Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ছাতনায় ঘরেই পুড়ে মৃত্যু ছাত্রীর

মা-বাবা গিয়েছিলেন মাঠে কাজ করতে। বাড়িতে দরজায় খিল এঁটে পড়াশোনা করছিল তাঁদের মেয়ে। ঘণ্টাখানেক পরে সেই বাড়ির ভিতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে বাসিন্দারা দৌড়ে গিয়ে দেখেন আগুনে পুড়ে সেই মেয়ে ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে। বাড়ির অনেক জিনিসপত্রও পুড়ে ছাই। বাসিন্দারাই নিজেরা জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। আসে দমকল, আসে পুলিশও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ছাতনা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৬
Share: Save:

মা-বাবা গিয়েছিলেন মাঠে কাজ করতে। বাড়িতে দরজায় খিল এঁটে পড়াশোনা করছিল তাঁদের মেয়ে।

ঘণ্টাখানেক পরে সেই বাড়ির ভিতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে বাসিন্দারা দৌড়ে গিয়ে দেখেন আগুনে পুড়ে সেই মেয়ে ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে। বাড়ির অনেক জিনিসপত্রও পুড়ে ছাই। বাসিন্দারাই নিজেরা জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। আসে দমকল, আসে পুলিশও।

মঙ্গলবার দুপুরে ছাতনার দুবরাজপুর গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে মৃত কিশোরীর নাম সান্ত্বনা গড়াই (১৪)। সে ছাতনার বাসুলি বালিকা বাণীপিঠে নবম শ্রেণিতে পড়ত। বিদ্যুতের লাইনে শর্টসার্কিট থেকেই বাড়িতে আগুন লাগে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে দমকল ও পুলিশ। মৃতের পরিবারেরও তেমনই ধারণা। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে।

সান্ত্বনার বাবা গুরুপদ গড়াই ও মা মিঠু গড়াই দু’জনেই ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না। তাঁরা ভাগচাষি। ছেলে আকাশকে নিয়ে তাঁরা চাষ করতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে সান্ত্বনা একাই ছিল। এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, দুপুরে বাড়ি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন রান্নার উনুনের ধোঁয়া। কিন্তু পরে ধোঁয়া ক্রমশ বাড়তে থাকায় তাঁদের সন্দেহ হয়। গুরুপদবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁরা দেখেন বাড়িতে আগুন লেগেছে। ঘরের দরজা ভেঙে তাঁরা ভিতরে ঢুকে দেখেন ঘরের মেঝেতে সান্ত্বনার অগ্নিদগ্ধ দেহ পড়ে রয়েছে। ঘরের ইলেকট্রিক তার, টিভি-সহ বিছানাপত্র সবই পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে। গুরুপদবাবুদের একটিই ঘর, টিনের ছাদ ও সিমেন্টের দেওয়াল। রান্না হয় ঘুঁটে, শুকনো কাঠ, ডাল-পালা দিয়ে। ঘরের ভিতরেই সে সব মজুত করে রাখা ছিল। আগুনে সে সবই পুড়ে গিয়েছে।

বাসিন্দারা জানান, ওই বাড়িতে কাঠ জ্বেলে রান্না হয় বলে তাঁরা ধোঁয়া দেখে প্রথমে রান্না বসানো হয়েছে বলে ভেবেছিলেন। পরে ধোঁয়া বাড়ায় তাঁদের সন্দেহ হয়। পরে ঘটনাটি জানতে পেরে গ্রামবাসী অগ্নিকাণ্ডের খবর দেন দমকল ও পুলিশকে। নিজেরাও জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। দমকলের একটি ইঞ্জিন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ফোন করে গ্রামবাসী খবর দেন গুরুপদবাবুকে। ঘটনার কথা শুনে স্ত্রীকে নিয়ে ছুটে বাড়িতে যান তাঁরা। গিয়ে দেখেন সব শেষ হয়ে গিয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়েন দম্পতি।

বাসুদেববাবু বলেন, “আমরা যখন কাজে বের হই মেয়ে তখন পড়াশোনা করছিল। স্কুলে পরীক্ষা চলছে তার। আমরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে ঘরের দরজায় খিল দেয় সে। হাসিমুখে মেয়েটাকে দেখে বের হয়েছিলাম। ভাবতেই পারিনি এসে তাকে এই অবস্থায় দেখব।” শোকে আত্মহারা মিঠুদেবীও। তাঁর আক্ষেপ, “এই মেয়েটিই আমাদের বড় ভরসা ছিল। তাকে শিক্ষিত করব বলে দিনরাত এক করে আমরা টাকা-পয়সা রোজগার করতাম। সব শেষ হয়ে গেল।” গুরুপদবাবুর দাবি, “শর্টসার্কিট থেকেই ঘরে আগুন লেগেছে বলে মনে হচ্ছে। আগুনের ধোঁয়ায় আটকে পড়ে মনে হয় সে ঘর থেকে বের হতে পারেনি।” পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মৃতের পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ছাতনার বিজেপি নেতা জীবন চক্রবর্তী। ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৌসুমি মিশ্রের আশ্বাস, “সান্ত্বনার পরিবারকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি জেলাশাসকে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chatna firing death student santana gorai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE