Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

খুনিদের রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার, দাবি পুলিশের

তৃণমূল নেতা বিকাশ দত্ত ও তাঁর বাবাকে খুনের ঘটনার তদন্তে আরও একধাপ এগোলো পুলিশ। তাদের দাবি, আততায়ীদের রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার করা গিয়েছে। পাশাপাশি জোড়া খুনে ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বিকাশবাবুর মোবাইলও।

এ বার পুজোতেও বাসিন্দাদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছিলেন বিকাশ দত্ত। মুকুল রায়কে সে ছবিই দেখাচ্ছেন পরিজনেরা।—নিজস্ব চিত্র।

এ বার পুজোতেও বাসিন্দাদের সঙ্গে আনন্দে মেতেছিলেন বিকাশ দত্ত। মুকুল রায়কে সে ছবিই দেখাচ্ছেন পরিজনেরা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইঁদপুর শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

তৃণমূল নেতা বিকাশ দত্ত ও তাঁর বাবাকে খুনের ঘটনার তদন্তে আরও একধাপ এগোলো পুলিশ। তাদের দাবি, আততায়ীদের রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার করা গিয়েছে। পাশাপাশি জোড়া খুনে ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বিকাশবাবুর মোবাইলও।

পুলিশের দাবি, ইঁদপুরের হাটগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি বিকাশবাবুকে খুন করার পর তাঁর মোবাইলটি হাতিয়ে নেয় আততায়ীরা। তার পর আলাদা আলাদা হয়ে চম্পট দেয়। আততায়ীদের মধ্যে অনেকেই খুনের ঘটনাস্থলের থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রক্তমাখা পোশাক ফেলে দিয়েছিল। অনেকে আবার আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে পোশাক বদলে ফেলেছিল। পোশাক বদলে আততায়ীদের একাংশ পাশের ব্লক ছাতনার কমলপুরে পুজো উপলক্ষে আয়োজিত ‘অর্কেস্ট্রা’ অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিল বলেও ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশের আরও দাবি, জেরায় তারা জেনেছে, আততায়ীদের কয়েক জন হাটগ্রামেই ছিল। আবার গ্রামের বাইরে গিয়েও গা ঢাকা দিয়েছিল কিছু জন।

শনিবার রাতে বাড়ি থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরের ধান জমিতে জল দিতে গিয়েছিলেন বিকাশবাবু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা মুকুন্দ দত্ত। তার পর আর বাড়ি ফেরেননি দু’জনে। ওই রাতেই পরিবারের লোকজন ধান জমির অদূরে শ্মশান সংলগ্ন একটি ডোবা থেকে বিকাশবাবু ও তাঁর বাবার গলার নলিকাটা দেহ দেখতে পান। জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমবার পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত, হাটগ্রামেরই বাসিন্দা বাপি প্রামাণিক-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আরও ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “তদন্তের কাজ প্রায় শেষের মুখে। আরও কিছু লোক এই খুনের সঙ্গে জড়িত। তাদের খোঁজ চলছে।”

বিকাশবাবুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে মঙ্গলবার গ্রামে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। বাড়িতে গিয়ে তিনি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবারটিকে সব রকম সাহায্য করার আশ্বাস দেন। পরে মুকুলবাবু গ্রামেই শোকসভা করেন। সেখানে তিনি এই খুনের ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক’ বলেই দাবি করেন। তিনি বলেন, “আমাদের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বিকাশ। বাম আমলে সিপিএম নেতাদের লালচোখের হুমকির সামনে পড়েও দলের সংগঠন মজবুত করেছেন। রাজনৈতিক কারণেই সিপিএম-বিজেপি তাঁকে খুন করল।” দোষীদের কড়া শাস্তি হবে বলেও সভায় জানান মুকুলবাবু।

জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথম থেকেই বিকাশবাবুর খুনকে ‘রাজনৈতিক’ হিসাবে দাবি করেছেন। যদিও নিহতদের পরিবার গোড়া থেকে এই খুনের পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে বলে জানিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশও সেই আক্রোশের তত্ত্বই পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে এসে মুকুলবাবুও খুনের পিছনে ‘রাজনৈতিক কারণ’ রয়েছে বলে দাবি করায় বিরোধীরা পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “উনি বাজে কথা বকছেন। ভুলে যাচ্ছেন, সিপিএম ও বিজেপি দু’টি পৃথক দল। ওঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে, শোকগ্রস্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে নয়, বরং সুযোগ বুঝে রাজনীতি করতেই গ্রামে এসেছিলেন তিনি।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “এই খুনের পিছনে বিরোধী দল যে জড়িত নয়, তা আগেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। যাদের পুলিশ ধরছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখলেই প্রকৃত ঘটনা বোঝা যাবে। একটি শোকগ্রস্ত গ্রামে এসে এই সব কথা বলে মুকুলবাবু দলীয় কর্মীদের প্ররোচনা দিচ্ছেন বলেই আমার মনে হচ্ছে।” যদিও মুকুলবাবুর গ্রামে আসায় এই অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীদের মনোবল বেড়েছে বলেই জানাচ্ছেন ইঁদপুর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অসিত লায়েক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE