Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ঘুমন্ত মহিলার গায়ে অ্যাসিড, ধৃত স্বামী

অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, এই সন্দেহের বশে ঘুমন্ত অবস্থায় এক মহিলার শরীরে অ্যাসিড ছুড়ে হামলার অভিযোগ উঠল তাঁরই স্বামীর বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে বীরভূমের নলহাটি থানার আটকুলা গ্রামের ঘটনা। মহিলার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সোমবার পেশায় গ্যারাজ মিস্ত্রি তাঁর স্বামী তরুণ ফুলমালিকে গ্রেফতার করেছে। রাতেই জখম অবস্থায় ওই মহিলাকে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, এই সন্দেহের বশে ঘুমন্ত অবস্থায় এক মহিলার শরীরে অ্যাসিড ছুড়ে হামলার অভিযোগ উঠল তাঁরই স্বামীর বিরুদ্ধে।

রবিবার রাতে বীরভূমের নলহাটি থানার আটকুলা গ্রামের ঘটনা। মহিলার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সোমবার পেশায় গ্যারাজ মিস্ত্রি তাঁর স্বামী তরুণ ফুলমালিকে গ্রেফতার করেছে। রাতেই জখম অবস্থায় ওই মহিলাকে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অ্যাসিডে মহিলার মুখ ও বুকের কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছে। চক্ষু বিশেষজ্ঞ সুব্রত কর বলেন, “মহিলার দু’ চোখের কর্নিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।” এ দিনই তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বীরভূমের পুলিশ সুুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “ঠিক কে অ্যাসিড ছুড়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে, আক্রান্ত মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। কোন প্রকারের অ্যাসিড দিয়ে হামলা হয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত এক বছর ধরে ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর স্বামীর কোনও সম্পর্ক নেই। বছর ৩৫-এর ওই মহিলা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি পাশের গ্রামে থাকেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মহিলা বর্তমানে স্থানীয় পঞ্চায়েতে অস্থায়ী কর্মীর কাজ করে সংসার চালান। এ দিন হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন ওই মহিলা ক্ষোভের সুরে বলেন, “বিয়ের পর থেকেই স্বামী আমাকে সন্দেহের চোখে দেখেন। তিন ছেলেমেয়ের মা হওয়ার পরেও সেই সন্দেহ যায়নি। মেয়ের বিয়ের পর থেকে স্বামীর সন্দেহবাতিকতা চরমে পৌঁছয়। ন’মাস আগে তিনি আমাকে আলাদা করে দেন। আমার ভরণপোষণের কোনও দায়িত্বই নেননি।” সেই স্বামীই যে তাঁর সঙ্গে এমন কিছু করতে পারেন, তা তিনি দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি বলে ওই মহিলা ক্ষোভের সুরে জানালেন।

রবিবার রাতে ঠিক কী ঘটেছিল?

মহিলা জানান, রাতের খাওয়া সেরে ছোট ছেলেকে নিয়ে ঘরের ভিতরে ঘুমিয়েছিলেন। বাইরে বারান্দায় শুয়েছিলেন বড় ছেলে। ঘরের দরজা ভেজানোই ছিল। তাঁর কথায়, “তখন ১১টা হবে। আমি ঘুমিয়েই ছিলাম। হঠাৎ মুখ আর বুকের উপরে গলার নীচের অংশটা জ্বলতে শুরু করল। চোখ খুলতেই অন্ধকার। কিচ্ছু বুঝতে পারছিলাম না। আমি চিৎকার করে ধড়ফড়িয়ে উঠতেই বুঝতে পারলাম পাশে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল। জেগে যেতেই ছুটে পালিয়ে গেল।” মায়ের চিৎকার শুনে ছেলেদেরও ঘুম ভেঙে যায়। মায়ের শরীর পুড়ে যেতে দেখে তাঁরাও চিৎকার জুড়ে দেন। ততক্ষণে পাড়াপ্রতিবেশীও জুটে যায়। গভীর রাতেই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আক্রান্ত মহিলার অভিযোগ, “আমার কোনও শত্রু নেই। এই কাজ আমার সন্দেহবাতিক স্বামীরই।”

মহিলার দুই ছেলের দাবি, ঘটনার পরে ওই রাতেই তাঁরা পাশের গ্রামে বাবার বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে তিনি ছিলেন না। এমনকী, বহুবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অনেক পরে ফোন ধরে তিনি জানান, মুর্শিদাবাদে পাঁচগ্রামে রয়েছেন। মহিলার ছোট ছেলে বলে, “মাকে সংসার চালানোর জন্য বাবা কোনও টাকা দিতেন না। উল্টে আমাদের সামনেই মাকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতেন।” তাঁর দাবি, গ্যারাজে ঝালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড দিয়ে তাঁর বাবা-ই মায়ের উপর হামলা করেছেন।

মহিলার স্বামী অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি গরিব ঘরের ছেলে। খেটে খাই। কাজের সূত্রেই রবিবার বাড়িতে ছিলাম না। স্ত্রীর উপর হামলা করিনি।” তাঁর পাল্টা দাবি, টাকাপয়সা নিয়ে স্ত্রীর অনেক চাহিদা। সে কারণেই তিনি গ্রামের অন্য এক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, “ওই সম্পর্কের ব্যাপারে প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু স্ত্রী নিজেকে পাল্টাননি। তাই তাঁকে অন্যত্র চলে যেতে বলেছিলাম। হামলার পিছনে গ্রামের ওই ছেলেটির পরিবারের কারও হাতও থাকতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nalhati acid attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE