চড়া দামেই বিকিকিনি। পুরুলিয়ার বড়হাটে। —নিজস্ব চিত্র
কোথাও ২০ টাকা, কোথাও ২২ টাকা। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির এক দিনের কর্মবিরতির ঠিক পরের দিনই মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বিভিন্ন বাজারে এই দামে কেজি প্রতি বিক্রি হল জ্যোতি আলুই! ক্রেতারা দরাদরি করেও দাম নামাতে না পেরে ব্যাজার মুখে ব্যাগে ভরলেন আলু। ফেরার পথে বাজারে সরকারি নজরদারি না থাকায় ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এই জেলায় আলুর উৎপান খুবই নগন্য। কাজেই বাঁকুড়ার কোতুলপুর, জয়পুর, জয়রামবাটী বা হুগলির কামারপুকুর এলাকার হিমঘরের উপরেই সারাবছর তাকিয়ে থাকেন পুরুলিয়া জেলার আলু ব্যবসায়ীরা। রাজ্যের সীমানায় আলু বোঝাই ট্রাক আটকে দেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার কর্মবিরতি পালন করে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। এর জেরে বাঁকুড়ার ওই সব এলাকার হিমঘর থেকে আলু বের করা হয়নি। পুরুলিয়া জেলা পাইকারী ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, সোমবার কর্মবিরতি চললেও তার জেরে এ দিন পুরুলিয়ার বাজারে কোনও প্রভাব পড়েনি। আলুর জোগান এ দিন স্বাভাবিক ছিল।
কিন্তু ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা, বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে বস্তা বস্তা আলু থাকলেও কর্মবিরতির মওকা বুঝে বিক্রেতারা দাম চড়িয়ে হেঁকেছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। পুরুলিয়া শহরের বড়হাট, অলঙ্গিডাঙা, খয়রাদুয়ার, আমলাপাড়া, স্টেশন বাজার-সহ বিভিন্ন বাজারের ঘুরে তেমনই ছবি দেখা গিয়েছে। কেজি প্রতি আলুর দর ২০ থেকে ২২ টাকায় ঘোরাফেরা করেছে। ক্রেতাদের বক্তব্য, “আলু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। সরকারি দরে পাব না জানি। ক’দিন ধরেই ১৯ টাকার আশেপাশে আলু বিক্রি হয়েছে। কিন্তু একদিনের কর্মবিরতির জন্য ২২ টাকায় সেই আলু কেন কিনতে হবে?” তাঁদের দাবি, এ দিন পুরুলিয়ার পাইকারী বাজারে আলু কুইন্ট্যাল প্রতি ১৬৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তা হলে খুচরো দামে এত তফাৎ কেন হবে? এই প্রেক্ষিতেই খোদ জেলা সদরে কেন সরকারি নজরদারি থাকবে না, তা নিয়ে ক্রেতারা প্রশ্ন তুলেছেন।
পুরুলিয়া পাইকারী আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রবীর সেন বলেন, “সাধারণ ভাবে পুরুলিয়ার বাজারে প্রতিদিন চাহিদা থাকে ১০ ট্রাক আলু। কর্মবিরতির জেরে এ দিন মাত্র তিন ট্রাক আলু পুরুলিয়ায় ঢুকেছে। সোমবার বেঁচেছিল পাঁচ ট্রাক। ফলে এ দিন চাহিদায় টান পড়েনি।” তিনি জানান, এ দিনও তাঁরা ১৬৮০ টাতা কুইন্ট্যাল দরেই আলু বিক্রি করেছেন। তবে খুচরো বাজারে এ দিন কোথাও কোথাও আলু একটু বেশি দামে বিক্রি হয়েছে বলে তাঁদের কাছেও খবর এসেছে। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ ভাবছেন পাইকারী বাজারে হয়তো দাম চড়েছে। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়।
তিনি আরও জানিয়েছে, বাঁকুড়ার যে সব বাজার থেকে পুরুলিয়ায় আলু আসে সেখানে এ দিন দাম খানিকটা কম থাকায় আজ, বুধবার আলুর পাইকারী দাম কিছুটা কমবে। পাইকারী ব্যবসায়ী সমিতির বক্তব্য, সরকারি আধিকারিকরা পাইকারী বাজারে নজর চালাচ্ছে। কিন্তু খুচরো বাজারে নজর চালালে আখেরে ক্রেতাদের সুবিধা হবে।
খুচরো বিক্রেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, পাইকারী বাজার থেকে আলু কিনে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বস্তায় ছোট, নষ্ট বা দাগি আলু থাকে। সে সব বাদ দিয়ে কম দামে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয়। যেমন পুরুলিয়ার অলঙ্গিডাঙা বাজারের হলধর মাহাতো বলেন, “সব খরচ সামলে ২২ টাকার কমে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয়। অল্প হলেও কিছু লাভ তো রাখতেই হবে।”
জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক সুধীর মাঝি অবশ্য দাবি করেছেন, “আমাদের লোকজন যথারীতি বাজারগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছেন। দাম বেশি হবার কথা নয়।” জেলা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে চড়া দামে বিক্রির উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে। গত বছর সঙ্কটের সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে এই জেলাতেও টাস্কফোর্স গড়া হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার বলেন, “আলু কোথাও কোথাও ২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে শুনেছি। বিভিন্ন বাজারে নজরদারি চালানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy