Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পিছোল লাভপুর হত্যা-মামলা, আশাহত বৃদ্ধা মা

বছর চারেক আগে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ গিয়েছে তিন ছেলের। তার পর সুবিচারের প্রতীক্ষায় কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু আদালতের দীর্ঘসূত্রিতায় এ বার নিজের জীবদ্দশায় সুবিচারের আশাও হারিয়ে ফেলেছেন বছর ৭০-এর জরিনা বিবি। তিনি চান পুত্রহত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তির জন্য পাড়ুইয়ের হৃদয় ঘোষের মতো তাঁদের পাশে কেউ দাঁড়াক।

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

বছর চারেক আগে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ গিয়েছে তিন ছেলের। তার পর সুবিচারের প্রতীক্ষায় কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু আদালতের দীর্ঘসূত্রিতায় এ বার নিজের জীবদ্দশায় সুবিচারের আশাও হারিয়ে ফেলেছেন বছর ৭০-এর জরিনা বিবি। তিনি চান পুত্রহত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তির জন্য পাড়ুইয়ের হৃদয় ঘোষের মতো তাঁদের পাশে কেউ দাঁড়াক।

জরিনা বিবির কথায়, “কত কষ্ট করে ছেলেদের মানুষ করেছিলাম। তাদের রক্তমাখা মুখগুলো আমাকে রাতে ঘুমোতে দেয় না। একটার পর একটা আদালতে দিন পড়ে আর অপরাধীদের সাজার জন্য প্রার্থনা করি। কিন্তু মামলা ফের পিছিয়ে যায়। জানি না জীবদ্দশায় খুনিদের সাজা দেখতে পাব কি না!”

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে বালি ঘাটের দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিরোধ মেটাতে সালিশি সভা ডাকেন তৎকালীন তৃণমূলের জেলা সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম। লাভপুরের নবগ্রামে মনিরুল ইসলামের বাড়িতেই ওই সভায় জরিনা বিবির পরিবারের লোকদেরও ডাকা হয়। অভিযোগ, ওই সভা চলাকালীন মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে জরিনা বিবির লোকেদের ওপর চড়াও হয় তাঁর অনুগামীরা। ঘটনাস্থলেই দুই ছেলের মৃত্যু হয়। হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান জরিনা বিবির আর এক ছেলে। বাকিরা কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচেন। ওই হত্যাকাণ্ডে মনিরুল-সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে লাভপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। মনিরুল গ্রেফতার হন। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে তৃণমূলের টিকিটে লাভপুর কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হন।

এর পরেই রাজনৈতিক প্রভাবে ওই মামলায় পুলিশের দীর্ঘসূত্রিতা শুরু হয় বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ। তাঁদের আরও অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই পুলিশ মনিরুলের বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট পেশ করেনি। তাই সুবিচারের আশায় জরিনা বিবির এক ছেলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাইকোর্টে যাওয়ার আর্জি জানান। কিন্তু সেখানেও নানা কারণে একের পর এক শুনানির দিন পিছিয়ে যায়। এই ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতের পরিবার। জরিনা বিবির এক ছেলে আনারুল শেখের অভিযোগ, “সুবিচার তো মেলেইনি। উল্টে হাইকোর্টে মামলা করার জেরে মনিরুল ইসলামের আক্রোশের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রাণের ভয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে রয়েছি। আদালত আমাদের নিরাপত্তার নির্দেশ দিলেও তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।” তিনি বলেন, “শুনেছি আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে পাড়ুইয়ের নিহত সাগর ঘোষের ছেলে আইনজীবী এবং শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। আমরাও তেমন কারও সহায়তা পেলে সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাই।” মনিরুল ইসলাম অবশ্য বলেন, “বার বার এক কথা বলতে ভাল লাগে না। রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ঠিক নয়। বিষয়টি আইন-আদালতের ব্যাপার।”

এ দিকে, মা জরিনা বিবি হতাশার সুরে বলেন, “আনারুলের সঙ্গে এক অত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছি। সেই দিনের রাতটা এখনও চোখে সামনে ভাসে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lavpur arghya ghosh murder murder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE