Advertisement
E-Paper

নেই পরিস্রুত জল, বেহাল স্বাস্থ্যও

বছর সাতেক আগে পশ্চিমবঙ্গ শুধু নয়, গোটা দেশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল মাড়গ্রামের নাম। রাজ্য এবং কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলকেও বেশ কিছু দিন ঘাঁটি গেড়ে থাকতে হয়েছিল মাড়গ্রামে। কেন না, ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি এই মাড়গ্রাম থেকেই মিলেছিল বার্ড ফ্লু-র জীবাণু।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৫
এক সময় চালু ছিল ইন্ডোর বিভাগ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি।—নিজস্ব চিত্র।

এক সময় চালু ছিল ইন্ডোর বিভাগ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি।—নিজস্ব চিত্র।

বছর সাতেক আগে পশ্চিমবঙ্গ শুধু নয়, গোটা দেশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল মাড়গ্রামের নাম। রাজ্য এবং কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলকেও বেশ কিছু দিন ঘাঁটি গেড়ে থাকতে হয়েছিল মাড়গ্রামে। কেন না, ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি এই মাড়গ্রাম থেকেই মিলেছিল বার্ড ফ্লু-র জীবাণু। ক্রমশ বীরভূম এবং লাগোয়া জেলা মুর্শিদাবাদ-সহ নদিয়া, মালদহ জেলা, বর্ধমান সংক্রামিত হয়। সেই থেকেই মাড়গ্রামকে বার্ড ফ্লু-র আঁতুরঘর বলা হয়। কিন্তু সে সব মিটতেই, সেই আঁধারেই মাড়গ্রামের স্বাস্থ্য পরিষেবা!

এলাকায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দিলে, রক্তের পরীক্ষা বা, সর্দি কাশির জন্য থুথু পরীক্ষার ল্যাব আজও গড়ে ওঠেনি এখানে। সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ল্যাবরেটরি রাখার সরকারি নির্দেশ না থাকলেও মাড়গ্রামে যেহেতু বার্ড ফ্লু দেখা দিয়েছিল, সেই জন্য ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বার্ড ফ্লু পরবর্তী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ল্যাবরেটরি ব্যবস্থা করা উচিত ছিল বলে অনেক স্বাস্থ্য কর্মী মনে করেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বাম আমলে মাড়গ্রাম স্বাস্থ্য কেন্দ্র রামপুরহাট ২ ব্লকের মধ্যে আপ গ্রেডেড পিএইচসি ঘোষিত হওয়ার পরও, উন্নতি আজও হয়নি।

স্বাস্থ্য দফতরের সিদ্ধান্ত, যে কোনও আপগ্রেডেড প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীদের জন্য ১০টি শয্যার ব্যবস্থা করা। তাতে অবশ্যই থাকবে দু’জন করে মেডিক্যাল অফিসার। চিকিত্‌সক হিসাবে ওই হাসপাতালে নিযুক্ত থাকবেন ৫ জন স্টাফ নার্স, ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, ১ জন ফার্মাসিস্ট, একজন ক্লার্ক ও একজন ঝাড়ুদার। তারাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও দুনিগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়া রামপুরহাট ২ ব্লকের একমাত্র মাড়গ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র আপগ্রেডেড প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু কর্মি বৃদ্ধি থেকে পরিকাঠামো দিকের উন্নয়ন আজও হয়নি।

একজন চিকিত্‌সককে এলাকার বাসিন্দারা বেশির ভাগ কর্তব্যে দেখতে পান। স্টাফ নার্স ৫ জনের জায়গায় তিন জন আছে, ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর জায়গায় বর্তমানে মাড়গ্রাম স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে কোনও ফার্মাসিষ্ট নেই মুরারই হাসপাতালে। ১০ শয্যার জন্য আলাদা করে পুরুষ বিভাগ এবং মহিলা বিভাগ গড়ে তোলার কথা। সে অর্থে মাড়গ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও তিনটে ঘর। এখনও দরকার যেখানে অনন্ত তিনটে করে শয্যা। মাড়গ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কেবলমাত্র স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা হওয়ার ব্যবস্থা আছে। অস্ত্রপচারের কোনও ব্যবস্থা নেই।

এলাকায় বার্ড ফ্লু ঘোষিত হওয়ার চার বছর পরে, হাসপাতাল ভবনগুলি সংস্কার করা হলেও কর্মীদের থাকার ঘরগুলি সংস্কারের প্রয়োজন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গড়ে দৈনিক ১০০ জন রোগী মাড়গ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পরিষেবা পেয়ে থাকেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানে সামান্য চিকিত্‌সা পরিষেবা মেলে না।

প্রায় সাত বিঘে জমির উপরে গড়ে তোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রতন সেন, বাবুল মালাকার, দিবাকর দত্তরা জানালেন, মাড়গ্রামে কোনও সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা নেই। এলাকার রোগীদের ট্রেকার এবং অন্যান্য বেসরকারি যানবাহনের ভরসায় রোগীদের রামপুরহাট হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয়। এত গেল স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল দশার কথা।

মাড়গ্রামের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও এলাকাবাসীর ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। মাড়গ্রাম ১ নম্বর পঞ্চায়েত ভবন যাওয়ার জন্য প্রধান রাস্তার উপর নিমতলা পাড়া রয়েছে। ওই এলাকায় রাস্তার দু’ধারে প্রায় সাতশ মিটার এলাকা জুড়ে নিকাশি নালার ব্যবস্থা নাই। নিকাশি নালা অভাবে ওই এলাকায় শীতকালেও রাস্তার উপর জল জমে থাকতে দেখা যায়। পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ্য সাহারা মণ্ডল বলেন, “মাড়গ্রামে বেশির ভাগ এলাকায় রাস্তার দু’ধারে নিকাশি নালা নেই। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ধীরে ধীরে নির্মাণ করা হচ্ছে।”

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও নিকাশির বেহাল দশার পাশাপাশি মাড়গ্রামে পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। মাড়গ্রাম ১ ও ২ এই দুটি পঞ্চায়েতের ২২ টি সংসদ এলাকার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ লাইন পোঁছালেও পরিশ্রুত পানীয় জল পাওয়া যায় না কোথাও। মাড়গ্রাম ব্লক অফিসের পিছনে দ্বারকা নদী থেকে তিনটি সাব মার্সিবল পাম্প সেট বসানো হয়। ঘটনা হল, কোনও রিজার্ভার তৈরি না করে, তড়িঘড়ি উদবোধনের জন্য সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশ্রুত পাইপ লাইনের জল এলাকায় কিছুদিনের জন্য চালু ছিল। এতে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় পানীয় জল ঠিক ভাবে কোনওদিন যায়নি।

কি বলছেন রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দৌলতউন্নেষা? তিনি বলেন, “রিজার্ভার তৈরির জন্য জায়গা দেখা হচ্ছে।” নতুন করে রিজার্ভার বসলেও সব এলাকায় পানীয় জল যাবে কিনা সে নিয়ে অবশ্য ঘোর সন্দেহ স্থানীয়দের!

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বীরভূম’।

ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp

অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বীরভূম বিভাগ,

জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

apurba chattopadhay margram drinking water amar shohor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy