Advertisement
E-Paper

থানায় ‘দাদাগিরি’ তৃণমূলের

প্রতিবাদের নামে থানায় ঢুকে হাঙ্গামা করার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। রীতিমতো থানার অফিসার-ইন-চার্জের দিকে আঙুল তুলে, তাঁর টেবিল চাপড়ে ঘণ্টাখানেক ধরে চলল দাদাগিরি। তার আগে থানা চত্বরে ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ দেখান একদল মহিলা। চলে থানার সামনে অবস্থানও। বৃহস্পতিবার দুপুরে নলহাটি থানার ওই ঘটনায় পুলিশ যদিও রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে, এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেছেন, “ঠিক কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে, এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ীই কাজ করা হবে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২০
থানার ভিতরে তৃণমূল নেতার চোখরাঙানি।

থানার ভিতরে তৃণমূল নেতার চোখরাঙানি।

প্রতিবাদের নামে থানায় ঢুকে হাঙ্গামা করার অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। রীতিমতো থানার অফিসার-ইন-চার্জের দিকে আঙুল তুলে, তাঁর টেবিল চাপড়ে ঘণ্টাখানেক ধরে চলল দাদাগিরি। তার আগে থানা চত্বরে ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ দেখান একদল মহিলা। চলে থানার সামনে অবস্থানও। বৃহস্পতিবার দুপুরে নলহাটি থানার ওই ঘটনায় পুলিশ যদিও রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে, এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেছেন, “ঠিক কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে, এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ীই কাজ করা হবে।”

ঠিক কী নিয়ে এত উত্তেজনা?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ৩০ অক্টোবর সকালে টিউশন পড়তে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি নলহাটি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক একাদশ শ্রেণির স্কুলছাত্রী। ওই নাবালিকার পরিবার সন্ধ্যাতেই নলহাটি থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে। পরের দিনই মেয়েটির পরিবার তার স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষকের নামে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে। ওই নাবালিকার বাবার অভিযোগ, “ওই শিক্ষক মেয়েকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করেছে। স্থানীয় তিন যুবকের মদতে মেয়েকে জোর করে রামপুরহাট থানার বৈধড়া গ্রামে আটকে রেখেছে।” তাঁর দাবি, অভিযুক্তেরা তাঁর মেয়েকে পাচার করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে ঘটনার ৪৩ দিন পরেও পুলিশ ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার দূর মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তাকে ঘিরে এলাকায় একটা ক্ষোভ জমছিলই। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ দিন।

এ দিন দুপুরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা নলহাটি পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর একরামুল হকের নেতৃত্বে থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা থানার ওসি সোমনাথ ভট্টাচার্যের কাজকর্মের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। ওই নাবালিকাকে উদ্ধারে এবং অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারে পুলিশি গাফলতির প্রতিবাদে এলাকার মহিলাদের একাংশ থানা চত্বরে ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই সময়ই স্মারকলিপি দিতে একরামুল-সহ বহু বিক্ষোভকারী থানার ভিতরে ঢুকে পড়েন। তখনই উত্তেজিত হয়ে ওসির সামনে আঙিল উঁচিয়ে কথা বলতে শোনা যায় ওই তৃণমূল নেতাকে। উত্তেজিত নেতা ওসির সামনের টেবিলও চাপড়ান। ওসির কথায় সন্তুষ্ট না হয়ে এর পরেই আন্দোলনকারীরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবিতে থানা চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভ জারি রাখেন। পরে ফোনে এসডিপিও-র (রামপুরহাট) কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আশ্বাস মেলায় বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার অভিযোগ, এক স্কুলছাত্রীকে দিনে দুপুরে আপহরণ করে নিয়ে চলে গেলেও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। দেড় মাসেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। তাঁর ক্ষোভ, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক যুবকের বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল বটে। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি নিয়ে হালকা ভাবে দেখায় ওই ব্যক্তি জামিন পেয়ে যান।” এ দিন পুলিশের সঙ্গে তিনি কোনও দুর্ব্যবহার করেননি বলেই ওই তৃণমূল নেতার দাবি। একরামুল হকের দাবি, “এত দিন পরেও পুলিশ নাবালিকা মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। সেই ক্ষোভ থেকেই আমি একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তার বেশি কিছু হয়নি।” আগামী সোমবারের মধ্যে মেয়েটিকে উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের ধরতে না পারলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকিও তিনি দিয়েছেন।

দলের নেতার বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ ওঠার পরে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা নেতৃত্ব। ফোনে যোগাযোগ করা হলে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।” তবে, ওই নেতার এমন আচরণের নিন্দা করেছেন বিরোধীরা। নলহাটির ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “পুলিশ ঠিক কাজ করেনি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই ওই নাবালিকাকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি। কিন্তু, তার মানে এই নয়, প্রতিবাদের নামে আমাদের থানায় ঢুকে দাদাগিরি ফলাতে হবে। পুলিশের ভুল কাজের প্রতিবাদের এটা সঠিক পথ নয়।”

—নিজস্ব চিত্র

nalhati tmc police inactivity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy