পুরুলিয়ার মানবাজার থানায় জয়পুর থেকে উদ্ধার হওয়া ১১ জন শিশু শ্রমিক। —নিজস্ব চিত্র
নাগালে পেয়েও হাতছাড়া হল গুড্ডু খান।
ভুল বুঝিয়ে মানবাজার ও বোরোর ১৩ জন শিশু শ্রমিককে রাজস্থানের জয়পুরে পাচার করে অমানুষিক পরিশ্রম করানোর অভিযোগ উঠেছে ওই গুড্ডুর বিরুদ্ধে। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়া এক শিশু শ্রমিক কার্যত বিনা চিকিত্সায় ট্রেনে মারা যায়। সে নিয়েও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এত কিছুর পরেও সেই গুড্ডুর উপরেই বাকি শিশু শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব চাপিয়ে পুলিশ হাত গুঁটিয়ে বসে ছিল বলেই সে পালাতে পারল বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ১১ জন শিশু শ্রমিককে আজমীর-শিয়ালদহ ট্রেনে চাপিয়ে দিয়ে ধানবাদে সে নেমে পড়ে। বোরো ও মানবাজার থানার পুলিশ আসানসোল স্টেশনে গিয়ে ওই ১১ জনকে ট্রেন থেকে নামায়। কিন্তু ওই শ্রমিকদের সঙ্গেই গুড্ডুরও আসানসোলে আসার কথা ছিল। তাকে না পেয়ে তাই কপাল চাপড়াচ্ছেন পুলিশ কর্মীদের একাংশ।
শিশু শ্রমিকদের মধ্যে তপন শবরের বাবা ফটিক শবর বলেন, “যে আমাদের ভুল বুঝিয়ে ছেলেদের অতদূরে নিয়ে গিয়ে অকথ্য অত্যাচার করল তাকে কেন ছেড়ে দেওয়া হল। ওর কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।” মাস পাঁচেক আগে ওই গুড্ডুই কলকাতায় কাজ দেওয়ার নাম করে মানবাজারের কাশীডি ও বোরোর ওলগাড়া থেকে ১৩ জন শিশু শ্রমিককে জয়পুরে নিয়ে যায়। সেখানে কাজের সঙ্গে মারধরও চলত বলে অভিযোগ। কালীপুজোর আগে ওই শ্রমিকদের সঙ্গে যাওয়া বিশ্বনাথ শবর কোনওরকমে গ্রামে ফিরে বিষয়টি জানান। পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে তিনি থানাতেও অভিযোগ জানান। এরপরেই বিশ্বনাথবাবুর ছেলে অসুস্থ নিতাই শবরকে আর এক শিশু শ্রমিক রাজীব শবরের সঙ্গে ট্রেনে বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু ট্রেনেই নিতাই মারা যায়। আসানসোলের মর্গে তার দেহ পড়ে রয়েছে। টাকার অভাবে দেহ বাড়িতে নিয়ে আসতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্বনাথবাবু। এরপরেই বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। ওই ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে ইউসুফল মাল নামের একজনকে ধরা হয়। সে জেরায় পুলিশকে জানিয়েছিল, গুড্ডুই নিজের কারখানায় কাজ করানোর জন্য ওই ছেলেগুলোকে নিয়ে গিয়েছিল। এরপরেই জেলা পুলিশের তরফে খোঁজ নিয়ে গুড্ডুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, কারখানা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যারা ফেরত আসতে চায়, তাদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।”
কিন্তু তখনই পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগ তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি। এ দিন গুড্ডু হাতছাড়া হওয়ার পরে তাঁরা পুলিশের ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুদ্ধ। সমিতির অন্যতম কর্তা প্রশান্ত রক্ষিতের অভিযোগ, “পুলিশ বিষয়টি আগাগোড়া অবহেলা করায় গুড্ডু হাতছাড়া হল। নিতাইয়ের মৃত্যুর জন্য সেই দায়ী। এতগুলো নাবালককে হাড়ভাঙা খাটিয়েও সে আইন ভেঙেছে। তারপরেই সে কী ভাবে পার পেয়ে গেল বুঝতে পারছি না। এরপরে পুলিশের উপর মানুষ কী ভাবে ভরসা করবে?”
শ্রম দফতরের এখ আধিকারিক জানান, পুলিশের এ বিষয়ে আরও সজাগ হওয়া দরকার ছিল। ওই লোকটি প্রকৃত পক্ষে দোষী হলে তার কড়া সাজা হওয়া উচিত। কিন্তু সে একবার নাগালের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলেও তাকে কি আর ধরা যাবে? যদিও জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার এ দিন বলেন, “ওই ছেলেগুলির উপর মারধরের অভিযোগ তো হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy