Advertisement
E-Paper

ছ’মাস কাজ নেই, অবরোধ শ্রমিকদের

ছ’মাস ধরে কাজ নেই। বিভিন্ন মহলে আবেদন করেও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত পথ অবরোধ করলেন ভারতীয় খাদ্য নিগমের (এফসিআই) আদ্রার গুদামের ঠিকা শ্রমিকরা। সোমবার সিটুর নেতৃত্বে রঘুনাথপুর শহরে বাসস্ট্যান্ডের কাছ পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন শতাধিক শ্রমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:৩২
অবরোধে সামিল প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া এবং সিটু নেতারা।  —নিজস্ব চিত্র

অবরোধে সামিল প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া এবং সিটু নেতারা। —নিজস্ব চিত্র

ছ’মাস ধরে কাজ নেই। বিভিন্ন মহলে আবেদন করেও ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত পথ অবরোধ করলেন ভারতীয় খাদ্য নিগমের (এফসিআই) আদ্রার গুদামের ঠিকা শ্রমিকরা। সোমবার সিটুর নেতৃত্বে রঘুনাথপুর শহরে বাসস্ট্যান্ডের কাছ পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন শতাধিক শ্রমিক। অবরোধের নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া এবং সিটুর পুরুলিয়া জেলা নেতারা। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রাজ্য সড়ক অবরোধ হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত এসে চলতি সপ্তাহের মধ্যে এফসিআই কর্তৃপক্ষকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার আশ্বাস দেওয়ায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

আদ্রা রেলশহরের উপকন্ঠে আড়রা গ্রামের পাশে এফসিআইয়ের গুদামটি পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বড় গুদাম। প্রায় এক লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত করার ক্ষমতা রয়েছে এই গুদামে। গত চার বছর ধরে গুদামে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ (কাজ না হলে মজুরি নয়), এই পদ্ধতিতে কাজ করে আসছেন প্রায় ৩০০ জন ঠিকা শ্রমিক। সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। এই শ্রমিকদের অভিযোগ, ছয় মাস ধরে গুদামে খাদ্যশস্য মজুতের কাজ বন্ধ রেখেছেন এফসিআই কর্তৃপক্ষ। ফলে তাঁরা রুজিহীন হয়ে পড়েছেন। গুদামে এফসিআই মজদুর ইউনিয়ন নামে শ্রমিকদের একমাত্র সংগঠনটি রয়েছে সিটুর দখলে। সংগঠনের সম্পাদক প্রবোধ কুম্ভকারের অভিযোগ, “ছ’মাস ধরেই আমরা শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়ে গুদামের আধিকারিক থেকে শুরু করে এফসিআইয়ের বাঁকুড়া এরিয়া ম্যানেজার, কলকাতায় আঞ্চলিক কার্যালয়ের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে আসছি। কিন্তু, কেউই শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে, কাজ হারিয়ে ছ’মাস ধরে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে শ্রমিকদের পরিবার।” শ্রমিকদের মধ্যে কালীপদ বাউরি, মোহান্ত বাউরিরা বলেন, “গুদামেও কাজ নেই। আবার আমরা এফসিআইয়ের নথিবদ্ধ শ্রমিক বলে এলাকায় একশো দিনের কাজ-সহ অন্য কাজও পাচ্ছি না। এই অবস্থায় সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

আগে এই গুদামে ঠিকা প্রথায় কাজ করতেন শ্রমিকেরা। ২০১০ সাল থেকে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ পদ্ধতি শুরু হয়। শ্রমিকদের মধ্যে তিন জনের একটি কমিটি গড়ে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছিল। সিটু নেতা তথা এফসিআইয়ের শ্রমিক সংগঠনটির সভাপতি প্রদীপ রায় বলেন, “সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কাজ না করলে মজুরি পাবেন না শ্রমিকরা। কিন্তু, এটাও ঠিক হয়েছিল যে, মাসে ন্যূনতম ২৬ দিন কাজ পাবেন শ্রমিকরা। আর কাজের মজুরি হবে কেন্দ্রীয় সরকারের মজুরির হারে। যেহেতু ঠিকাদারের আওতায় কাজ করলে মজুরি-সহ অন্য সুযোগ-সুবিধ থেকে স্রমিকেরা বঞ্চিত হচ্ছিলেন, তাই আমরা এফসিআইয়ের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম।” প্রদীপবাবুর অভিযোগ, বর্তমানে এফসিআই কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত ভাবে গুদামে খাদ্যশস্য মজুত করা বন্ধ করে শ্রমিকদের সমস্যায় ফেলেছে।

এ দিন প্রশাসনকে আগাম কিছু না জানিয়েই সিটুর নেতৃত্বে মিছিল করে এসে রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। বাসুদেববাবু ছাড়াও সেখানে ছিলেন সিটুর জেলা সম্পাদক হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, সভাপতি তথা পুরুলিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক নিখিল মুখোপাধ্যায়। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দেড় ঘণ্টা রাস্তার উপরে বসে থাকতে দেখা যায় বাসুদেববাবুদের। প্রাক্তন সাংসদের অভিযোগ, “এনডিএ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের সঙ্গে এফসিআইয়ের আদ্রার গুদাম খোলার বিষয়ে টেলিফোনে কথা হওয়ার পরে তাঁকে চিঠি দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু, কোন ব্যবস্থাই কেন্দ্র নেয়নি। রাজ্য সরকারও শ্রমিকদের পরিবারগুলির সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়নি।”

অবরোধের খবর পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সিটু নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত। পরে তিনি বলেন, “শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়ে জানার পরেই গত এপ্রিল মাসে গুদামে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। সেই সময়ে ওঁরা জানিয়েছিলেন, গুদাম সংস্কারের কাজ চলায় খাদ্যশস্য মজুত রাখা বন্ধ হয়েছে। আমরা এফসিআই কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকব।” এফসিআই এর এক পদস্থ আধিকারিক এ দিন জানিয়েছেন, এখনও সংস্কারের কাজ চলছে বলেই গুদামটি বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজ শেষ হতে আরও এক মাস লাগবে। সে কথা শ্রমিকদেরও জানানো হয়েছে।

demontration labourer raghunathpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy