Advertisement
E-Paper

টাকা ফেরাতে চাপ, আত্মঘাতী এজেন্ট

বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতিশ্রুতিতে ভর করে এজেন্ট হিসাবে তিনি বহু লোকের কাছে লক্ষাধিক টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু, সারদা-কাণ্ডের জেরে টাকা ফেরত দিতে আমানতকারীরদের চাপ বাড়ছিল তাঁর উপরে। শেষ পর্যন্ত চরম পথই বেছে নিলেন ইনজামুল খান। রবিবার রাতে নিজের বাড়ি সংলগ্ন বাগানের কুয়ো থেকে ২৪ বছরের তরতাজা যুবক ইনজামুলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে শোকের ছায়া নেমেছে বাঁকুড়া সদর থানার সাপাগড়া এলাকায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০১:১৬
মৃত এজেন্ট ইনজামুল খানের (ইনসেটে) শোকার্ত বাবা-মা ও পরিজনের। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

মৃত এজেন্ট ইনজামুল খানের (ইনসেটে) শোকার্ত বাবা-মা ও পরিজনের। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতিশ্রুতিতে ভর করে এজেন্ট হিসাবে তিনি বহু লোকের কাছে লক্ষাধিক টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু, সারদা-কাণ্ডের জেরে টাকা ফেরত দিতে আমানতকারীরদের চাপ বাড়ছিল তাঁর উপরে। শেষ পর্যন্ত চরম পথই বেছে নিলেন ইনজামুল খান।

রবিবার রাতে নিজের বাড়ি সংলগ্ন বাগানের কুয়ো থেকে ২৪ বছরের তরতাজা যুবক ইনজামুলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে শোকের ছায়া নেমেছে বাঁকুড়া সদর থানার সাপাগড়া এলাকায়। পরিবার সূত্রের খবর, রোজভ্যালি ও হেমাঙ্গিনীএই দু’টি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে প্রায় তিন বছর ধরে যুক্ত ছিলেন ইনজামুল। এজেন্ট হিসেবে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। গ্রামে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবে খ্যাতি থাকায় তাঁকে বিশ্বাস করে মোটা অঙ্কের মুনাফার আশায় অনেকেই সংস্থাগুলিতে টাকা জমা রেখেছিলেন। সব হিসেব উলোটপালট হয়ে যায় সারদা কেলেঙ্কারির পরে। সংস্থাগুলির উপরে বিশ্বাসভঙ্গ হওয়ায় মেয়াদ শেষের আগেই অনেকে টাকা ফেরতের চাপ দিতে শুরু করেন ইনজামুলের উপরে।

পরিবারের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে টাকা চেয়ে চাপ অত্যধিক বেড়ে গিয়েছিল ইনজামুলের উপরে। এহেন পরিস্থিতিতে বাবা-মা, পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে হাতপেতে কিছু আমানতকারীকে নগদেও টাকা দিয়েছেন ওই যুবক। ইনজামুলের মা বেগম রকিয়া বিবি জানান, শনিবার দুর্গাপুরে একটি বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছে বলে বেরিয়েছিলেন ইনজামুল। রাতে বাড়ি ফেরার পরে একটি ফোন আসে তাঁর মোবাইলে। তার পর থেকেই কেমন গুম মেরে গিয়েছিলেন ওই যুবক। রকিয়া বিবির কথায়, “বাড়ির মধ্যে সারাদিন শুধু শুয়ে থাকত। আমরা জিজ্ঞাসা করলেও কিছুই বলত না। তবে, ওর ছোট কাকুকে বলেছিল টাকা ফেরতের জন্য ওকে ফোন করে এক জন হুমকি দিয়েছে।” তবে, বাড়ির ছেলে যে এমন পদক্ষেপ করতে পারে, তা আঁচ করতে পারেনি এই পরিবার। ঘটনার দিন টিভিতে বিশ্বকাপের খেলাও দেখেছেন ইনজামুল। সন্ধ্যায় তাঁকে বাড়ি সংলগ্ন বাগানের দিকে যেতে দেখেন কাকু আখতার খান। অনেক্ষণ ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। শেষে কুয়োপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বালতি নামানোর জন্য কপিকল ঝোলানোর রডে বালতি বাঁধার দড়ি গলায় ঝুলছে ইনজামুলের দেহ।

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মৃতের বাড়ির সামনে গ্রামবাসীদের জটলা। গ্রামের আনাচে কানাচে চর্চা ইনজামুলকে নিয়ে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করে লেখাপড়ার পর্ব শেষ করেছিলেন ওই যুবক। প্রাথমিক স্কুলের কিছু পড়ুয়াকে পড়িয়ে হাত খরচের টাকা জোটাতেন। কয়েক কাঠা পারিবারিক জমি রয়েছে তাঁদের। সেখানে অল্পবিস্তর চাষাবাদের কাজ হয়। দাদা মেহর আলি খান পেশায় দিনমজুর। রকিয়া বিবি বলেন, “মেহরের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিছু টাকা যৌতুক হিসেবে পাওয়া গেছে। সেই টাকার একটা অংশও আমানতকারীদের দিয়েছি। কিন্তু, সব টাকা শোধ করার মতো আর্থিক পরিস্থিতি আমাদের ছিল না। তা হলে ছেলেটাকে মরতে হত না!”

ইনজামুলের মামা সেখ আবদুল রাকিবও জানান, আমানতকারীদের জন্য তাঁর ভাগ্নে চাপে ছিলেন। তবে, ভাগ্নেকে মাথা ঠান্ডা রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। রাকিব বলেন, “শনিবার ফোনে হুমকি পাওয়ার কথা ইনজামুল ছোট কাকা হুমায়ুন খানকে বলেছিল। হুমায়ুন তাকে কিছু টাকা দেবে বলেও জানায়। তার পরেও কেন ছেলেটা আত্মহত্যা করল, বুঝতে পারছি না।”

বাঁকুড়া জেলায় রোজভ্যালির একটি শাখার ম্যানেজারের কথায়, “আমাদের সংস্থার হয়ে লাখ দু’য়েকের মতো টাকা তুলেছিল ইনজামুল। তবে হেমাঙ্গিনীর জন্য অনেক বেশি টাকা বাজার থেকে ও তুলেছিল বলে জেনেছি।” তবে, শনিবার দুর্গাপুরে রোজভ্যালির কোনও বৈঠক ছিল না বলে দাবি ওই ম্যানেজারের। তবে কি হেমাঙ্গিনীর বৈঠকেই যোগ দিতে গিয়েছিল ইনজামুল? উত্তর মেলেনি। এই সংস্থার কোনও কর্মী বা কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে হিমাঙ্গিনীর নিজস্ব পেজে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সেখানেও বহু আমানতকারী নিজেদের টাকা ফেরত চেয়ে পোস্ট করেছেন। রোজভ্যালির ওই ওই শাখা ম্যানেজার বলেন, “ধীরে ধীরে হলেও রোজভ্যালি আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে। তদন্তের কারণে সংস্থার অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হত সেপ্টেম্বর থেকে টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু হিমাঙ্গিনী কোনও টাকাই ফেরত দিচ্ছে না। হতে পারে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বুঝে ইনজামুল চরম পথ বেছে নিয়েছে।”

একই অনুমান মৃতের পরিবারেরও। সোমবার তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের পরে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, পরিবারের তরফে থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি। ইনজামুলের বাবা ইউসুফ খানের খেদ, “যার যাওয়ার সে তো চলেই গেল। আমরা গরিব মানুষ। কেস কাছারি করার অর্থ বা সামর্থ কিছুই নেই আমাদের।”

chit fund agent suicide inzamul khan bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy