Advertisement
E-Paper

দায়িত্বহীন প্রশাসন, তোপ খোদ তৃণমূল সাংসদেরই

ফুলের ঘায়েই ‘মূর্ছা’ গিয়েছেন সাংসদ! সাংসদের নাম: অনুপম হাজরা। সংসদ এলাকা: বোলপুর। দল: তৃণমূল। বোলপুর শহরের বিনয়পল্লি এলাকায় সাংসদের বাড়ির তিনটি ফুলের টব চুরি গিয়েছে। আর তাতেই বিস্তর চটেছেন অনুপম। যিনি এখন রোজ সংসদে তৃণমূলের অন্য সাংসদের সঙ্গে কেন্দ্র থুড়ি সিবিআই-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন কখনও মুখে কালো কাপড় বেঁধে, কখনও বা হাতে লাল ডায়েরি নিয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩১

ফুলের ঘায়েই ‘মূর্ছা’ গিয়েছেন সাংসদ!

সাংসদের নাম: অনুপম হাজরা। সংসদ এলাকা: বোলপুর। দল: তৃণমূল।

বোলপুর শহরের বিনয়পল্লি এলাকায় সাংসদের বাড়ির তিনটি ফুলের টব চুরি গিয়েছে। আর তাতেই বিস্তর চটেছেন অনুপম। যিনি এখন রোজ সংসদে তৃণমূলের অন্য সাংসদের সঙ্গে কেন্দ্র থুড়ি সিবিআই-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন কখনও মুখে কালো কাপড় বেঁধে, কখনও বা হাতে লাল ডায়েরি নিয়ে। টব চুরির ঘটনায় তিনি এতটাই ক্ষিপ্ত যে, পারলে তার জন্য সিবিআই-কেই ডেকে বসেন! কারণ, নিজের জেলা বীরভূমের পুলিশের উপরে তাঁর আস্থা নেই। অনাস্থা এতটাই যে, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে কামান দেগে মঙ্গলবার ফেসবুকে মন্তব্য করে বসেছিলেন এই তৃণমূল সাংসদ।

কোন পুলিশ? যে পুলিশ কি না তাঁরই দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে!

নিজের ফেসবুক স্টেটাসে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ অনুপম লেখেন, ‘আমি মনে করি বোলপুর দেশের একমাত্র লোকসভা কেন্দ্র... যেখানে জেলা পুলিশ-প্রশাসন এলাকার সম্মাননীয় সাংসদের নিরাপত্তা নিয়ে একেবারেই ভাবিত নয়!!!” তার পরের ‘কমেন্ট’ আরও কড়া। ‘ব্লাডি ইরেসপনসেবল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশাসন)!!!’

তখন অবশ্য এই মন্তব্যের জের কী হতে পারে, অতশত ভাবেননি অনুপম। কিন্তু, অচিরেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কানে পৌঁছে যায় সেই খবর। খবর পান মমতাও। অনুপমবাবু কেন হঠাৎ করে এমন ‘হঠকারী’ কাজ করে বসলেন, তার জবাবও চাওয়া হয় নেতৃত্বের তরফে। মৃদু ‘ধমক’-দিয়ে এক নেতা তাঁকে ফোন করে ওই মন্তব্য অবিলম্বে মুছে দিতে বলেন। পরিস্থিতি বুঝে মঙ্গলবার গভীর রাতেই অনুপম ওই পোস্ট ‘ডিলিট’ করে ফেলেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সাংসদের পোস্ট ‘লাইক’ করে ফেসবুকে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে পরের পর মন্তব্য। যার মধ্যে অনেকেরই মন্তব্য ছিল সরাসরি পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে। একটি পোস্টে অনুমপবাবুর এক ফেসবুক ‘ফ্রেন্ড’ লেখেন, ‘পুলিশ মিনিস্টার এখন মদন বাবু(?)কে নিয়ে ব্যস্ত।’ আর এক জনের কটাক্ষ, ‘এটা পুরো ডব্লিউবি-র (ওয়েস্ট বেঙ্গল) গল্প স্যার...আমরা তো অনেক আগে থেকেই জানি.. আজ আপনি জানলেন... তাও ভাল...।’ স্বাভাবিক ভাবেই অনুপম নিজের মন্তব্য তাঁর ফেসবুক ওয়াল থেকে উড়িয়ে দেওয়ার পর, উড়ে যায় সে সবও।

কিন্তু, প্রশ্ন হল, জেলা পুলিশ কী এমন করেছে, যার জন্য শাসকদলের টিকিটে প্রথম বার সাংসদ হওয়ায় অনুপমের তাদের উপরে এত রাগ? বিশেষ করে সেই বীরভূমে, যেখানে কি না শাসকদলের প্রতি পুলিশের ‘আনুগত্য’ নিয়ে বিরোধীরা বারবার সরব হয়েছেন!

এই সে দিনও পাড়ুই কাণ্ডে বেছে বেছে তাঁদের কর্মী-নেতাদেরই ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা বিজেপির সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। অনুমপবাবুর সাংসদ এলাকা, খাস বোলপুর থানাতেই পুলিশ পিটিয়ে পার পেয়ে গিয়েছেন যুব তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষ। দু-দু’বার জামিনের আর্জি খারিজ হওয়ার পরেও পুলিশ তাঁকে ধরার সাহস দেখাতে পারেনি। পুলিশকে বোম মারতে বলেও বহাল তবিয়তে আছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। একই ভাবে সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডে নাম থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার তো দূর, তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রতকে জেরা পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনা হল, অনুব্রতর হাত ধরেই কিন্তু তৃণমূলে পা দেওয়া বিশ্বভারতীর সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক অনুপমের। দলের অন্দরে তাই প্রশ্ন উঠেছে, শাসকদলের সাংসদ হয়ে কী ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন কঠোর মন্তব্য করতে পারেন অনুপম? প্রশ্ন তুলেছেন সাংসদের এক ফেসবুক ‘বন্ধু’-ও।

জেলা তৃণমূল ও জেলা পুলিশ সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, তৃণমূলের সাংসদের ক্ষোভ যত না পুলিশের উপরে, তার চেয়েও বেশি করে জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার বিরুদ্ধে। যাঁর সঙ্গে সাংসদের ‘ঠান্ডা লড়াই’ চলছে অনেক দিন ধরেই। এর আগেও তিনি অভিযোগ করেছেন, বীরভূমের পুলিশ সুপারকে বহুবার লিখিতভাবে জানিয়েছেন নিরাপত্তার জন্য। উনি কখনও সাহায্য করেননি। বুধবারও দিল্লি থেকে অনুপম ফোনে বলেন, “মা-বাবাও দিল্লিতে রয়েছেন। আর আমার বোলপুরের বাড়ি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বাড়ির নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন জানানো সত্ত্বেও জেলা পুলিশ কোনও নিরাপত্তা দেয়নি।” তাঁর আরও দাবি, “ফুলের টব চুরি হয়েছে। কিন্তু, আরও বড় চুরি তো হতেই পারত! এক জন সাংসদ কি এটুকু নিরাপত্তা চাইতে পারে না?”

সাংসদের তোপের প্রতিক্রিয়ায় কী বলছে জেলা পুলিশ?

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, কোন সাংসদ তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে ফেসবুকে কী লিখেছেন, সে নিয়ে পুলিশ আদৌ ভাবছে না। তবে, তিন মাস অন্তর নিরাপত্তার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়। অনুপমবাবু নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদনও করেছিলেন। তাঁর সাংসদ এলাকা মাওবাদী প্রভাবিত বলে নতুন সুপারিশে মঙ্গলবার থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আর জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার মন্তব্য, “ওঁর (অনুপম) স্ট্যাটাস অনুযায়ী যা নিরাপত্তা পাওয়ার, জেলা পুলিশ তার ব্যবস্থা করেছে।”

সাংসদ কিন্তু নিজের অবস্থানে (অর্থাৎ, পুলিশের উপরে ক্ষোভ) এখনও অনড়। তা হলে মন্তব্য মুছে দিলেন কেন? অনুপমের সংক্ষিপ্ত ও ইঙ্গিতপূর্ণ উত্তর, “যেখানে খবর যাওয়ার চলে গিয়েছে!”

anupam hazra tmc mp theft flower vaas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy