স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পরীক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।
অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে সোমবার বাড়িতে ফিরতেই প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চেলিয়ামার বধূ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ববিতা বাউরিকে বাড়ির লোকজন সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বান্দা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেই রাতেই এক শিশুর জন্ম দেন ববিতা। কিন্তু সে জন্য একটা বছর নষ্ট করতে রাজি হয়নি তিনি। সদ্যোজাতকে নিয়েই মঙ্গলবার ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসে পরীক্ষা দিলেন ওই পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষা শেষে ক্লান্ত ববিতার মন্তব্য, “আগের সব পরীক্ষাই ভাল হয়েছে। ফলে শেষ দু’টি পরীক্ষার জন্য আর একটা বছর নষ্ট করতে চাইনি। কষ্ট হবে জেনেও পরীক্ষায় বসেছিলাম। পরীক্ষার আগে বই দেখতে না পেলেও এ দিন ভৌতবিজ্ঞানের পরীক্ষাও ভালই হয়েছে।” হাসপাতালেই শেষ পরীক্ষার প্রস্তুতি এ দিন থেকেই নিতে শুরু করে দিয়েছেন তিনি।.
এক বছর আগে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বড়রা গ্রামের ববিতা বাউরির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পাশের চেলিয়ামার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর মহাবীর বাউরির। সন্তানসম্ভবা অবস্থাতেই এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল বড়রা অঞ্চল হাইস্কুলের ছাত্রী ববিতা। পরীক্ষার আসন পড়েছিল চেলিয়ামা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে মঙ্গলদায় ভরপুরনাথ জীউ হাইস্কুলে। ববিতার স্বামী বলেন, “সোমবার অঙ্ক পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে ফেরার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে স্ত্রী। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। রাতেই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে স্ত্রী। সেই ধকল কাটিয়ে ও পরীক্ষা দেবে ভাবতে পারিনি।”
শরীরের এই অবস্থায় এ দিন তাঁকে পরীক্ষায় বসতে বারণ করেছিলেন পরিজনদের অনেকেই। কিন্তু নাছোড় ববিতা জানিয়ে দেন, একটা বছর কিছুতেই তিনি নষ্ট করবেন না। মহাবীরবাবুর বলেন, “এই অবস্থায় অতক্ষণ ধরে স্ত্রী পরীক্ষা দিলে ওর শরীর আরও খারাপ করতে পারে বলে আমাদের মনে হয়েছিল। কিন্তু ওর ইচ্ছা দেখে আর আপত্তি করতে পারিনি।”
সদ্যোজাতকে কখনও কোলে নিয়ে, কখনও বা আত্মীয়দের কোলে দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন ববিতা। সে.খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন বড়রা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ববিতা মনোযোগী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। সন্তান প্রসব হওয়ার পরেও সে পরীক্ষা দিতে চাইছে জেনে বিষয়টি মঙ্গলদা স্কুলের সেন্টার ইনচার্জকে জানাই। এই অবস্থায় স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।”
মঙ্গলদা পরীক্ষা কেন্দ্রের ইনচার্জ তথা আদ্রা চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুধাংশু শেখর চক্রবর্তী বলেন, “খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওই ছাত্রীটিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আলাদা করে পরীক্ষা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করে হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তিনি পরীক্ষা শেষ করে উত্তরপত্র উপস্থিত শিক্ষকের কাছে জমা দিয়েছেন।” রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বিএমওএইচ পলাশ মল্লিক বলেন, “মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ রয়েছে। ছাত্রীটির সমস্যা হতে পারে ভেবে তাঁর কাছে সব সময়ের জন্য একজন নার্স রাখা হয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy