিলে ফুল থেকে সংগৃহীত বীজ পেষাই করে যে পরিমাণ তেল পাওয়া যায়, তা তুলনায় অনেক কম। অথচ সূর্যমুখীর জন্য নির্দিষ্ট তেল মিলে তা পেষাই করলে দ্বিগুন তেল মিলত।” অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জানান, এলাকার সরষে মিলে বা ঘানিতে সূর্যমুখী বীজ পেষাই করে কেজি প্রতি ২৫০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়। অথচ সঠিক ভাবে পেষাই হলে তা কেজি প্রতি ৪৫০ গ্রাম অবধি মেলার কথা।

ইতিমধ্যেই টিয়াপাখির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে একটি পদ্ধতি বের করে ফেলেছেন ফাল্গুনীরা। পরিণত ফুলকে তাঁরা একটি করে কালো প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। তাতে টিয়াপাখিরা কম ফসল নষ্ট করছে। এখন তেল নিষ্কাশনের উপযুক্ত যন্ত্র এলাকায় চলে এলে এই চাষ অনেক জনপ্রিয় হবে বলে তাঁদের অভিমত। এ দিকে, খয়রাশোলের ব্লক সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবব্রত আচার্য বলেন, “সূর্যমুখী খেতে টিয়া পাখির আক্রমণ হয়েই থাকে। প্লাস্টিক ব্যাগ ঝুলিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহত করা যেতে পারে। এ ছাড়াও বিক্ষিপ্ত ভাবে সূর্যমুখী চাষ না করে এলাকার কয়েক জন চাষি যদি মিলিত ভাবে অনেকটা জমিতে এই চাষ করেন তা হলেও চাষিরা পালা করে জমির দেখভাল করতে পারবেন।” অন্য দিকে, সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল নিষ্কাষন প্রসঙ্গে দেবব্রতবাবু বলছেন, “এলাকায় ওই চাষ তো সবে শুরু হল। আরও বেশি করে চাষ হোক। তখন বীজ বিক্রি করা বা তেল তৈরির সমস্যা মেটানো যাবে। চাষিরা বাইরে থেকে বহু ক্রেতাও পেয়ে যাবেন।”

sunflower agriculture khayrasole
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy